|
দক্ষিণবঙ্গের কোটি মানুষের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চালু হয়নি নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ড, স্ট্রোকের রোগীদের চরম দুর্ভোগ
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দক্ষিণবঙ্গের কোটি মানুষের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয়। প্রতিদিন অন্তত তিন সহস্রাধিক রোগী এখানে আউটডোরে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া প্রায় দুই সহস্রাধিক রোগী ভর্তি থাকেন সবসময়ই। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় অনেক জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসাও এখানে পাওয়া যায় হাতের কাছেই। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি হচ্ছে যে দেশের সর্ববৃহৎ ও পুরান ৮ টি মেডিকেল এর একটি হওয়া সত্ত্বেও এত বছরেও এখানে আলাদাভাবে চালু হয়নি স্ট্রোকের রোগীদের জন্য বিশেষায়িত নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ড। এর নেপথ্যে একজন নিউরো মিডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে একাধিকবার স্ট্রোকের রোগীদের জন্য নিউরো চিকিৎসায় আলাদা ওয়ার্ড চালু করার উদ্যোগ নিয়েছিল হাসপাতাল প্রশাসন। কিন্ত নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ও শেবামেক এর সহযোগি অধ্যাপক ডা: অমিতাভ সরকারের দ্বীমতের কারণে তা চালু করা সম্ভব হয়নি। শেবাচিমের অন্তত দু’জন পরিচালক এই উদ্যোগ নিয়েও বাঁধার মুখে ব্যর্থ হন। হাসপাতালে সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ও সক্ষমতা থাকার পরেও এই ওয়ার্ডটি চালু হয় না। স্ট্রোকের রোগী আসলে তাদেরকে মেডিসিন বিভাগে জ্বর/কাশি বা অন্য রোগীদের মধ্যে দেওয়া হয়। ফলে যথাসময়ে সে যথোপযুক্ত চিকিৎসা পায় না। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা: এ কে এম নজমুল আহসান বলেন, ইতিপূর্বে যে যাই বাঁধা দিয়ে থাকুক না কেন সেগুলো দেখার বিষয় নয়। আমরা বর্তমান পরিচালক স্যারের উদ্যোগে শিঘ্রই নিউরো মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করবো। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা: অমিতাভ সরকার এর নিজস্ব মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে নগরীর বাজার রোডের কেএমসি হাসপাতাল। দিনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি সেখানে চিকিৎসা দিতে ব্যস্ত থাকেন। ভিজিট, রাউন্ড ফি, গলাকাটা পরীক্ষা নিরীক্ষা সহ নানানভাবে নি:স্ব হচ্ছেন রোগীরা। তাছাড়া রাতে চেম্বার করেন সদর রোড বেলভিউ ডায়াগনস্টিকে। সেখানে তিনি এক সাথে ১০/১২ জন রোগী চেম্বারে ঢুকিয়ে রোগী দেখেন। এতে একদিকে যেমন গণচিকিৎসার মত অপচিকিৎসা হয়, তেমনি রোগীর অধিকার গোপনীয়তাও লংঘিত হচ্ছে। রোগীর হিস্ট্রি লেখা, প্রেসার দেখা সহ যাবতীয় কাজ করছেন তার সহকারী। অনেক সময় ঔষধও লিখে দিচ্ছে সে। অথচ রোগী ডা: অমিতাভকে দেখানোর জন্য ভিজিট দিলেও আদৌ তার কোন চিকিৎসা সে পায় না। শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও ডা: অমিতাভ নিয়মিত ক্লাসে যান না। শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক হাজিরা প্রদান করে তিনি চলে যান প্রাইভেট প্রাকটিসে। সময় শেষে আবার গিয়ে ক্লোজিং পাঞ্চ দিয়ে আসেন। হাসপাতালের ওয়ার্ডে তার শিডিউলে রাউন্ড দেন না। শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো রাউন্ড দেন তিনি। অন্যান্য বিশেষায়িত বিষয়ে যেমন কিডনী, বাত ব্যাথার সহকারী অধ্যাপকগন সপ্তাহে একদিন বহির্বিভাগে রোগী দেখলেও একমাত্র ব্যতিক্রম নিউরোমেডিসিন এর ডা: অমিতাভ সরকার। প্রতিদিন তিনি চেম্বারে শতাধিক রোগী দেখলেও সপ্তাহে একদিন তার কর্মস্থলে বহির্বিভাগে সেবাদানে তিনি নারাজ। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কালে তিনি নিষিদ্ধ আওয়ামী সমর্থক উগ্র চিকিৎসক কর্মচারীদের সাথে নিয়ে শান্তি সমাবেশের নামে ছাত্রবিরোধী সমাবেশ আয়োজন করেন। এই সমাবেশে উপস্থিত সকল চিকিৎসক শাস্তিমূলক বদলী হলেও ব্যতিক্রম একমাত্র ডা: অমিতাভ। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি একজন উগ্র সাম্প্রদায়িক লোক। তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কখনোই ভালো চোখে দেখেন না। এতো উচ্চ শিক্ষিত একজন লোক এত ধর্মান্ধ হয় কিভাবে সেটাই তাদের প্রশ্ন। এসব বিষয়ে শেবামেক এর সহযোগি অধ্যাপক ডা: অমিতাভ সরকার বলেন, আমি হাসপাতালের অথরিটি নই। ওয়ার্ড চালু করবে পরিচালক। জনবলসহ সকল কিছু সরবরাহের মাধ্যমে কাল (আগামীকাল) ওয়ার্ড চালু করলে আমি দায়িত্ব পালন করব। আমার বাঁধার কারণে নিউরো ওয়ার্ড চালু হয় না তথ্যটি মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, আমি দুটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সাথে জড়িত; সঠিক। আমি একটা নই, হাসপাতালের সকল চিকিৎসকই প্রাইভেটভাবে রোগীর চিকিৎসা প্রদান করেন। কলেজে ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগটিও সঠিক নয় বলে মন্তব্য ডা: অমিতাভের। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা: ফায়জুল বাশার বলেন, ডা: অমিতাভবের বিরুদ্ধে ক্লাস না নেওয়ার বিষয়ে অফিসিয়ালিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, কারও কোন বাধা থাক বা না থাক সেটা আমরা আমলে নিব না। খুব শিঘ্রই নিউরো মেডিসিন সহ আটটি আলাদা ওয়ার্ড চালু করা হবে। অন্তত তিনজন নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বর্তমানে শেবাচিমে কর্মরত আছেন। তাই এই বিভাগ চালু করতে এখন আর কোন সমস্যা নেই।
Post Views: ০
|
|