|
গত আড়াই মাস ধরে করোনা আতংক, তার ওপর আম্ফান বাড়তি আতংক যোগ করেছে জনমনে
ঘুর্ণিঝড় আম্ফান : চাটগাঁরে এবারও আল্লাই বাঁচাইয়্যে
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের অভিমুখে ছিল চট্টগ্রামও। শেষ সময়েও ছিল চোখ রাঙানি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আতংক ছড়িয়ে ঝড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে এটি। এতে চট্টগ্রামে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, চাটগাঁরে এবারও আল্লাই বাচাইয়্যি। গত সোমবার থেকে বেশ কয়েকবার দিক পরিবর্তন করে সর্বশেষ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা ও পার্শ্ববর্তী স্থানগুলো দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় তাণ্ডব চালায় আম্ফান। গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত থাকলেও গতকাল সকালে হঠাৎ করে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর নির্দেশনা দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল চট্টগ্রামে আম্ফানের চোখ রাঙানি। গতকাল রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ও আশেপাশের এলাকায় ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হলেও আজ বৃহস্পতিবার সকালে এটি ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। কখনো উত্তর-উত্তরপশ্চিম, আবার কখনো অভিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে ধাবিত হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সাতক্ষীরা এলাকার উপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হেনেছে। এটি এখন ক্রমশ দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তবে গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় সময় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আম্ফানের খণ্ডিত অংশ গভীর রাতে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও পার্শ্ববর্তী দুয়েক জেলায় ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালাতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের অনেক এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ গত রাত ১০টায় বলেন, আম্ফান ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু অতিক্রম করলেও এর প্রভাব ৪-৫ ঘণ্টা থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে গতি কমে যাবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে আম্ফানের ক্ষতিকর তেমন প্রভাব নেই। তবে জোয়ারের সময় বাতাসে গতি থাকলে ৮-১০ ফুট পর্যন্ত পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেতে পারে। এদিকে চট্টগ্রামে ৯ নং মহাবিপদ সংকেত ঘোষণার পর গতকাল সকাল থেকে জনমনে আতংক তৈরি করে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা এলাকা দিয়ে আঘাত হানার খবরে চট্টগ্রামের জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। তবে আম্ফানের প্রভাবে সাগর ছিল বেশ উত্তাল। তার ওপর অমাবস্যার জোয়ারের কারণে সাগরের পানি ছিল উপচে পড়ার মতো। সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে পতেঙ্গা, আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপকূলের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ শুরু করে রেডক্রিসেন্টসহ স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল বিকালে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সৈকত এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রাক্ষুসে চেহারার বর্ণনা করছিলেন শ্যামল ধর নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, গত আড়াই মাস ধরে করোনা আতংক বিরাজ করছে। তার ওপর আম্ফান গত কয়েকদিনে বাড়তি আতংক যোগ করেছে জনমনে। চট্টগ্রামে তেমন আঘাত হবে না জেনে বুধবার দুপুর থেকে কিছুটা স্বস্তি থাকলেও বিকালে সাগরের কাছে যেতে মনে ভয় ধরেছে। বড় বড় ঢেউ রাক্ষুসে হয়ে তীরে আঁচড়ে পড়ছিল। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অধিকাংশ জায়গায় দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক হতে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। আম্ফানের প্রভাবে বাতাস দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ১৪০-১৬০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গতকাল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বৃহস্পতিবার প্রথম জোয়ার শুরু সকাল ৬টা ২১ মিনিটে এরপর ভাটা শুরু দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে। দ্বিতীয় জোয়ার শুরু সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিটে। এদিকে, গতকাল রাত ৯টার সর্বশেষ বুলেটিনে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আম্ফান আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। আম্ফানের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কঙবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
সূত্র : দৈনিক আজাদী
Post Views:
১৩১
|
|