বর শামছুল হক শামছু ওই কনেকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে বিয়ে করেন
কুমিল্লার সেই বর-কনেকে আটক করেছে পুলিশ!
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীকে শামছুল হক শামছু (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ বিয়ে করেছেন। এ ঘটনায় মেয়ের মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার পেরুল গ্রামের ভাড়া করা বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীর নাম মরিয়ম আক্তার। আর শামছু পেশায় রিকশাচালক ও ছয় সন্তানের জনক। গত ১০ মে তাদের বিয়ে হয়। অসম বয়সের এ বিয়ের খবর প্রকাশ হতেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আইয়ুব বলেন, ‘ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। পরে পেরুল গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।’ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সফিকুর রহমানও তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শামছুল হক শামছু লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পেরুল গ্রামের দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা। আর ওই ছাত্রীর বাড়ি একই উপজেলার পশ্চিম পেরুল গ্রামে। সে পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বর শামছুল হকের ছোট মেয়েও তার সঙ্গে পড়ে। জানা গেছে, গত ১০ মে শামছুল হক শামছু ওই ছাত্রীকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে বিয়ে করেন। ছাত্রীর বাবা ঢাকায় চাকরির সুবাদে তাদের পরিবার দেখাশোনা করার অসিলায় আগে থেকেই আসা-যাওয়া করতেন রিকশাচালক শামছু। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই স্কুলে যাওয়া আসার সময় সে শামছুল হকের রিকশায় যাতায়াত করত। এ সময়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয়রা বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় ১১ মে বর-কনেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান। বর শামছুল হক বলেন, ‘৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুলে তাকে আমি বিয়ে করি।’ এ সময় শামছুল হক বিয়ের কাবিননামা ও কনের জন্মসনদ দেখিয়েছে। এনিয়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে ১১ মে পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান লোক মারফত সামছুল হক ও ছাত্রীকে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করে বিস্তারিত জানতে চান। ওই সময় সামছুল হক ছাত্রীর প্রাথমিক শিক্ষা সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ ও বিয়ের কাবিননামা উপস্থাপন করেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার সনদ ও জন্মনিবন্ধনে মরিয়মের জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ২/২/২০০২ইং। ২০০৮ সালে জন্মনিবন্ধনের সময় পরিবারের পক্ষে মেযের বয়স বাড়িয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সামছুল হকের বিরুদ্ধে। কাবিননামায় দেখা যায়, গত ১০ মে কুমিল্লা সিটি কর্পোশেনের ৭নং ওয়ার্ড’র নিকাহ রেজিষ্ট্রার মুজিবুর রহমান সরকারের কার্যালয়ে ৫লক্ষ টাকা মোহরানায় বই নং-৫৪, পৃষ্ঠা নং-২৮ ও ক্রমিক নং-৪৪০-এ তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। কাবিনামায় সামছুল হকের জন্মতারিখ ৩/১/১৯৫৫ ইং উল্লেখ রয়েছে। পেরুল দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান এজিএম শফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি উভয়কে আমার অফিসে ডাকি। বর ৬৫ বছরের বৃদ্ধ। কনের ১৮ বছর হয়নি। তবে তাদের উপস্থাপিত জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী কনে প্রাপ্ত বয়ষ্ক। কনেকে বারবার অনুরোধ করলেও সে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। বাল্য বিয়ে দন্নীডয় অপরাধ। স্থানীয়রা আগে জানালে ব্যবস্থা নেয়া যেতো।এখন যেহেতু বিভিন্ন মারফত খোঁজ নিয়ে দেখেছি মেয়ের বয়স ১৮ প্লাস তাহলে এখানে আমাদের কি বলার আছে। লালমাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার কে এম ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিষয়টি আমি শুনা মাত্রই স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি খোঁজ নেবার জন্য। চেয়ারম্যান জানিয়েছে, মেয়ে নাকি জন্মনিবন্ধন ও শিক্ষা সনদ অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স্ক। উল্লেখ্য, শামসুল হকের দুই মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর কনে চার ভাইবোনের মাঝে দ্বিতীয়। তার বড় বোনের এখনো বিয়ে হয়নি। ছোট দুই ভাই রয়েছে। বিয়ে প্রসঙ্গে মেয়ের চাচা মোবারক হোসেন মফু বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। অবুঝ মেয়েটাকে ফুসলিয়ে সে এ কাজটা করেছে।’ এ বিষয়ে মেয়ের বাবা বলেন, ‘শামসু আমার বাড়ির কাজ করত। আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। আমার পরিবারে বিভিন্ন কাজ সে করে দিতো। তাকে আমি খুব বিশ্বাস করতাম। সে আমার মেয়েকে প্ররোচনা দিয়ে বিয়ে করে। সে একজন রিকশাচালক। তার ঘরে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। এই বয়স্ক একটা লোকের সঙ্গে আমার মেয়ে কীভাবে সংসার করবে?’