Current Bangladesh Time
রবিবার ডিসেম্বর ২১, ২০২৫ ৯:২৯ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » সংঘবদ্ধ হামলায় আতঙ্কে গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীরা 
Saturday December 20, 2025 , 11:39 pm
Print this E-mail this

উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা

সংঘবদ্ধ হামলায় আতঙ্কে গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীরা


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবনে গত বৃহস্পতিবার রাতে একদল হামলাকারী ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরদিন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কার্যালয়েও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর কার্যক্রম এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সংগঠিতভাবে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। হামলার কারণে কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় শুক্রবার প্রথম আলো প্রকাশিত হয়নি।

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে এই প্রথম সংবাদপত্রের ছুটির বাইরে প্রথম আলোর প্রকাশনা বন্ধ ছিল। একইসঙ্গে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণের কার্যক্রম প্রায় ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। তবে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে। হামলার কারণে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারও শুক্রবার পত্রিকা প্রকাশ করতে পারেনি। তাদের অনলাইন সংস্করণের কার্যক্রমও দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষ জানায়, সংবাদপত্রের ছুটি ছাড়া ৩৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম তাদের প্রকাশনা বন্ধ রাখতে হয়েছে। হামলার সময় পত্রিকাটির ২৮ জন সাংবাদিক ও কর্মী ছাদে আটকা পড়েছিলেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন। গণমাধ্যম অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “দুটি গণমাধ্যম অফিসে হামলার ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তবে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে।” শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো কার্যালয় পরিদর্শন করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা ভবনের বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন। এ সময় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ঘোষণা দিয়েই হামলা করা হয়েছে। কেউ কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরপরও হামলা হয়েছে। এটি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন হামলার পর যদি আমরা পাশে না দাঁড়াই, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে, তা বোঝা যায় না।’ তিনি গত বছর প্রথম আলোর কার্যালয়ের সামনে গরু জবাই ও বিক্ষোভ সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে প্রশ্ন রেখে বলেন, “ওই ঘটনায় কজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল?” ঘটনার পর থেকে ছায়ানট ও উদীচীর কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা প্রকাশ করছে। এদিকে, দেশের শীর্ষস্থানীয় এই দুটি পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার পর আতঙ্কে রয়েছে অন্যান্য গণমাধ্যমও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা চালানো হয়েছে, তা দেখার পর তারা আতঙ্কিত। তাদের প্রশ্ন—গণমাধ্যম তো সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করে। এখানে হামলার কারণ কী? গণমাধ্যম সমাজের অসংগতি তুলে ধরে, যা সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সহায়ক—ক্ষতির নয়।জানা গেছে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার পর জাতীয় দৈনিক কালবেলা ও সমকালের কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। গণমাধ্যমে হামলার বিষয়ে ঢাকা রি‌পোর্টার্স ইউনিটির সভাপ‌তি আবু সা‌লেহ আকন  ব‌লেন, “আমি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যেভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাতে প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। এমনটি হলে আমরা কী জবাব দিতাম? দেশকে অস্থিতিশীল করতেই এমন বর্বরোচিতভাবে গণমাধ্যমের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।” অপরদিকে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনটি তীব্র নিন্দা ও বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে। শনিবার সকালে রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা এই হামলাকে মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর সরাসরি আঘাত বলে উল্লেখ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি পল্টন মোড় থেকে শুরু হয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সত্যেন সেন স্কয়ারে’ গিয়ে শেষ হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সমাবেশে উদীচীর (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে অভিযোগ করেন, “হুমকি থাকার পরও উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ঠেকাতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।” তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট ভবনে হামলার পর থেকেই উদীচীর ওপর সরাসরি হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসন। এর ফলেই শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বিঘ্নে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।” উদীচীর নেতাকর্মীরা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে হামলাকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা। অমিত রঞ্জন দে বলেন,“এই হামলাগুলোকে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করি না। এটি ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। আমার কাছে এটি পরিকল্পিত বলেই মনে হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে যেভাবে দেখি, তা হলো—মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে এটি একটি আঘাত। কারণ যে স্টাইলে পত্রিকাগুলোতে হামলা হয়েছে, তা আসলে শুধু দুটি পত্রিকার ওপর নয়, বরং সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর আঘাত। আমরা দেখেছি, নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপরও এক ধরনের হামলা হয়েছে। ফলে এটি সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার একটি চক্রান্ত।” তিনি আরও বলেন, “আরেকটি বিষয় হলো—সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ওপরও আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ আমাদের যে মেধাভিত্তিক চর্চা, সেই চর্চার ওপর আঘাত করা, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে মানুষের যে মানবিক বিকাশ ঘটে, সেটিকে থামিয়ে দেওয়া। একই সঙ্গে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ঘোলা জলে মাছ শিকার করাই হামলাকারীদের উদ্দেশ্য। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, এটি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের অংশ। তারই ধারাবাহিকতায় উদীচী, ছায়ানট ও গণমাধ্যমগুলোর ওপর এই হামলা। সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের অংশ হিসেবে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দেওয়া ও মদদ দেওয়ার মাধ্যমে এমন একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।” উদীচীর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল রবিবার মামলা দায়ের করা হবে। অপরদিকে, ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছয়তলা ভবনটির প্রতিটি তলাতেই ভাঙচুর চালানো হয়। হামলাকারীরা নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে এবং প্রতিটি তলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা শ্রেণিকক্ষের সিসি ক্যামেরা, কম্পিউটার ও আসবাব ভাঙচুর করে। বিশেষভাবে বাদ্যযন্ত্রগুলোর ওপর আক্রোশ দেখানো হয়। পাশাপাশি বেশ কিছু ল্যাপটপ ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম লুট করা হয়। ছায়ানটের শিক্ষার্থীদের অনুশীলন ও অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হারমোনিয়াম, তবলা, সেতার, তানপুরাসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলা হয়। এ ঘটনায় ছায়ানট কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে শনাক্ত বা আটক করা যায়নি। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ছায়ানটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।




Archives
Image
বরিশালে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠন
Image
বরিশাল ক্যাডেট কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উদ্বোধন
Image
বরিশালে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ, থানায় মামলা
Image
সংঘবদ্ধ হামলায় আতঙ্কে গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিকর্মীরা
Image
রাষ্ট্রীয় শোক দিনে বরিশালে আনন্দ-উল্লাসে মাতলো রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যাল!