|
এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে প্রেরণ-অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন
বরিশালে জরাজীর্ণ ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীদের বসবাস, দুর্ঘটনার আশঙ্কা
আবাসন-সংকট সামাল দিতে ছাত্রাবাসের টেলিভিশন কক্ষ, কমনরুমে পাতা হয়েছে আসন। সেখানে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতেও সামাল দিতে না পারায় চারজনের কক্ষে ছয় থেকে আটজনকে রাখা হচ্ছে। আসনের অভাবে শিক্ষার্থীদের আধুনিক মরচুয়ারি ভবনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও আসন না পেয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকছেন মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে। এই চিত্র অর্ধশতাব্দী আগে প্রতিষ্ঠিত বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের। দেশের পুরোনো আট মেডিকেল কলেজের একটি হলেও শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযোগী ছাত্রাবাস নির্মিত হয়নি। পুরোনো ছয়টি ছাত্রাবাসও এতটাই জরাজীর্ণ যে সেগুলো বসবাসের উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা পুরোনো ছাত্রাবাসগুলোর সংস্কার ও নতুন ছাত্রাবাসের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। বাধ্য হয়ে নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতের দাবিতে ১৭ আগস্ট তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে এক সপ্তাহের জন্য সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কলেজ প্রশাসন জানায়, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য তিনটি করে ছয়টি ছাত্রাবাসে ১ হাজার ৪২৮টি আসন আছে। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় তৃতীয় তলা ও ১ নম্বর ছাত্রীনিবাস পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে পাঁচটি ছাত্রাবাসে আসনসংখ্যা ১ হাজার ২৮টি। বর্তমানে এ কলেজে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. এহসান ও আজিম হোসেন বলেন, ২০২০ সালে হলের তিনতলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সেখানে অনেক শিক্ষার্থী বসবাস করতেন। বর্তমানে অবস্থা এতটাই নাজুক যে প্রতিদিন তিনতলার ছাদ, দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফলে তিনতলার শিক্ষার্থীরা চার মাস আগে সেখান থেকে নেমে গেছেন। দোতলার অবস্থাও এখন খারাপ। সরেজমিনে দেখা যায়, এ ছাত্রাবাসটির ভেতরে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। দেয়াল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে গেছে। বিমগুলোতে অনেক স্থানে ফাটল ধরেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে বিছানা, বইপত্র ভিজে যায় বলে জানান শিক্ষার্থীরা। কার্যত পুরো ছাত্রাবাসই বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৬ আগস্ট ছাত্রাবাসের গণরুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে বিছানার ওপর। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা। আবাসিক শিক্ষার্থী মো: তাহসিন বলেন, শুধু হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস নয়, জামিলুর রহমান ও মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন এসব ছাত্রাবাসে বসবাসকারী শিক্ষার্থীরা। ছাত্রী হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থী লিসা রহমান বলেন, পুরোনো বড় ছাত্রীনিবাসটি বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দুটি ছাত্রীনিবাসের অবস্থাও খুবই নাজুক। একসময় ছাত্রীরা মরচুয়ারি ভবনে থাকতেন। বর্তমানে ছাত্ররা থাকছেন। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে বাইরে নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকতে হচ্ছে। এতে শিক্ষা ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি নিরাপত্তার সংকটও থাকছে। নারী ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসক শিরিন সাবিহা বলেন, ছাত্রীদের এ ইন্টার্ন ছাত্রীনিবাসটি এতটাই জরাজীর্ণ যে সেখানে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। সম্প্রতি বাথরুমের ছাদের বিশাল অংশের পলেস্তারা ধসে পড়ে। এর কয়েক সেকেন্ড আগে একজন শিক্ষার্থী বাথরুম থেকে বের হন। তা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেত। ৩৩ একর জমিতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের অবস্থান। ১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর মেডিকেল কলেজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরুতে নাম ছিল বরিশাল মেডিকেল কলেজ। ১৯৭৭ সালে বরিশাল শের-ই বাংলা নামে নামকরণ করা হয়। আবাসন-সংকটের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, পুরোনো ছাত্রাবাসগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেশ কিছু ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণাও করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ বলেন, সরকার দেশের পুরোনো আটটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বহুতল ছাত্রাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে দ্রুত বহুতল ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
সূত্র : প্রথম আলো
Post Views:
১১৯
|
|