|
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডির মতো ভয়ংকর মাদক এলএসডি সেবন করেন হেলেনাকন্যা!
চাঁদাবাজি ও নানান প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হেলেনা জাহাঙ্গীর
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : চাঁদাবাজি ও নানান প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে রাজধানীর পল্লবী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ জুলাই) দিনগত রাতে র্যাব-৪’র একজন পরিদর্শক বাদী হয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন আইনের ৩৫, ৫৫ ও ৭৩ ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। শনিবার (৩১ জুলাই) ভোরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে রাজধানীর গুলশান ও পল্লবী থানায় মোট তিনটি মামলা দায়ের করে র্যাব। এর আগে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে শুক্রবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান থানায় আরও দুটি মামলা করে র্যাব। এর মধ্যে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১ ধারায় একটি মামলা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫ বি এর ১ (বি) ধারায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) ও ২৪ (খ); ২০০১ সালের বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধনী/২০১০) এর ৩৪ (খ); ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষন ও নিরাপত্তা) আইন’র ৩৪ (খ) ধারায় অপর একটি মামলা দায়ের করে র্যাব। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার হেলেন জাহাঙ্গীরকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতকে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত হেলেনা জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের গুলশানের বাসভবনে অভিযান চালায় র্যাব। দীর্ঘ চার ঘণ্টা অভিযান শেষে রাত ১২টার দিকে তাকে আটক করা হয়। তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও জুয়ার সরঞ্জামসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করা হয়। একই দিনের গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুরে জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশন কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমানে অবৈধ ও অনুমোদনহীন স্যাটেলাইট সরঞ্জামাদি জব্দ করে র্যাব। ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড বা এলএসডির মতো ভয়ংকর মাদক সেবন করেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের মেয়ে জেসিয়া আলম। শুধু তাই নয়, তিনি মদপানের পাশাপাশি গাঁজাও সেবন করেন। জানা গেছে, পরিবার থেকে মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার জন্য পাঠানো হলেও তা শেষ করতে পারেননি জেসিয়া। বিদেশে থাকা অবস্থায় মদসহ বিভিন্ন মাদকে আসক্ত হন তিনি। পরে দেশে এসেও প্রতিনিয়ত এলএসডি, গাঁজা, মদসহ বিভিন্ন মাদকের সঙ্গে জড়িত হন। হেলেনা জাহাঙ্গীরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই একটু মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলেন জেসিয়া। এরপর তাকে পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাদকে জড়িয়ে পড়েন। পরে পড়াশোনা শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন। বিভিন্ন সময় নিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর তাকে ভালো পথে আনার চেষ্টাও করেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের অভিযানে মদের বোতল উদ্ধারের বিষয়ে মেয়ে জেসিয়া আলমের ভাষ্য, ‘এসব তার ভাই সেবন করতেন। সেগুলোই বাসায় ছিল।’ হরিণের চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, ‘ভাইয়ার বিয়ের সময় মায়ের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতানেত্রীরা মিলে ওইটা গিফট করেছে। সেটি ওয়ালে ঝোলানো ছিল।’ অভিযানে র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, আমরা বাড়িটি তল্লাশির সময় মাদকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করি। এসময় হেলেনা কন্যার রুম থেকে মদ উদ্ধার করা হয়। সেসময় তিনি এলএসডি সেবনের বিষয়টি জানান। তবে রুম সার্চ করে এলএসডি উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন সময় বন্ধুদের সঙ্গে মেসেজ আদান-প্রদানে এলএসডি সেবনের তথ্য মিলেছে।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে সুনাম নষ্ট করেছে ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর। এ ছাড়া খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। একটি উচ্চাভিলাষী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে নানা ধরনের অবৈধ পন্থা, অপকৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে শুক্রবার (৩০ জুলাই) উত্তরা র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অপকৌশল হিসেবে কখনও মাদার তেরেসা, পল্লী মাতা-প্রবাসী মাতা হিসেবে পরিচিতি পেতে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। জাহাঙ্গীর’র পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘবদ্ধ একটি চক্র ভুয়া খেতাবের অপপ্রচার চালাতে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজেকে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতো সে। আল মঈন বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া প্রবাসী আলোচিত সেফুদা সঙ্গে ছিল হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নিয়মিত যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেন ছিল বলেও প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে র্যাব। আলোচিত সেফুদা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নাতনী বলেও সম্বোধন করতো। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেসবুক লাইভে এসে অযাচিত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করতেন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিদের কটাক্ষ উত্যক্ত করতো হেলেনা জাহাঙ্গীর। বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ থেকে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের নামে অর্থ সংগ্রহ করতেন। যা মানবিক সহায়তায় ব্যবহারের চেয়ে গ্রেফতারকৃতের খেতাব প্রচার-প্রচারণায় বেশি ব্যবহার করা হতো। হেলেনা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে নিজের বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেন। তিনি ১২টি ক্লাবের সদস্যপদে রয়েছেন। বিকালে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীরকে তারা গুলশান থানায় হস্তান্তর করছে। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে গত রোববার আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।এতে বলা হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতি বহির্ভূত হওয়ায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উপকমিটির সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের একদিন পরই ফেসবুক লাইভে এসে হেলেনা জাহাঙ্গীর কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। জয়যাত্রা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন গত ১৭ জানুয়ারি। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের দিকে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। আবদুল মতিন খসরু মারা গেলে ওই আসনে মনোনয়নের জন্য দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি। সম্প্রতি ফেসবুকে নেতা বানানোর ঘোষণা দিয়ে ছবি পোস্ট করে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
Post Views:
১৭৩
|
|