|
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী
ঢাবি ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে যৌন হয়রানি, অভিযুক্ত বললেন ‘আবেগে করেছি’
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের মাস্টার্সের এক নারী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম কবির আহাম্মেদ কৌশিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র। এ বিষয়ে বিচার চেয়ে বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। বিষয়টি জানতে তাদের দু’জনকে বৃহস্পতিবার ডেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তার সহপাঠী পড়াশোনার বিষয়ে আলোচনা করবে-এমন কথা বলে সোমবার তার সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি দুপুরে বিভাগী সেমিনার লাইব্রেরিতে দেখা করতে আসলে তাকে তিন দফায় যৌন হয়রানি করা হয়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, বিভাগীয় সেমিনারে কৌশিক হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে। তখন সেমিনারে কেউ ছিলো না। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি এবং রেগে যাই। এরপর কৌশিক ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে এবং পড়াশোনা সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করে। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে যখন সেমিনার থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখন সে আমার পথ আগলে ধরে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে। এ সময় সে পুনরায় অশালীনভাবে স্পর্শকাতর স্থানে বাজেভাবে স্পর্শ করে। যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ‘কি করবো বুঝতে না পেরে তাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে সেমিনার থেকে বের হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসার চেষ্টা করি। এমন সময় সে পেছন থেকে এসে আবারও আমার পথরোধ করে এবং সপ্তম তলার সিঁড়িতে আমাকে দ্বিতীয় বারের মতো যৌন নির্যাতন করে। আমি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য যতই অনুনয় বিনয় করি, ততই সে ক্ষিপ্রতার সাথে আমার শরীরে রীতিমতো স্পর্শ করতে থাকে। তখন আমার মনে হয়েছে সে আমাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে। ধ্বস্তাধস্তির একপর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দিলে সিঁড়িতে পড়ে যাই। আমি কোনো ভাবে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ঢুকে পড়ি এবং সে আমার পিছু নেয় লাইব্রেরি পর্যন্ত। লাইব্রেরিতে উপস্থিত আমার সিনিয়র আপুদের কাছে বিষয়টা জানালে তারা আমাকে বাসায় নিয়ে আসেন।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে আমাকে লাগাতার ফোন দিতে থাকে। আমি তাকে ম্যাসেজ দিই, তার আচরণে আমি ক্ষিপ্ত, সে যা করেছে এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং এরপর থেকে আমি তার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে চাই না। ম্যাসেজ পাওয়ার পর থেকে সে আমাকে অনবরত ফোন করতেই থাকে। আমি একবারও ফোন রিসিভ করিনি। মানসিকভাবে এতোটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি যে বাসায় ফেরার পর আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। ঘটনার পরের দিন দুপুরে বেলা কৌশিক আমার বাসার গেটে এসে হাজির হয় এবং দরজায় সজোরে ধাক্কা দিতে থাকে। কৌশিক দারোয়ানকে বলে আমি তার ছোটোবোন এবং আমি অসুস্থ তাই সে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে এসেছে। এই মর্মে দারোয়ান তাকে ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেয়। আমার ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়ার পর আমি ডোর হোল দিয়ে তাকে দেখে আরো বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং আমার প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়। সে সময় আমার বাসার গৃহকর্মী ছাড়া ফ্ল্যাটে অন্য কেউ ছিলো না। সে দরজার বাইরে থেকে চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডাকতে থাকে। আমার গৃহকর্মী বারবার বলতে থাকে যে বাসায় কেউ নেই। সে সজোরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে এবং ভেতর থেকে দরজা না খোলায় সিঁড়িতে বসে থাকে। এমন সময় বাসার দারোয়ান শব্দ শুনে ওপরে এসে তাকে বাসা থেকে বের করে। কিন্তু সন্ধ্যে সোয়া সাট টায় আমি বাসা থেকে বাজার করার জন্য বের হয়ে দেখি সে তখনও আমার বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে এবং আবারও রাস্তায় আমার পথরোধ করে সিন ক্রিয়েট শুরু করে। আমি কোনোমতে একটা রিক্সায় উঠে স্থানত্যাগ করি। বর্তমানে আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’ অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে তার করা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। অভিযোগের একটি অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের কাছে জমা দিয়েছেন ওই ছাত্রী। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমি ওই ছাত্রীর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের পর অভিযোগের প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহীদা জাহান বলেন, অভিযোগটি আমরা আমলে নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এসময় কবির আহাম্মেদ কৌশিকের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে তিনি এর আগে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সে কথোপকথনের অডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আসলে মিস বিহেইভ করেছিলাম তার সঙ্গে। প্রক্টর অফিসে গেলে কথা বলবো। আমি তার শরীরে হাত দিয়েছি আর কি। এটা আসলে আবেগের বশবর্তী হয়ে করেছি, এটা উচিত হয়নি আমার।’
Post Views:
৮৫
|
|