|
বিষযটি টের পেয়ে পালিয়েছে প্রতারক হাসান মাহামুদ ও নজরুল ইসলাম বিপ্লব
বরিশালে বোনের জমি-ফ্লাট দখলে নিতে মাকে বাসা থেকে বের করে দিলো দুই ছেলে
সালেহ্ টিটু, অতিথি প্রতিবেদক : মেয়ের জমি ও ফ্লাট বুঝিয়ে দিতে ছেলেদের অনুরোধ করায় বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাদের মাকে। এ ঘটনার পরপরই ভাইদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করলে ওই প্রতারক দুই ভাইকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বিষযটি টের পেয়ে পালিয়েছে প্রতারক হাসান মাহামুদ ও নজরুল ইসলাম বিপ্লব। রোকেয়া বেগম নিরু এবং মাহামুদ ও বিপ্লবের মা ফিরোজা বেগম বলেন, প্রতিদিন আমি আমার ছেলেদের বুঝিয়ে আসছি তোদের একমাত্র বড় বোন। তাছাড়া তোদের বাবার মৃত্যুর পর বড় বোন ভগ্নিপতি ১০টি বছর তোদের লালন-পালন করেছে তাদের সাথে এভাবে আচরণ করিস না। আর জমি তোরাই তোদের বোনের কাছে বিক্রি করেছিস এমনকি তোদের বুদ্ধিতে তোর বোন ১০ লাখ টাকা খরচ করে ফ্লাট করেছে। যা তার ন্যায্য প্রাপ্য তা দিবি না কেন। এছাড়া ওয়ারিশ হিসেবেও তোর বোনের প্রাপ্য রয়েছে। তাতো আর সে চাচ্ছে না। আমি তোদের দুই ভাইয়ের কাছে অনুরোধ করছি তোরা কোন ধরনের ঝামেলা না করে বোনের প্রাপ্য বুঝিয়ে দে। এ কথাগুলো বলায় আমার ছেলে মাহামুদ ও বিপ্লব ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এরপর আমি আমার মেয়ে নিরুর বাসায় উঠি। বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছি। এর পূর্বে আমাকে আমার বোনের বাসায় চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল মাহামুদ ও বিপ্লব। আর তাদের কাছে আমি নিরাপদও মনে করছি না। কথায় কথায় আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ কারনে ছেলেদের ভয়ে আমি ঘুমাতে গেলেও দরজা আটকে ঘুমাতাম। নিরু বলেন, আমি দীর্ঘ সময় ধরে আমার ভাইদের বিভিন্ন মাধ্যমে বোঝাতে চেস্টা করেছি আমার ক্রয়কৃত জমি ও ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাট বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু তারা কোনভাবেই তাতে রাজী না হওয়ায় এবং আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানোর কারনে জীবনের নিরাপত্তায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য হই। ওই মামলায় মাহামুদ ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হলে গত শনিবার রাতে নগরীর প্যারারা রোডের হাওলাদার ম্যানশনে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে আগেভাগে টের পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। নিরু আরো বলেন, জমি ও ফ্লাট ছাড়া আমার ভাইদের পিছনে আমি লাখ লাখ টাকা খরচ করেছি। যার হিসাব আমি চাচ্ছি না। যা আমার নিকট বিক্রি করা হয়েছে সেই জমি ও ফ্লাটের দাবি করছি। এছাড়া পিতার ওয়ারিশ হিসেবেও আমি ভবনের প্রাপ্য তাও দাবি করিনি। আমার একটাই দাবি আমার জমি ও ফ্লাট আমার নিকট বুঝিয়ে দেয়ার। তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আমাকে, আমার স্বামী ও সন্তানদের বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে বলে বেড়াচ্ছে। এতে করে আরো নিরাপত্তাহীনতায় আমার সময় কাটছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মীর আশরাফ বলেন, মাহামুদ ও বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়েছে। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার করতে গত শনিবার রাতে অভিযান চালানো হয়। তাদের পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রোকেয়া বেগম নিরু বলেন, আমার পিতা যখন মারা যান তখন আমার বয়স ছিল ৩ বছর এবং হাসান মাহামুদের বয়স ছিল ১৮ মাস এবং নজরুল ইসলাম বিপ্লবের ৬ মাস। ওই সময় থেকে ভাইদের লালন-পালনের ভার নেই। ২০০০ সালে আমার বিয়ে হয়। ২০০১ সাল থেকে আমার পিতার রেখে যাওয়া ব্যবসার অংশীদারিত্ব থেকে আমাদের সরিয়ে দেন মনু বাবু। এতে করে আমাদের পরিবারের আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে ওই দুই ভাইকে নিয়ে আমার মায়ের সংসার চালানো দুরুহ হয়ে পড়ে। ভাই ও মায়ের কথা চিন্তুা করে ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ওই বাসায় অবস্থান করে সম্পূর্ন সংসার খরচ আমার স্বামীর টাকায় চালিয়ে আসি। ওই ১০ বছরে কমপক্ষে আমার স্বামীর ১০ লাখ টাকা দুই ভাইসহ সংসারের পিছনে ব্যয় করি। যখন সেখান থেকে নেমে আসি তখন আমাদের তেমন কোন গচ্ছিত টাকা ছিল না। এখানে শেষ নই, আমার সন্তানের লেখাপড়ার জন্য আমরা পৃথক বাসা নেই। এর পূর্বে ওই দুই ভাই এবং মায়ের সংসার চালানোর জন্য অসম্পূর্ণ দোতলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করে একটি ভাড়াটিয়ার ব্যবস্থা করে দেই। যাতে করে আমার মা তার দুই ছেলেকে নিয়ে ওই ভাড়ার টাকায় চলতে পারে। এতে করে মাসে তাদের কোনভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি। ওই ভবনের পিছনে আমার স্বামীর ৪ লাখ টাকা খরচ করি। সেই টাকা কোনদিন আমি তাদের নিকট চাইনি। পিতার মৃত্যুর পর নাবালক থাকা ওই দুই ভাইয়ের নামে প্যারার রোডে জমি ক্রয় করা হয়। এতে করে আমার মা ও আমি পিতার জমির অংশীদারিত্ব থেকে বাদ পড়ি। পরবর্তীতে আমরা ওই দুই ভাই তাদের টাকার প্রয়োজনে ওই জমি থেকে আধাশতাংশ জমি ২ লাখ টাকা দলিল মুলে আমার নিকট বিক্রি করে। এরপর দুই ভাই আমাকে ওই ভবন থেকে উৎখাত করতে নতুন ষড়যন্ত্র করে। তারা জমির পরিবর্তে আমাকে দোতলা ভবনের ছাদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। এমনকি সেখানে ফ্লাট করার পরামর্শ দেয়। আমি কোনভাবেই বুঝতে পারিনি আমরা আপন ভাইরা এভাবে ষড়যন্ত্র করে আমাকে ভবন থেকে উৎখাতের পায়তারা করবে। তাদের সহজ সরল কথায় বিশ্বাস করে ওই ছাদ নেই এবং সেখানে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দেড় হাজার বর্গফুট ছাদের উপর ফ্লাট নির্মান করি। ফ্লাট নির্মান করে দেয়ার পর সুচতুর দুই ভাই আমাকে এবার টাকা আয় করার পথ দেখায়। তারা তাদের মাধ্যমে ওই ফ্লাট মাসিক ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়। এমনকি এককালীন ৪ লাখ টাকা নেয় মাহমুদ ও বিপ্লব। এরপর ধীরে ধীরে তাদের আসল রূপ বের হতে থাকে। মাসের ভাড়া চাইলে তারা ঘুরাতে থাকে। এভাবে গত ছয় বছরের অধিক সময়ে ওই দুই ভাই ভাড়া বাবদই আত্মসাৎ করেছে ২০ লাখ টাকা। এখন তাদের টার্গেট হচ্ছে আমার ফ্লাটটি হজম করা। কিন্তু দলিল থাকায় তারা কোনভাবে আমার ফ্লাট আইনের মাধ্যমে দখল করতে পারবে না। বিষয়টি তাদেরও জানা থাকলেও তারা আইনের তোয়াক্কা না করে আমাকে আমার স্বামীকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে।
Post Views:
১,১০৬
|
|