Current Bangladesh Time
বুধবার অক্টোবর ৮, ২০২৫ ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বাংলাদেশের জাদু নিয়ে এবার নিউইয়র্ক মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশেরই জাদুকর-রাজীব বসাক 
Saturday September 14, 2019 , 12:45 pm
Print this E-mail this

বাংলাদেশের জাদু নিয়ে এবার নিউইয়র্ক মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশেরই জাদুকর-রাজীব বসাক


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : আজ নিউইয়র্ক তো, কাল ভার্জিনিয়া। গেল ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ফোবানার ৩৩তম সম্মেলনে জাদু প্রদর্শনের জন্য আমন্ত্রিত হয়ে নিউইয়র্কে আসেন বাংলাদেশের নন্দিত জাদুকর রাজীব বসাক। নিউইয়র্ক শহরের ‘ম্যারিয়ট নিউইয়র্ক লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট’ হোটেলে বাঙালিদের এই মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অনেক আয়োজন থাকলেও নৈপূর্ণ্যময় জাদু প্রদর্শনের মাধ্যমে খুব সহজেই উপস্থিত সবার নজর কেড়ে নেন কৌশলী জাদুকর রাজীব বসাক। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের শূন্য থেকে ফুল নিয়ে স্বাগত জানান তিনি। এরপর ছবিকে রঙিন করা, চোখ বেঁধে পালকের রং পাল্টানো, পানিকে মুহূর্তেই বরফ বানিয়ে দেখানো, শূন্য থেকে বিশাল মাছ ধরাসহ মোহনীয় আরও কত কি! জাদু প্রদর্শনের সময় মুহুর্মুহু করতালি জানান দিচ্ছিল জাদুকরের প্রতি দর্শকদের বিমূর্ত ভালোবাসার কথা। জাদু প্রদর্শনের ভেতর দিয়ে রাজীব বসাক আমেরিকায় আরও একবার উঁচু করে তুলে ধরলেন আমাদের বাংলাদেশের লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। রাজীব বসাকের জাদু বহুদিন পরে ফিরিয়ে আনল শৈশবের স্মৃতি। সাদাকালো টেলিভিশনে তখন অপেক্ষায় থাকতাম জুয়েল আইচ কিংবা বিদেশি কোন বিশ্বখ্যাত জাদুকরের প্রদর্শনী দেখার। ধূম্রজালের এই খেলার জাদুঘরকে কাছে পেয়ে প্রথমেই জানতে চাইলাম তাঁর জন্ম, পরিবার, বেড়ে ওঠা সম্পর্কে। তিনি জানালেন, বাড়ি ঢাকায় হলেও জন্ম চট্টগ্রামে, ১৯৭০ সালে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা প্রয়াত বিশ্বনাথ বসাক ছিলেন ব্যবসায়ী, সমাজসংস্কারক। মা স্বতী বসাক গৃহিণী। সহধর্মিণী শম্পা বসাক। এই দম্পতির তিন মেয়ে, এক ছেলে। শিল্পের এত মাধ্যম থাকতে কেন জাদুশিল্পী হলেন? একটু চিন্তা করে রাজীব বসাক বললেন, “অলৌকিকতা সব সময় কাছে টানতো আমায়। শখের বশে জাদু শিখতে এসে কখন যে পেশাদার জাদুকর বনে গেলাম-নিজেও জানি না। বাংলাদেশে আমিই একমাত্র পেশাদার জাদুকর, ঢাকার বাইরে থাকি। বাংলাদেশের প্রায় সব কয়টি জেলাতেই জাদু প্রদর্শন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। দেশের শিশু-কিশোরদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘দুরন্ত’তে প্রতি শুক্র ও শনিবার ‘সোনার কাঠি রুপার কাঠি’ শীর্ষক জাদুবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের ‘সিজন-২’ নিয়মিত প্রচার হয়ে আসছে। পাশাপাশি সর্বাধিক প্রচারিত শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘কিশোর আলো’র নিয়মিত লেখি।” বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে রাজীব বসাকের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। কীভাবে হলো এই সম্পর্ক? বললেন, ‘সব সময়ই নিজের ভেতর নতুন একটা কিছু করার তাগিদ অনুভব করতাম।

সম্ভবত আমাদের দেশে আমিই প্রথম কোন দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় জাদু ও তার পেছনের কৌশল নিয়ে নিয়মিত লেখা শুরু করি এবং সেটাও ২০০৫ সালে প্রথম আলোর ছোটদের পাতা গোল্লাছুটে। পাশাপাশি প্রথম আলোর বিভিন্ন আয়োজন, যেমন বর্ণমেলা, কিআনন্দ, ভাষা প্রতিযোগ, গণিত উৎসব, বিজ্ঞান উৎসব, মাদক বিরোধী প্রচারণাসহ প্রায় সব আয়োজনেই জাদু প্রদর্শনী নিয়ে সম্পৃক্ত থাকার চেষ্টা করি। নিজেকে আমি প্রথম আলো পরিবারের একজন হিসেবে মনে করি। এ সুযোগটা আমাকে করে দেওয়ার জন্য প্রথম আলো পরিবারের কাছে আমি স্বকৃতজ্ঞ।’ জীবন চলার পথে বহু ঘটনা আছে, যা এখনো রাজীব বসাককে অনুপ্রাণিত করে। এই নিয়ে তিনি বললেন, জাদুজীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া এমন অনেক ঘটনা আছে কখনো কখনো যা কল্পনাকেও হার মানায়। এর কিছুবা অনুপ্রেরণার, কিছুবা আবার জীবন সংশ্লিষ্ট। প্রায়শই শিশুদের কাছে জাদুকরেরা হন সুপারম্যান। আমার খুব ছেলেবেলার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পত্নী বিয়োগে ব্যথিত আমরা ছাদ বারান্দায় বসে কথা বলছিলাম। বন্ধুর ছোট ছেলেটা, বয়স আর কত হবে, সাত কি আট…হঠাৎ করে এসে আমার হাত দুটো চেপে ধরে বলল, তুমি তো কত জাদুই জান। একটা মন্ত্র বলে আমার আম্মুকে আবার জাগিয়ে দাও না। কথাগুলো খুব বড় বা কঠিন ছিল না। কিন্তু মনে হচ্ছিল, কে যেন সজোরে আমার দুগালে খুব কষে কষে চড় বসিয়ে যাচ্ছে। কী করে আমি তাকে বলি, আমার জানামতে পৃথিবীতে এমন কোন মন্ত্র নেই, যেটা তার আম্মুকে জাগিয়ে তুলতে পারে। জাদু কেবল বিজ্ঞানের মোড়কে স্বনিষ্ঠ অনুশীলনে করায়ত্ত কিছু কৌশল, যা দিয়ে আমরা জাদুকরেরা মানুষদের আনন্দ বিলিয়ে থাকি। আরেকবার জাদু প্রদর্শনী শেষে ছোট্ট এক বন্ধু আমার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলল, ‘এগুলো আমি টিফিনের পয়সা জমিয়ে বাঁচিয়েছি। তোমার হাতে তুলে দিলাম, এ জন্য যে তুমি জাদু দিয়ে এগুলোকে বাড়িয়ে তুলবে এবং বিপদে পড়া প্রত্যেকটা শিশুকে এখান থেকে দিয়ে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করবে।’ রাজীব বললেন, ‘টাকাটা পরিমাণে খুব বেশি ছিল না। ছেলেটাও খুব বেশি সময় আমার সঙ্গে ছিল না। কিন্তু ছোট্ট মনের বিশাল হ্রদয়ের যে আলোকবর্তিকা ছেলেটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিল, গুটি গুটি পায়ে আমি সেটাকে একটু একটু করে আমার সাধ্যমতো সামনে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ দেশের বাইরে জাদু প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা রাজীব বসাকের এটি নতুন বলতে হবে। তিনি বললেন, ‘দেশের বাইরে কলকাতা-ওডিশা-দিল্লি…এর বাইরে আমার কাজ করা হয়নি। এবারই প্রথম চট্টগ্রাম থেকে রীতিমতো নিউইয়র্কে এসে জাদু প্রদর্শন করে যাচ্ছি। তাও আবার আমন্ত্রিত জাদুকর হিসেবেই। শুধু তাই নয়, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর আর্লিংটনে আয়োজিত পথ মেলায়ও জাদু প্রদর্শন করব আমি। সবচেয়ে বড় কথা, এখানকার বাঙালি কমিউনিটি যে পরম ভালোবাসায় আমাকে ও আমার জাদুকে গ্রহণ করে নিয়েছেন, প্রতিদানে আমি সবার কাছে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সময়-সুযোগ হলে ভবিষ্যতে আরও নতুন কিছু বাঙালি ঘরানার জাদু উপস্থাপনের ইচ্ছে আমার আছে।’ ভিনদেশে বাঙালির জীবনযাত্রা, তাদের সংগ্রাম ও সাফল্য রাজীব বসাককে অনুপ্রাণিত করে। তিনি জানালেন, ‘আমরাও পারি’-এ সহজ–সরল সত্যটা আরও একবার উপলব্ধিতে আত্মস্থ করার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রবাস জীবনের বাঙালিরা। জীবনবোধকে বাঁচিয়ে রেখে দেশপ্রেম, পাশাপাশি কর্মস্পৃহার মিশেলে নিজের শেকড় থেকে এক চুলও সরে যাননি তাঁরা। দেশকে গর্বিত করার ধারাবাহিক এই মিশনে সব লড়াকু প্রবাসীদের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালোবাসা, এই সঙ্গে অভিনন্দন রইল। নিজের এই অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে কার কথা আগে মনে হবে জানতে চেয়েছিলাম। রাজীব বসাক বললেন, “আমার এই জাদু জীবনে যা কিছু অর্জন, তার পুরো কৃতিত্বটাই আমি দিতে চাই আমার সহধর্মিণী আর আমার প্রাণপ্রিয় দর্শকদের। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিল্পীরা কখনোই সচ্ছল হন না। এমনটা জানা সত্ত্বেও আমার পরিবার জাদুর প্রতি আমার কমিটমেন্টকে কখনোই ছোট করে দেখেনি। বরং নানা প্রতিকূলতায় পাশে থেকেছে পরম মমতায়। সন্তানরাও বাবার এমন ক্ষেপামো মেনে নিয়েছে। পাশাপাশি আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছেও, যারা পাশে থেকে সব সময় উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃতজ্ঞ ‘দুরন্ত টেলিভিশন’–এর কাছে, কৃতজ্ঞ ‘প্রথম আলো’ পরিবারের কাছে।” এত যে সাফল্য, তবু কি কোন অপূর্ণতা স্পর্শ করে না? রাজীব বসাক আবেগময় কণ্ঠে বললেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালোবাসি আমার নিজের চেয়েও বেশি। আমি আমার প্রত্যেকটা জাদুর উপস্থাপনার ভেতর দিয়ে দর্শকদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দেশপ্রেমের সলতেকে উসকে দিই। যেটা আমার প্রিয় দর্শকেরা জানেন। যৌবনের পুরোটা সময় আমি দিয়েছি এই শিল্পের পেছনে। এখনো জীবনের সবটাই আমি ব্যয় করেছি জাদুকে ভালোবেসে। যদিও বড় কোন স্বীকৃতি বরাতে জোটেনি কিংবা আর্থিক-সামাজিক নিশ্চয়তার কোন বাঁধন আমার নেই-তাতে কি! দর্শকদের পরম ভালোবাসায় বেঁচে তো আছি। এই তো বেশ।’ ভালো যেকোনো কাজ সব সময়ই রাজীব বসাককে অনুপ্রাণিত করে। প্রতিনিয়তই তিনি শিখছেন প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকে। ভালোটা গ্রহণ করছেন এবং চেষ্টা থাকে সেটা নিজের ভেতর আত্মস্থ করে ছড়িয়ে দেওয়ার। জাদু জীবনে তিনি কৃতজ্ঞ জাদু গুরু প্রয়াত বন্ধু সুকান্ত পালের কাছে। স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে রাজীব বসাক ব্যক্তিগত নয়, সামষ্টিক স্বপ্নের কথাই বললেন। ‘আজ হোক আর কাল হোক—আমার স্বপ্ন একটাই। জাদুর পরশে একদিন পাল্টে যাবে আমার বাংলাদেশ। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ চাই। দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চাই।’ তিনি বললেন, সবচেয়ে বড় কথা, আমি আমার বাংলাদেশের কথা বলতে চাই আমার জাদু দিয়ে। যেন ১০ বছর পর ভালো কাজের জন্য দেশের মানুষ আমায় ভালোবাসে।’

(শখের বশে পেশাদার জাদুকর
মনিজা রহমান
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৯
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:৪৯
প্রথম আলো, উত্তর আমেরিকা সংস্করণ)

বরিশাল মুক্তখবর পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শুভ কামনা আর অভিনন্দন – জাদুশিল্পী, রাজীব বসাককে।




Archives
Image
বরিশালে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের হামলা, আহত ৫
Image
বরিশালে পুলিশের সামনেই খুন হয় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা লিটু
Image
মেধাবী খুদে ক্রিকেটার রিয়ানের পাশে বরিশাল জেলা প্রশাসক
Image
এনএসসি মনোনীত নতুন বিসিবি পরিচালক হচ্ছেন রুবাবা দৌলা
Image
পদার্থে নোবেল পেলেন মার্কিন তিন বিজ্ঞানী