Current Bangladesh Time
শুক্রবার অক্টোবর ৩, ২০২৫ ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » গাউট কি? রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয় 
Tuesday May 21, 2019 , 2:24 pm
Print this E-mail this

গাউট কি? রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধে করণীয়


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : গাউট কি?
গাউট বা গেঁটে বাত হলো মানব অস্থিসন্ধির প্রদাহজনিত এক প্রকার রোগ। মানবদেহের কিংবা খাবারের মধ্যে বিদ্যমান পিউরিন নামক জৈব পদার্থের বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন এক প্রকার বর্জ্য পদার্থ হলো ইউরিক এসিড। সাধারণত মানবদেহে উৎপন্ন এই প্রকার বর্জ্য পদার্থ পরবর্তী সময়ে প্রস্রাব ও পায়খানার সঙ্গে দেহ থেকে নিঃসৃত হয়। যদি কোনো কারণে এই ইউরিক এসিড মানবদেহে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিকমাত্রায় উৎপন্ন হয় কিংবা ব্যাহত হয় এর স্বাভাবিক নিঃসরণের মাত্রা, তখন মানব রক্ত তথা মানবদেহে বেড়ে যায় এই ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা। তা জমা হতে শুরু করে মানব অস্থিসন্ধিসহ এর চারপাশের যোজক কলায়। তাতে দেখা দেয় প্রদাহসহ চরম ব্যথা। সাময়িকভাবে লুপ্ত হয় আক্রান্ত অঙ্গের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা। সাধারণত জনসংখ্যার শতকরা ১ থেকে ৩ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। মধ্যবয়সী মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫ গুণ বেশি।

রোগের কারণ :
** সাধারণত অতিরিক্ত মাত্রায় লাল মাংস, সামুদ্রিক খাবার, পশুর যকৃত, কিডনি, ভুঁড়ি প্রভৃতি ভক্ষণ
** দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা তথা কিডনি ফেইলিউর
** অতিরিক্ত মদ্যপান
** দীর্ঘমেয়াদে সিসার বিষক্রিয়া
** ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস
** বিভিন্ন ওষুধ যেমন: থায়াজাইড, সাইক্লোসপোরিন, পাইরাজিনামাইড, অ্যাসপিরিন প্রভৃতি এক বা একাধিক ওষুধের ব্যবহার

** রক্তের বিভিন্ন রোগ যেমন: লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, পলিসাইথেমিয়া প্রভৃতি
** চামড়ার সোরিয়াসিস নামক রোগ
** অতিরিক্ত মাত্রায় ফ্রুক্টোজ গ্রহণ
** গ্লাইকোজেন স্টোরেজ ডিজিজ
** সর্বোপরি নানা বংশগত তথা জেনেটিক কারণসহ এক বা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যায় মানব রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে মানবদেহে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, স্থূলতা প্রভৃতি এক বা একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা এই রোগের সহযোগী হিসেবে থাকতে পারে।

রোগের লক্ষণ :
** সাধারণত পায়ে বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়া, মধ্য পা, গোড়ালি, হাঁটু, করতল, মনিবন্ধ কিংবা কনুইয়ে অবস্থিত প্রভৃতি এক কিংবা বিরল ক্ষেত্রে একাধিক অস্থিসন্ধি হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথাসহ ফুলে যাওয়া।
** আক্রান্ত অস্থিসন্ধির চারপাশের নরম কোষ কলা প্রদাহসহ লাল হয়ে ওঠা।
** দীর্ঘমেয়াদে মানব অস্থিসন্ধির চারপাশ ও নরম কোষ কলা তথা হাতের আঙুল, করতল, অগ্রবাহু, কনুই, পায়ের গোড়ালি প্রভৃতির প্রষ্ঠদেশসহ কানের এক বা একাধিক জায়গায় অতিরিক্ত ইউরিক এসিড পুঞ্জীভূত হয়ে ছোট-বড় নানা আকারের গুটির উপস্থিতি।
** দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড কিডনির কোষ কলায় অস্বাভাবিকভাবে জমা হয়ে পুনঃ পুনঃ প্রদাহ সৃষ্টিপূর্বক এর কর্মক্ষমতা লুপ্ত হওয়া।
** মানব মূত্রতন্ত্রে পুনঃ পুনঃ পাথর হওয়ার প্রবণতা।
** দীর্ঘমেয়াদে আক্রান্ত অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক অঙ্গসংস্থান লুপ্ত হয়ে উক্ত অস্থিসন্ধি বিকৃত হয়ে এর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা লুপ্ত হওয়া।
প্রভৃতি এক বা একাধিক সমস্যা নিয়ে এই রোগে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারে।

রোগ নির্ণয় :
সাধারণত রোগের ইতিহাস, নানা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা ও সর্বোপরি অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরমর্শ মোতাবেক নানা ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা, যেমন :
** রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা নির্ণয়
** আক্রান্ত অস্থিসন্ধির রসে ইউরিক এসিড ক্রিস্টালের উপস্থিতি
** আক্রান্ত অস্থিসন্ধির এক্স-রে প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে মানবদেহে এই রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এছাড়া কমপ্লিট ব্লুাড কাউন্ট, রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নির্ণয়, ব্লুাড গ্লুকোজ, সিরাম ফাস্টিং লিপিড প্রোফাইল, সিরাম সিআরপি, ইসিজি, প্রয়োজনে মানব মূত্রতন্ত্রের রেডিও ইমেজিং প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের কারণ, জটিলতা ও এর সহযোগী হিসেবে থাকা রোগসমূহের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যেতে পারে।

চিকিৎসা :
** সাধারণত রোগের প্রাথমিক ও তীব্র পর্যায়ে নানা ব্যথানাশকের ব্যবহারের দ্বারা এর তীব্রতা অনেকটা কমানো যেতে পারে।
** ব্যথানাশকের অকার্যকারিতার ক্ষেত্রে আক্রান্ত অস্থিসন্ধি থেকে অতিরিক্ত অস্থিরস অপসারণসহ ওই অস্থিসন্ধিতে স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগে ভালো ফল পাওয়া যায়।
** আক্রান্ত অস্থিসন্ধিতে গরম বা ঠাণ্ডা সেঁকের ব্যবহারে ব্যথার নাশ অনেকটা ত্বরান্বিত হয়।
** যখন অনেক অস্থিসন্ধি এক সঙ্গে তীব্র আকারে আক্রান্ত হয় তখন মুখে বা মাংসপেশি বা শিরাপথে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার সাময়িকভাবে প্রয়োজন হতে পারে।
** রোগের দীর্ঘমেয়াদে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে
** যদি বছরে এই রোগ দুই বা ততধিকবার দেখা দেয়
** আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে এক বা একাধিক ইউরিক এসিড সমৃদ্ধ গুটির উপস্থিতি
** রোগের কারণে আক্রান্ত অস্থিসন্ধির বিকৃতি তথা নড়ন ক্ষমতা লোপ পাওয়া
** রোগের জটিলতায় কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা
** মূত্রতন্ত্রে ইউরিক ইসিডসমৃদ্ধ পাথরের উপস্থিতি
** রক্তে অতি উচ্চমাত্রায় ইউরিক এসিডের উপস্থিতি
** যখন রোগীর রোগের বংশগত ইতিহাস স্পষ্ট ও শক্তিশালী হয়।
প্রভৃতি এক বা একাধিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে নানা ওষুধ যেমন: অ্যালোপিউরিনল, ফেবুক্সোস্টেট প্রভৃতি ওষুধ এককভাবে ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয় :
নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসগুলো যেমন:
** অতিরিক্ত মাত্রায় প্রাণিজ লাল মাংস, যকৃত, কিডনি, ভুঁড়ি ও সামুদ্রিক খাবার না খাওয়া
** নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও পরিমিত ব্যায়াম করা
** দেহের ওজন স্বাভাবিক রাখা

** মদ্যপান পরিহার
** প্রয়োজনে গাউটের উদ্রেক সৃষ্টিকারী ওষুধসমূহের সীমাবদ্ধ ব্যবহার কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবহার না করা
** রোগের কারণ ও এর জটিলতাসমূহের যথাযথ চিকিৎসা
** এই রোগের সহযোগী হিসেবে থাকা নানা সমস্যা, যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস প্রভৃতির চিকিৎসা।
** সর্বোপরি প্রয়োজন রোগীর রোগ ও এর চিকিৎসা সম্পর্কে পর্যপ্ত স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান।
প্রভৃতি এই রোগের প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।




Archives
Image
বরিশালে ভুল চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কলেজ ছাত্রী!
Image
আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের নিষেধাজ্ঞা উইথড্র’র কোনও সম্ভাবনা নেই : ড. আসিফ নজরুল
Image
বরিশাল-২ আসনে আলোচনায় সেই অভি
Image
সাংবাদিকদের ওপর হামলা : বরিশাল প্রেসক্লাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ
Image
পাচারের অর্থ গচ্ছিত রেখে অপরাধে শরিক না হওয়ার আহ্বান, জাতিসংঘে ড. ইউনূস