Current Bangladesh Time
রবিবার মে ১৯, ২০২৪ ৮:৩০ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে শহীদ স্মৃতিফলকে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম! 
Friday October 29, 2021 , 8:30 pm
Print this E-mail this

বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অসম্মান

বরিশালে শহীদ স্মৃতিফলকে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম!


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : মো: মহিউদ্দিন (৬৫) ভাতাভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বরিশালের হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। পেশায় ছিলেন শিক্ষক। ২০১৪ সালে চাকরি থেকে অবসরে যান। অবসরে গেলেও নানা ধরনের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন মহিউদ্দিন। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে নিয়ম করে হাঁটেন। এজন্য শরীরে জটিল কোনো রোগ বাসা বাঁধতে পারেনি। দিব্যি সুস্থ একজন মানুষ তিনি। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের কোলচর এলাকার বাড়িতে ভালোই সময় কাটছিল তার।দিন ১৫ আগে মোবাইল ফোনে নিজের মৃত্যুর খবর পান মো: মহিউদ্দিন! বিস্মিত হন। ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে তার এক স্বজন জানতে চান, ‘তোমার বাবা (মো: মহিউদ্দিন) কীভাবে মারা গেছে? জানালেও নাতো’। অন্যপ্রান্তে থাকা ওই ব্যক্তি মহিউদ্দিনের বড় ছেলে মনে করে কথাগুলো বলছিলেন। নিজের মৃত্যুর খবর শুনে হতবাক হন মো: মহিউদ্দিন। তিনি ভেবে ছিলেন তার কোনো নাতি ফোন দিয়ে মজা করছে। কিছুক্ষণ পর কণ্ঠস্বর শুনে তিনি তার ওই স্বজনকে চিনতে পারেন। তখন ওই স্বজনকে বলেন, তিনিই (মহিউদ্দিন) কথা বলছেন। একথা বলার পর অন্যপ্রান্ত থেকে তিনি কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলেন না। তিনি ‘হ্যালো’, ‘হ্যালো’ বলতে থাকেন। এরপর কিছুটা সময় নিয়ে জবাব আসে, ‘আপনি বেঁচে আছেন? আমরা যে খবর পেয়েছি আপনি মারা গেছেন’ বলে তিনি ফোন রেখে দেন। এ ঘটনা হতবাক করেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিনকে। এরপর আরও কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি তার ও পরিবারের সদস্যদের ফোন করে সমবেদনা জানান। কী করে তিনি ‘মৃত’ হলেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। মহিউদ্দিন পরে জানতে পারেন, এ ঘটনা শুধু তার একার সঙ্গে ঘটেনি। হিজলা উপজেলার বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুর খবর পেয়ে তাদের স্বজন ও পরিচিত ব্যক্তিরা ফোন দিচ্ছেন। জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে তারা আত্মার মাগফেরাত কামনা করছেন। তবে কী কারণে এ ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে তার কূল-কিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। এ ঘটনার একদিন পর একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী পত্তনী ভাঙ্গা এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিনের মোবাইলে ফোন করে জানান, তার বাড়ির অদূরে জোনা মার্কেট এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। তবে সেখানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের নামের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্থান পেয়েছে। ওই স্মৃতিফলকে নাম দেখে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত ভেবে তাদের পরিবারের সদস্যদের ফোন দিচ্ছেন স্বজন ও পরিচিত ব্যক্তিরা। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মহিউদ্দিন বলেন, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার দুই সপ্তাহ আগে বিষয়টি আমাকে জানান। পরদিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখি শহীদদের নামের তালিকা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। সেই স্মৃতিফলকে শহীদ হিসেবে ইউনিয়নের ৪০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম স্থান পেয়েছে। তবে আমার ভুল না হলে তালিকায় ৪০ জনের মধ্যে ১৬ জন জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। সেখানে সেদিন আমি ছাড়াও আরও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো: মহিউদ্দিন বলেন, সেদিন স্মৃতিফলক নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে অনেক খোঁজাখুঁজি করি। শেষ পর্যন্ত সেখানে তাদের কেয়ারটেকারকে পেয়ে বিষয়টি জানাই। পরে ইউএনওকে কল করি। ফোন রিসিভ করেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। তাকে বিষয়টি জানাই। এরপর নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাসকে বিষয়টি জানাই। তাকে স্মৃতিফলক সংশোধন করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সংশোধন করা হয়নি। তিনি বলেন, দেশের জন্য শহীদ হতে পারা গৌরবের বিষয়। তবে আমি যতদূর জানি আমাদের গুয়াবাড়ি ইউনিয়নে যুদ্ধে অংশ নিয়ে কেউ শহীদ হননি। পুরো উপজেলায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী। তার বাড়ি হরিনাথপুর ইউনিয়নে। কিন্তু স্মৃতিফলকে ৪০ জনকে শহীদ হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তালিকার চার নম্বরে রয়েছে আমার নাম। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চরম অসম্মান। গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চরপত্তনী ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: দলিল উদ্দিন বলেন, স্মৃতিফলকে শহীদদের তালিকার ১১ নম্বরে রয়েছে আমার নাম। সম্প্রতি বিষয়টি কীভাবে যেন আরও বেশি জানাজানি হয়েছে। দূর-দূরান্তে থাকা স্বজনদের কানেও বিষয়টি পৌঁছে গেছে। অনেকে সত্য না জেনে কান্নাকাটি করছেন। ফোন দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রত হতে হচ্ছেন। তিনি বলেন, যারা এ কাজ করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। বিচারের আওতায় আনা দরকার। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: দলিল উদ্দিন বলেন, স্মৃতিফলকে অসংখ্য ভুল রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের বানান ভুল রয়েছে। ঠিকানা লিখতে গিয়েও গ্রামের নামের বানানে অসংখ্য ভুল রয়েছে, যা সত্যিই আমাদের ব্যথিত করেছে। হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন তালুকদার বলেন, যাদের মহান ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা, তাদের নিয়ে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। এটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। তাই বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) হিজলা উপজেলা প্রকৌশলী সুখদেব বিশ্বাস বলেন, মাসখানেক আগে এ উপজেলায় যোগ দিয়েছি। বর্তমানে একটি প্রশিক্ষণ চলমান থাকায় উপজেলার বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মহিউদ্দিন সাহেব বিষয়টি ফোনে আমাকে জানিয়েছিলেন। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে স্মৃতিফলক অপসারণ করতে বলেছিলাম। এরপর ভুল সংশোধন করে নতুন স্মৃতিফলক স্থাপন করতে বলেছিলাম। কিন্তু কেন তা করা হলো না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, স্মৃতিফলকের বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাতে বাঙালি জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাদের এই ত্যাগের অপরিসীম মহিমাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে। স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত করার সময় যারাই কাজটি করেছেন, তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাগোনিউজ২৪.কম-এ সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর বরিশালের হিজলা উপজেলায় শহীদদের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক অপসারণ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পদাধিকার বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক বকুল চন্দ্র কবিরাজ গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পত্তনী ভাঙ্গার জোনা মার্কেট সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নবনির্মিত জাদুঘর এলাকায় যান। পরে তার নির্দেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা স্মৃতিফলকটি অপসারণ করেন। এসময় পত্তনী ভাঙ্গার বাসিন্দা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হারুন অর রশিদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: দুলাল, হুমায়ুন নলী ও মো. ইমরানসহ অর্ধশতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। স্মৃতিফলক অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাতে বাঙালি জাতি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। তাদের এ ত্যাগের অপরিসীম মহিমাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মৃতি জাদুঘর নির্মিত হচ্ছে। সেখানে ভুলবশত শহীদদের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছিল। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে বিষয়টি জানতে পারি। আজ সকালে জেলা প্রশাসক স্যার ফোন দিয়ে স্মৃতিফলকটি অপসারণের নির্দেশ দেন। বিকেলে স্মৃতিফলকটি অপসারণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্মৃতিফলকে নামাঙ্কিত করার সময় যারাই এ কাজটি করেছেন, তাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। এ ধরনের ভুল কাম্য নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‌শহীদ স্মৃতিফলকে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম! শিরোনামে জাগো নিউজে প্রকাশিত সংবাদটি আমার চোখে পড়ে। সকালে ফোন কল করে ইউএনও বকুল চন্দ্র কবিরাজকে শহীদদের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলকটি অপসারণে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। তিনি আরও বলেন, দেশের মঙ্গল চেয়ে মৃত্যুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যাদের মহান ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা, তাদের নামের তালিকা নিয়ে এ ধরনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে হিজলা উপজেলার গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পত্তনী ভাঙ্গার জোনা মার্কেট এলাকায় জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। দুই সপ্তাহ আগে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের নামের তালিকায় জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামাঙ্কিত স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। এতে অনেকে ভোগান্তির শিকার হন। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজন ও পরিচিত ব্যক্তিরা পরিবারের লোকজনকে ফোন দিচ্ছেন। অনেকে সমবেদনা জানিয়ে আত্মার মাগফেরাত কামনা করছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিফলকটি অপসারণের জানিয়ে আসছিলেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার শহীদ স্মৃতিফলকে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ।

সূত্র : জাগো নিউজ




Archives
Image
বরিশাল শেবাচিমের সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করেছে : সচিব
Image
বরিশালে ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাঠে পুলিশ
Image
বরিশালসহ ৫ বিভাগে ৪৮ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি
Image
বরিশালে যৌন হয়রানির দায়ে বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকের মামলা
Image
বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন মৌয়াল কুদ্দুস