|
অনেকেই মন্তব্য করেছেন তারা শুধু চিকিৎসকই নয় ‘মানবতার ফেরিওয়ালাও’
দুধের শিশু রেখে করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এক চিকিৎসক দম্পতি
রাহাদ সুমন, অতিথি প্রতিবেদক : বরিশালের উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শওকত আলী ও ডা: নাদিরা পারভিন দম্পতি মানবতার সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মানবদরদী এ চিকিৎসক দম্পতি উজিরপুর হাসপাতালে কর্মরত থেকে রোগীদের পরম যত্ন আর ভালোবাসায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ্ করে তুলছেন। দেশে প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই মৃত্যুকে পরোয়া না করে ভয়কে জয় করে এই চিকিৎসক দম্পতি রাত-দিন একাকার করে রোগীদের যথাযথ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডাঃ শওকত আলী জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা নিজেই সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে পাঠান। তাকে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তার স্ত্রী ডা: নাদিরা পারভীন সহ অন্য চিকিৎসকরা। কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে শুনলে যখন স্বজনেরাও অনেক ক্ষেত্রে ভয়ে দূরে সরে যাচ্ছেন ঠিক সেখানে মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছেন এই চিকিৎসক দম্পতি। তারা পরম যত্নে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে এ পর্যন্ত উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। যাদের সিংহভাগের পরীক্ষার ফলাফল পরবর্তীতে নেগেটিভ এসেছে। বাকীদের রেজাল্ট অপেক্ষমান। ইতোমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে একজন শিশু সহ দু’জন করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। একজন এখনও চিকিৎসারত রয়েছেন এবং দু’জন প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে বরিশাল শেবাচিম হাসাপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে নীড়ে ফিরেছেন। এ প্রসঙ্গে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শওকত আলী জানান, বিয়ের ৮ বছর অপেক্ষার পরে কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা হন তারা। শিশু কন্যা রিদা’র বয়স এখন মাত্র ১৬ মাস। মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে গিয়ে দুধের শিশু কন্যাকে ঠিকমতো যত্ন নিতে পারছেন না তারা। ডা: শওকত আলী আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন চিকিৎসককে ১০ দিন চিকিৎসা সেবা প্রদানের পরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং পরিবারের সাথে তিনি ৬ দিন থাকতে পারবেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মানবিক কারনে ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে টানা ২১ দিন চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন। এখন এক রোগীকে একইভাবে পরম যত্নে করোনা ইউনিটে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেও সুস্থ হওয়ার পথে।তার দু’ফা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী ডা: নাদিরা পারভিনকে ছুঁটি নিয়ে একমাত্র দুধের শিশুর পাশে থাকতে বলা হলে দেশের এই ভয়ার্ত পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সে জানায়, বিপদ সংকুল এ মুহূর্তে হাসপাতাল ছেড়ে কোথাও যাবে না। ডা: নাদিয়া পারভিন জানান, দেশের কল্যাণে মানবতার সেবক হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। দু’জনে একসঙ্গে আমৃত্যু মানবতার সেবা করে যাবো। এদিকে মানবসেবায় ব্রতি থাকা এ চিকিৎসক দম্পতি এলাকায় সকল মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন তারা শুধু চিকিৎসকই নয় ‘মানবতার ফেরিওয়ালাও’।
Post Views:
১৮৫
|
|