|
দিনের পর দিন লকডাউনে ঘুরছে না বাসের চাকা, বন্ধ লঞ্চের ইঞ্জিন
দিশেহারা বরিশালের পরিবহণ শ্রমিকেরা
শফিক মুন্সি, অতিথি প্রতিবেদক : দিনের পর দিন লকডাউনে ঘুরছে না বাসের চাকা, বন্ধ লঞ্চের ইঞ্জিন। এর কুপ্রভাব পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবহন শ্রমিকের পরিবারে। তবে লকডাউনের মাঝে মাঝে বেশ কয়েকবার যান চলাচলের সুযোগ দিয়েছে সরকার। তখন যাত্রীদের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হলেও বরিশালের পরিবহন শ্রমিকদের বাকি পড়েছে বেতন-বোনাস। পরিবার নিয়ে দিশেহারা অবস্থা তাদের। মূলত গত বছর (২০২০) করোনা সংক্রমণ শুরু হবার পর কয়েকদফা লকডাউনে প্রায় অধিকাংশ সময় বন্ধ থেকেছে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ। তবে যখনই কিছুদিনের জন্য চলাচলের সুযোগ মিলেছে তখনই স্বাস্থ্য বিধি পালনের নামে প্রচলিত ভাড়ার ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ আদায় করা হয়েছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এই অতিরিক্ত টাকার ভাগ তো দূরের কথা যান চলাচল বন্ধ থাকার সময়ে ঠিকমতো বেতন মিলতো না শ্রমিকদের। অন্যদিকে এ বছরের দুই ঈদের সময়ে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পেলেও শ্রমিকদের বোনাস দেয় নি অধিকাংশ যানবাহনের মালিক। এদিকে চলতি (জুলাই) মাসে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষকে এককালীন নগদ আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে সরকার। এই সুবিধার আওতায় দুই লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক এবং এক হাজার ৬০৩ জন নৌ-পরিবহন শ্রমিক থাকবে বলে জানা গেছে। তবে করোনা পরিস্থিতির এতদিন পরে এই সহায়তার ঘোষণা এলেও এখন পর্যন্ত তা বরিশাল বিভাগেন কোন পরিবহন শ্রমিকের হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে তারা এ ব্যাপারে কাজ করছে। একইসঙ্গে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য মালিকদের কাছে আহবানও জানানো হয়েছে। বরিশাল জেলা বাস-মিনিবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বেতন দেয়া হয়। তাই বাস বন্ধ থাকলে তাদের ঘরে রান্না বন্ধ থাকার যোগাড় হয়।অন্যদিকে সরকার কর্তৃক ঘোষণাকৃত প্রণোদনার সহায়তা এখনো হাতে এসে পৌঁছায় নি। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ও কয়েকটি বাসের মালিকেরা শ্রমিকদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করেছিল। এদিকে, লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শাহ আলম বলেন, প্রতিটি লঞ্চেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া রয়েছে। কারো কম আর কারো বেশি। তবে লকডাউনের কারণে গড়ে প্রতি চার মাসে একমাস লঞ্চ চলাচল করায় মালিকদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা সত্যি। তবে এটাও সত্যি যে লঞ্চের মালিকপক্ষের অন্যান্য অনেক ব্যবসা থাকে। এছাড়া করোনার মধ্যে যতবারই যাত্রী পরিবহনের সুযোগ পেয়েছে ততবারই ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তাই শ্রমিকদের বেতন ও ঈদের বোনাস দিতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা নয় মালিকদের। তিনি আরো বলেন, সরকার থেকে আমাদের জন্য প্রণোদনা আসে ঠিকই কিন্তু অদ্ভুত কারণে প্রণোদনার টাকা আমাদের পকেট পর্যন্ত আসে না৷ সারাদেশে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক নৌ-যাত্রী পরিবহনের সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রুটগুলোতে কাজ করে। কিন্তু গত দেড় বছরে মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার শ্রমিক সরকারি সহায়তায় পেয়েছে। এসব ব্যাপারে আলাপকালে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-বোনাস আটকে রাখা ঠিক না। এ অঞ্চলের লঞ্চ ও বাস মালিকেরা তুলনামূলক ধনী বলেই জানি। সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে এই বিপদের সময়ে নিজ কর্মচারীদের পাশে থাকা খুব একটা দুরূহ কাজ নয় বলেই মনে করি। এই কর্মকর্তা আরো জানান, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে কিছু পরিবহন শ্রমিকেরা সরকারি প্রণোদনা পাবেন। দ্রুতই এ অঞ্চলে এই সহায়তা কার্যক্রম শুরু হবে। মোবাইলের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার একাউন্টে প্রণোদনার টাকা পৌঁছে যাবে। এজন্য প্রাথমিক কারিগরী কার্যক্রম চলমান আছে।
Post Views:
১০৩
|
|