|
আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে
বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনির মুক্তিযোদ্ধের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক চার খুনি শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বুধবার (২ জুন) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের এক সভায় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল বলেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এখন আমরা গেজেট আকারে প্রকাশ করবো, প্রকাশ করলে আপনারা পাবেন। এর আগে দয়া করে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কতদিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা হয়ত দুই-চার-পাঁচ দিন লাগতে পারে। খেতাব বাতিল হলে তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আর কোনো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। জাতির পিতাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই চারজনের খেতাব বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশ রিট আবেদন করেন। তার রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ও গেজেটে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পলাতক ছয় খুনির অন্যতম নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম’, শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিন খানের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি রয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত চার খুনির রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। তাদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিমকে বীর উত্তম, নূর চৌধুরীকে বীর বিক্রম এবং রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দীনকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জামুকার সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আত্মস্বীকৃত চার খুনির খেতাব বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিল করা হলে কেনো জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করা হবে না— এ প্রশ্ন তোলেন জামুকার সদস্য শাজাহান খান। সভার সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ অন্যরা শাজাহান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। পরে জামুকা সদস্য মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হিসেবে আছেন জামুকা সদস্য শাহজাহান খান ও মো: রশিদুল আলম। ‘সংবিধান লঙ্ঘন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের’ কারণে সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের ‘বীর উত্তম’ খেতাবও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছিল জামুকার ওই সভায়।তবে জিয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। দেশ স্বাধীনের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসায় সপরিবার হত্যা করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলেন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন। বাকি সাত খুনির একজন আজিজ পাশা। ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে তার মৃত্যু হয়। আরেক খুনি আব্দুল মাজেদ গত বছরের ৭ এপ্রিল ঢাকায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তার ফাঁসি কার্যকর হয় ১১ এপ্রিল। ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বাকি পাঁচজন এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান ও খন্দকার আবদুর রশিদ পলাতক। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দশ দিনের মাথায় সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়া জিয়াও ওই হত্যাকাণ্ডে ‘পুরোপুরি’ জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার খুনিদের রক্ষায় সে সময় একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন তখনকার ‘স্বঘোষিত’ রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ। পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিয়ে সংবিধান সংশোধন করে খুনিদের রক্ষার পথটি স্থায়ী করার প্রয়াস চালান। হত্যাকারীদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়।
Post Views:
৪২২
|
|