Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার এপ্রিল ২৩, ২০২৪ ৪:২২ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » প্রত্যক্ষদর্শী কাজি তানিমের চোখে কুমিল্লার ঘটনা : গুজব নয় সত্য জানুন 
Wednesday October 13, 2021 , 9:11 pm
Print this E-mail this

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে করসে কিন্তু ক্ষেপা পাবলিককে এটা বুঝবে কে

প্রত্যক্ষদর্শী কাজি তানিমের চোখে কুমিল্লার ঘটনা : গুজব নয় সত্য জানুন


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : প্রত্যক্ষদর্শী কাজি তানিমের ফেসবুক স্ট্যাটাস :

কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে মূর্তির সাথে কুরআন রাখার ঘটনা আমার এলাকার। আমার বাসার পাশেই মণ্ডপ। জানালা থেকেই মণ্ডপ দেখা যায়। এই মণ্ডপেই পবিত্র কোরআন অবমাননা করার অভিযোগ এসেছে। মূর্তির পায়ের কাছে কুরআন শরীফ রেখে পূজা করা হয় এমনটাই বলা হচ্ছে। আচ্ছা এমনও তো হতে পারে যে কুরআন শরীফটা কাল রাতেই কেউ সেখানে রাখছে। যখন কেউ ওই মণ্ডপে ছিল না তখন। দেখেন, এটা একটা আবাসিক এলাকা। আর এই মণ্ডপটা অস্থায়ী। শুধু দুর্গা পূজা উপলক্ষে ১০ দিনের জন্য বানানো হয়। পূজা শেষ হবার পরেই আবার মণ্ডপ ভেঙে ফেলা হয়। এখানে রাতে মানুষ থাকে না। আর নানুয়া দীঘির পারে রাতে এমনিতেও মানুষ সহজে বাইরে বের হয় না। এমনকি কোনো প্রশাসনের লোকও কাল রাতে মণ্ডপ পাহারা দেয়ার জন্য সেখানে ছিল না। কারণ এই মণ্ডপ কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই। তবে কাল রাতে কয়েকবার পুলিশের গাড়ি এসে পুরা এলাকা ঘুরে গেছে। এক জায়গায় কয়েকজন ছেলেকে এক সাথে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। হয়তো প্রশাসনের আগে থেকে কিছু ধারণা ছিল। কারণ এর আগে এতো বছরে কখনোই এই এলাকার পূজায় পুলিশ আসে নাই। ধারণা থাকলে রাতে কেন পুলিশ মণ্ডপ পাহারা দেয় নাই সেটাও একটা প্রশ্ন। কাল রাতে পূজা মণ্ডপ খালি ছিল সম্পূর্ন। রাত প্রায় ৩-৪ টার দিকেই মণ্ডপ খালি করে সব বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়। সকালে পূজা শুরু হবার আগেই কুরআন শরীফটা এলাকাবাসীর নজরে পরে। শুনা যায় তখনও পুরোহিত আসে নাই। পুরোহিত আসার পর পুরোহিত নিজে অনুরোধ করেছে যাতে এই কুরআন শরীফটা সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এলাকাবাসী সেটা না করে প্রশাসনকে খবর দিয়ে পুজাই বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেছে। প্রশাসন থেকে বলাও হয় যেন পূজা বন্ধ করে দেয়। কিন্ত হিন্দুরা এটায় বাধা দেয় এবং পূজা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্ট করে। এরপরই প্রথমে বাইরে থেকে লোকজন এসে পুরা মণ্ডপ ভাঙ্গছে, প্রতিমা ভেঙে দীঘিতে ফালাইয়া দিসে, এরপর যেই হিন্ধুরেই সামনে পাইছে তারেই পিটাইছে। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিছে।

 

 

এই মণ্ডপটাতে হিন্দুদের থেকে মুসলিমরা বেশি যায়। বছরের পর বছর ধরে আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলিম একসাথে মিলে মিশে থাকে। পূজায় হিন্দু মুসলিম একসাথে আনন্দ করে। কখনো কোনো সমস্যা হয় নাই। এলকায় বিপুল পরিমাণে হিন্দু লোকজন বসবাস করে। যাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। সবাই এক সাথে বসবাস করে। আর এটাই কিছু মানুষ এর সমস্যার কারণ হয়ে দাড়াইছে। ইচ্ছা করে এই কাজটা করা হইছে দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করার জন্য। বড় কোনো ষড়যন্ত্রের পূর্বাভাস মনে হচ্ছে। আর কুরআন শরীফটা রাখছেও এমন ভাবে যেন সবার চোখে পরে। একদম সামনের দিকে হনুমান মূর্তির কোলের উপর। আর পূজার জন্য তৈরি করা মূর্তির উপর কুরআন রাখা হয়নি। মণ্ডপ এর বাইরের দিকে রাস্তার পাশে দর্শনের জন্য রাখা আলাদা মূর্তি রাখা হয়েছিল। যেটার কাছে যে কেউ যেতে পারবে। হিন্দুরা তো এতো বলদ না যে এভাবে কুরআন রাখবে। তারা স্বেচ্ছায় কেন নিজেদের পূজা নষ্ট করতে চাইবে? এটা একটা মুসলিম প্রধান দেশ। এই দেশে পবিত্র কুরআন অবমাননা কোনো ভাবেই সহ্য করা হবে না এটা তাদেরও জানার কথা। এটা যে কেউ ইচ্ছা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর উদ্দেশ্যে করসে সেটা সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু ক্ষেপা পাবলিককে এটা বুঝবে কে। তারা একটার পর একটা গুজব ছড়াইয়া যাচ্ছে। কুরআন শরীফ নাকি দুর্গার পায়ের নিচে রাখছে, কুরআন রেখে পূজা হইছে, পুরোহিতকে বলার পরও পূজা বন্ধ হয় নাই। এইগুলো বলে বলে মানুষকে আরো বেশি উসকে দিচ্ছে। অথচ কালকে রাতের পর এখানে আর পূজা হয় নি। সকালের পরিস্থিতি যেমন ছিল প্রশাসন যদি শক্ত না হতো তাহলে রামু ট্র্যাজেডির মত ভয়াবহ কিছু হতে পারত। প্রশাসনের আন্তরিক চেষ্টার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া সম্ভব হয়। পুরো বিষয়টা ভালো ভাবে তদন্ত করে দেখা উচিত। এর পিছনে যেই থাকুক তার বিচার দাবি করছি। যদি কোনো হিন্দু এই কাজ করে থাকে তাহলে তার বিচার হোক। কিন্ত একজনের দোষের জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দোষী করা কোনো ভাবেই ঠিক না। ইসলাম আমাদের এই শিক্ষা দেয় না। এই বাংলাদেশ সবার। এখানে সবাই শান্তিতে থাকবে এটাই সবার চাওয়া। যেই এই কাজ এর সাথে জড়িত তার আসল উদ্দেশ্য ছিল এলাকার এত বছর ধরে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা। তার উদ্দেশ্য যেন কোনো ভাবেই সফল না হয়। এলাকার সকল মুসলিম ভাইদের কাছে অনুরোধ তারা যেন হিন্দু পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর প্রশাসন এর কাছে অনুরোধ করছি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে বিচার এর ব্যাবস্থা করা হোক। বাংলার বুকে ইসলাম এর অপমান যেমন কোনো ভাবেই সহ্য করা হবে না, ঠিক তেমনভাবে কোনো নির্দোষ মানুষ যেন শাস্তি না পায় এটাও লক্ষ রাখতে হবে।

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খলা যাতে তৈরি না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বুধবার এক জরুরি ঘোষণায় এ অনুরোধ জানায়। এদিকে উত্তেজনার মধ্যে জেলা শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননা সংক্রান্ত খবর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। খবরটি খতিয়ে দেখার জন্য ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করেছি। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। সবাইকে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘীর উত্তরপাড়ের একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার অভিযোগ তোলার পর বুধবার সকাল থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির বিপুল সংখ্যক সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ১০০ রাউন্ড রাবার বুলেট, গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। জনতার হামলায় ইট, পাথর ও পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত ৫০ ব্যক্তি আহত হয়। তবে পূজা মণ্ডপের পূজার আয়োজকেরা বলছেন, সেখানে পবিত্র কোরআন শরিফ কী করে এলো সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই। বুধবার সকালে বিষয়টি পূজারিদের নজরে আসে। এর আগে গভীর রাত পর্যন্ত পূজা উদযাপন শেষে মণ্ডপটি জনশূন্য ছিল। পূজার আয়োজক দর্পনসংঘের সভাপতি সুবোধ রায় জানান, কম বাজেটের মণ্ডপ বলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। এ ঘটনায় কারা জড়িত সেটি বের করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি ও মুনসেফবাড়ি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সব মুসলিম ভাইকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছি, এ বিষয় নিয়ে আর কোন উশৃংখল ঘটনা তৈরি না হয়। প্রশাসন আমাদের সাথে বসেছেন বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার জন্য।’ কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, কোনো হিন্দু বা মুসলমান নয় মণ্ডপে ধর্মগ্রন্থ রাখার বিষয়ে যেই জড়িত তাকে তদন্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমাদের আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এখন সেটার জন্য যা যা প্রয়োজন তা-ই করা হচ্ছে। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এ কাজ করেছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর তদন্ত শুরু হবে। তদন্তের জন্য আমরা তিন সদস্যের কমিটি করেছি।’ পরিস্থিতির বিষয়ে বিজিবির কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম ফজলে রাব্বি জানান, কুমিল্লায় যাতে কোনো ধরনের ‘আনরেস্ট’ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য দুপুরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।




Archives
Image
পিরোজপুরের কাউখালীতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: চান মিয়ার শেষ বিদায়
Image
বরিশালে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় কথিত যুবলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
Image
২৪ বছর পর কারামুক্ত ওলিউলকে বাঁচার স্বপ্ন দেখালেন বরিশাল জেলা প্রশাসক
Image
আবারও ক্যান্সারে মৃত্যু, বড়সড় জরিমানার মুখে ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’
Image
অকালেই নিভে গেল শিশু সামিয়ার জীবন প্রদীপ