অভাব অনটনে ঝালকাঠির পাটিকররা আজ নিজের পৈত্রিক পেশা নিয়ে চরম ভাবে হতাশাগ্রস্ত
ঝালকাঠিতে শীতল পাটির কারিগরদের জীবন চলছে অভাবে – মামুনুর রশীদ নোমানী
মামুনুর রশীদ নোমানী, অতিথি প্রতিবেদক : ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের শীতল পাটির গ্রাম হাইলাকাঠি আর সাঙ্গর। সারাদেশে এখানকার পাটির ব্যাপক সমাদর থাকলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হতাশায় কাটছে কারিগরদের জীবন-জীবিকা। তাদের অভাবের সংসার চলছে টেনে-হেঁচড়ে। পাটি বুনিয়ে যে টাকা লাভ হচ্ছে তা থেকে দাদন ও চরা সুধে আনা টাকা পরিশোধ করে তাদের সংসার চলে না বললেই চলে।
 
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি আর সাংগর গ্রামে বংশ পরমপরায় শীতলপাটি তৈরি করে আসছে একটি সম্প্রদায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বী এই কারুশিল্পীরা পাটিকর নামে পরিচিত। বংশের ধারা রক্ষা করে এখনও একশ পরিবার এ দুই গ্রামে পৈত্রিক পেশা চালিয়ে রেখেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ সারাদেশে এমন কি মধ্য প্রাচ্যেও রফতানি হচ্ছে ঝালকাঠির শীতল পাটি। মূতল পাটির বড় বড় ব্যবসায়ী এখান থেকে সুলভমূল্যে পাটি পাইকারি দরে কিনে নিয়ে যান। বছরের গরম ও বর্ষার ৮-৯ মাস নিজেদের বাগানের গুল্ম জাতীয় পাইত্রা নামের তৃণ গাছ থেকে পাটিকররা পাটি বুনে থাকেন। পরিবারের শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই পাটির কারিগর। ঘরের বারান্দায় প্রায় বছর জুড়েই নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে পাটি। তবে বিভিন্ন পর্যায় সম্পূর্ণ হাতের কাজের মাধ্যমে পাইত্রা নামের তৃণ থেকে একটি পাটি তৈরিতে কমপক্ষে ১৫ দিন লাগে। এত শৈল্পিক মেধা আর শারিরিক শ্রমের পরও একটি পাটি বিক্রির আয়ে সামান্য টাকার বেশি লাভ থাকছে না কারিগরদের।
 
তাই অভাব অনটনে ঝালকাঠির পাটিকররা আজ নিজের পৈত্রিক পেশা নিয়ে চরম ভাবে হতাশাগ্রস্ত। যদিও বিসিক জানিয়েছে, পাটিকরদের লাভের জন্য পণ্যমেলাসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া সহজ শর্তে ঋণের পাটিকরদের আর্থিক ঋনদেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তার কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন পটিকররা। বাংলাদেশের শীতল পাটির যে চাহিদা তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঝালকাঠির হাইলাকাঠী ও সাঙ্গর গ্রাম জোগান দেয়। এখানকার একটি সাধারণ পাটি এক হাজার টাকায় কিনে ঢাকা চট্টগ্রামে কমপক্ষে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করেন দোকানিরা। আর মসৃণ উন্নতমানের পাটি বিক্রি হয় অকর্ষণীয় দামে। তবে তার লাভ পাটিকরদের ভাগ্যে জোটে না।
Post Views: ০
|