|
বরিশাল আগৈলঝাড়া শ্রমিক সংকট, নষ্ট হচ্ছে ধান
শামীম আহমেদ : চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ভাল হলেও ধানের দাম কম হওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক আসতে অনিহা প্রকাশ করছে। তাই শ্রমিক সংকটের কারণে আগৈলঝাড়ার কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। জমির ধান জমিতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। বাজার মনিটরিং নেই, তাই পাচ্ছেনা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য। চলতি মৌসুমের একমাত্র ফসল ইরি-বোরো পাকা ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ধানের দাম কম হওয়ায় গোপলগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, শরনখোলা, মোড়লগঞ্জ জেলা-উপজেলার ধানকাটা শ্রমিকরা আসবে না বলে জানিয়ে দেয় চাষীদের। ফলে আগৈলঝাড়ার কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপদে। যদিও এরই মধ্যে ওই সব এলাকার শ্রমিকরা ধান কাটার জন্য আগৈলঝাড়া এলাকায় আসলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা নগন্য। যারাও এসেছেন তাদের অনেকেই ধানের দাম কম ও জমিতে পানি জমে যাওয়ার কারনে ধান কাটতে চাইছেন না। অনেকে আবার এসে জমিতে পানি দেখে ও ধানের দাম কম হওয়ায় নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। আবার স্থানীয়ভাবে ধানের বাজার মূল্য পূর্বের চেয়ে কম হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিকরা ধান কাটতে অনিহা প্রকাশ করছে। উফশি হাই ব্রীড জাতের স্থানীয় বাজার মূল্য ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ও ব্রী-২৯ জাতের ধানের বাজার মূল্য ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। যা চাষীর উৎপাদন খরচের অর্ধেক মাত্র। ধানের বাজার মূল্য কম হওয়া, শ্রমিক সংকট ও প্রতিকুল পরিবেশের কারনসহ সব মিলিয়ে উঠতি পাকা ফসল ঘরে তুলতে না পেরে কৃষকরা চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে প্রান্তিক চাষিরা তাদের দাদন ব্যাবসায়ী মহাজনদের দাদনের ধান ও সুদের চিন্তায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কারন, বেশিরভাগ প্রান্তিক চাষি স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে ১ মন ধান ও নগদ ১হাজার টাকা হারে দাদন নিয়ে বেশী ফলনের আশায় উচ্চ মুল্যে বীজ ক্রয় করে বীজতলা তৈরীসহ চাষাবাদ করেছেন। জ্বালানী তেল সহ কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের গত বছরের চেয়ে এ বছর উৎপাদনে বেশী টাকা গুনতে হয়েছে। চাষীরা জানান, এবছর প্রতি মন ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮শ’ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেতে ৪৫০ টাকায়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দাদন ব্যাবসায়ীদের টাকা ও ধান পরিশোধ করা নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। ধানের বাজার মূল্য কম হওয়ায় শ্রমিকেরা ধান না কেটে অন্যান্য কাজে ঝুকে পড়ায় বর্তমানে ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও বর্গাচাষীরা স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে পরিশোধ করার ব্যাপারে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। বর্তমানে গোয়ালের গরু, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেই মহাজনের দাদনের টাকা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে বলে কৃষকরা জানান। উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বছর ১০হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ করা হয়েছে। তবে সরকার কৃষকদের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করলেও ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়মনীতি সহ নানা জটিলতায় কৃষকরা ব্যাংক ঋণ নিতে না পেরে দাদন ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকেই তাদের টাকা সংগ্রহ করতে হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবছর কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় কৃষি উৎপাদন খরচ প্রায় দ্বিগুণ পড়েছে। আর এ সুযোগে দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করেছে। কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদিত ফসলের বাজার মূল্য এক শ্রেনির মুনাফালোভী ব্যাবসায়ীরা নিয়ন্ত্রন করলেও সরকার এখন পর্যন্ত বাজার মনিটরিং না করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
Post Views: ০
|
|