|
লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা-ওসি, নওগাঁ সদর মডেল থানা
মাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বসতবাড়ির সম্পত্তি হাতিয়ে নিজের বৃদ্ধা মাকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছেলের বিরুদ্ধে। নিজের একমাত্র ছেলের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলে বাড়ির সামনে বসেছেন ওই বৃদ্ধা। বৃদ্ধার অভিযোগ, সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার একমাত্র ছেলে জুমাতুল মোস্তাফিজুর ইসলাম সৌরভ তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। গতকাল সোমবার নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগকারী বৃদ্ধার নাম বিলকিস আক্তার (৭০)। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে কানাডায় থাকেন। শহরের কাজীর মোড়ে বিলকিস আক্তারের স্বামী নিজের ১০ শতক জমির ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে দুই তলা বাড়িটি নির্মাণ করেন। ওই বাড়ির দুতলার একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করে আসছিলেন। বৃদ্ধা বিলকিস আক্তারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর বসতবাড়ির জমি নিয়ে ছেলে জমাতুল মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভের সঙ্গে মা বিলকিস আক্তারের বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান বসতবাড়ির অংশীদার হন। কিন্তু জুমাতুল মোস্তাফিজুর ইসলাম সৌরভ বসতবাড়ির পুরো সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তার মা ও বোনদের তাদের অংশের জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু মা ও বোনেরা তাকে বসতবাড়ির জমি লিখে দিতে রাজি না হওয়ায় পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বিলকিস আক্তার ২০২১ সাল থেকে অধিকাংশ সময় নওগাঁ শহরেই বড় মেয়ের বাড়িতে থাকছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিজের বাড়িতে এসে দুতলার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে লোহার কাচি গেইটে তালা মারা দেখতে পান। তালা মারার বিষয়টি ছেলেকে জমাতুল মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভকে জানালে তিনি সাফ জানিয়ে দেন তাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য গেটে তালা ঝুলিয়েছেন। এদিকে বাড়িতে ঢুকতে না পেরে বাড়ির নিচতলায় দোতলায় ওঠার সিঁড়ির সামনে গ্যারেজে বসে রয়েছেন বৃদ্ধা বিলকিস আক্তার। এমন দিনও দেখতে হবে তিনি কখনও ভাবেননি বলে জানান ওই বৃদ্ধা। শহরের কাজীরর মোড়ে তার বাড়ি। তিনি বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর তার একমাত্র ছেলে তার দেখাশোনা করেন না। বোনদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। ছেলের দাবি, আমার ও মেয়েদের বসতবাড়ির অংশ তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু আমরা তাকে জমি লিখে দিতে রাজি হইনি। এটা নিয়ে বিরোধ শুরু। ছেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর বড় মেয়ের বাড়িতেই থাকি। মাঝে মাঝে নিজের বাড়িতেও থাকি। আজকে বেলা ১১টার দিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে দেখি দোতলার সিঁড়িতে কাচি গেইটে তালা ঝুলানো। আমি ছেলেকে তালা খুলতে বললে, সে আমাকে বলে, ‘তুই তো দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে গিয়ে থাক। এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।’ আমি আজকে রোজা আছি। বেলা ১১টা থেকে বসে আছি। আমি আমার নিজের বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার বড় মেয়েও এসেছিল। তাকেও বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি আমার ছেলে।’ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী এই বাড়ি করেছেন। এটা আমার স্বামীর স্মৃতি। জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতে কাটাতে চাই। এই বাড়িতে আমার মালিকানা কম বলে ছেলে এর আগেও কটাক্ষ করেছে। মেয়েরা আমার অপমান সইতে না পেরে তাদের অংশ আমাকে লিখে দিয়েছে। এই বাড়িতে কাগজে-কলমে আমার অংশই বেশি। কিন্তু আমার ছেলে পুরো সম্পত্তি হাত করার জন্য আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে চায় না।’ এদিকে বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী ডা. আবুজার গাফফার বলেন, ‘আমার শ্যালক এর আগেও শ্বাশুড়িকে নির্যাতন করেছেন। এমনকি গায়ে হাতও তুলেছেন। এটা নিয়ে মামলাও রয়েছে। আমার শ্যালকের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নেই। নিজের মাকে বলে, তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক। এই কথা শুনে ২০২৩ সালে আমার স্ত্রী ও শালিকা বসতবাড়ির তাদের অংশের জমি মায়ের নামে লিখে দিয়েছে। কাগজে-কলমে আমার শ্বাশুড়ি এখন বসতবাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক। অথচ তাকেই এখন বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’ মাকে বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে ছেলে জুমাতুল মোস্তাফিজুর ইসলাম সৌরভের দাবি, ‘বসতবাড়ি নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে মারামারি ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। আমাকে প্রাণ নাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর তার মা স্বেচ্ছায় মেয়ের বাসায় বসবাস করে আসছেন। আদালতের নির্দেশে বড় বোনের জিম্মায় আছেন তিনি। এখন তিনি আমার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি না। তিনি বাড়িতে থাকলে আবারও পারিবারিক কলহ ও মারামারি হতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তাদেরকে বলেছি অভিযোগ দায়েরের জন্য। লিখিতভাবে অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Post Views: ০
|
|