নিজস্ব প্রতিবেদক : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় নিজের মাকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার মেয়ে। বুধবার সকালে মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর কলেজপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফিরোজ নাসরিন (৫৫) মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর কলেজপাড়া এলাকার মৃত হেমায়েত উদ্দিনের স্ত্রী। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেয়ে তামান্না জেরিন রুমানাকে (২৮) তার নিজ বাসা থেকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন। মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, উপজেলার উত্তর কলেজপাড়া এলাকায় এক বাসায় এক নারীকে তার মেয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে। দা দিয়ে মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে নিহতের মেয়ে রুমানাকে আটক করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, হত্যাকারী তামান্না বিয়ে বিচ্ছেদের পর মায়ের আশ্রয়ে ছিলেন। সে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। পুলিশ নিজ বাসা থেকে নিহত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মেয়ে তামান্না জেবীনকে পুলিশ আটক করেছে। নিহত বৃদ্ধা ফিরোজা নাসরিন মঠবাড়িয়া পৌর শহরের কলেজ পাড়ার সাবেক অগ্রণী ব্যাংক ব্যবস্থাপক মৃত হেমায়েত উদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী। থানা ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, মঠবাড়িয়া পৌরশহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা ফিরোজা নাসরিন তার স্বামীর মৃত্যুর পর এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ছেলে রিয়াজ উদ্দিন হাওলাদার বিয়ে করে শহরের হাসপাতাল এলাকায় আলাদা বাসা নিয়ে থাকতেন। অপরদিকে মেয়ে তামান্না জেবীন এর গত ১০ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর থেকে মেয়ে তামান্না জেবীন বিধবা মা এর সাথে থেকে কলেজে লেখা-পড়া করছিল। সম্প্রতি মেয়ে জেবীন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। গতকাল মঙ্গলবার মায়ের সাথে ঝগড়াঝাটি হলে জেবীন বাসার মালামাল ভাঙচুর করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ভাই রিয়াজ বাসায় এসে বোনকে শান্ত করেন। বুধবার সকালে ভাই রিয়াজ বাসায় এসে বোনের জন্য ওষুধ কিনতে বাজারে যান। এ সময় বাসায় মা ও মেয়ে ছিল। সকাল ১০টার দিকে বৃদ্ধা মা রান্না করে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে জেবীন ধারালো বটি দিয়ে নৃশংসভাবে মাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। ধারালো অস্ত্রের কোপে বৃদ্ধা মায়ের মাথার ঘিলু বেরিয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
পাকা বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় পাড়া-প্রতিবেশেী হতভাগ্য বৃদ্ধার আর্ত চিৎকারও শুনতে পাননি। নিহত বৃদ্ধার ছেলে রিয়াজ উদ্দিন জানান, তিনি বোনের জন্য ওষুধ কিনে পৌনে ১১টার দিকে বাসায় এসে দরোজা খোলার জন্য মাকে ডাকেন। কিন্তু কারও কোনো সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীদের ডেকে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। ঘরে ঢুকে তিনি বোনকে বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন আর রান্না ঘরে বৃদ্ধা মায়ের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পাড়া-প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে।
ওসি এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আটক তামান্না জেরিন রুমানার মানসিক সমস্যা আছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।