|
আবাসন সংকটে বরিশালের চার সরকারি কলেজ : ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীদের বসবাস
এম. বাপ্পি : আবাসন সংকটে ভুগছে বরিশালের চার সরকারি কলেজ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, ছাত্রীনিবাস না থাকা, সীমিত সংখ্যক আসন, বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত কলেজগুলোর ছাত্রাবাসের (হোস্টেল) শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আবার সরকারি বরিশাল কলেজে ছাত্রাবাসের কোন ব্যবস্থাই নেই। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে সংলগ্ন বাসা-বাড়ি বা মেসে। যদিও ছাত্রাবাসের দাবিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সংকট নিরসনের দাবিজানিয়েছেন কলেজগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, বরিশালের চার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ৪০ হাজার। এরমধ্যে বিএম কলেজে ২২ হাজার, সরকারি সৈয়দ হাতেমআলী কলেজে ১২ হাজার, সরকারি মহিলা কলেজে ১০ এবং সরকারি বরিশাল কলেজে ৬ হাজার শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস রয়েছে মোটে ৭টি। তবে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৭ বছরেও কোন ছাত্রাবাস পায়নি সরকারি বরিশাল কলেজ। বিএম কলেজের ছাত্রাবাস ৪টি হল-বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাস, মহাত্মা অশ্বিনীকুমার ছাত্রাবাস, জীবনানন্দ ছাত্রাবাস এবং সার্জেন্ট ফজলুল হক ছাত্রাবাস। বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের ৩টি ভবনের মধ্যে ১নং ভবনটি বেশ কয়েক বছর আগেই ঝুঁঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিটিকর্পোরেশন। এরপরও ভবনটিতে ২শ ছাত্রী বাস করছেন বছরের পর ধরে। একাধিক ছাত্রী জানান, নিবাসের ৩টি ভবনে ৫শ আসনের বিপরীতে স্থান মিলেছে ৯শরও বেশি ছাত্রীর। অর্থাৎ প্রতিটি আসন অন্তত ২ জন ভাগাভাগি করে থাকছেন। ছাত্রীরা জানান, আমরা ভাগ্যবান তাই হোস্টেলে সিট পেয়েছি। কারণসংকটের কারণে আবেদন করার পরও অনেক ছাত্রীই সিট বরাদ্দ পাননা। ১ নং ভবনের ছাত্রীরা জানান, ভবনটির অবস্থা খুবই নাজুক। দেয়ালে রয়েছে একাধিক ফাটল। প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। তারপরও বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হচ্ছে আমাদের। তবে গণরুমের অবস্থা তথৈবৈচ। সেখানের ৩৫ ছাত্রীকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প জায়গার কারণে। ৩শ আসনের অশ্বিনী কুমার ছাত্রাবাস, সেখানে বসবাসকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। একই অবস্থা ঐতিহ্যবাহী কলেজটির বাকী ২ ছাত্রাবাসেরও। তদ্বির ছাড়া ছাত্রাবাসগুলোতে আসন বরাদ্দ পাওয়া খুবই দুষ্কর-এমন দাবি ছাত্রদের। এদিকে হাতেম আলী কলেজে রয়েছে একটিমাত্র ছাত্রাবাস। শহীদ আলমগীর ছাত্রাবাস নামক হোস্টেলটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। ঝুঁকি নিয়েই সেখানে থাকতে হচ্ছে ছাত্রদের। এই কলেজের নেই কোন ছাত্রীনিবাস। ছাত্রীদের থাকতে হয় মেসে। সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাস মাত্র ২টি। ২টি ছাত্রীনিবাসেই বহু পুরানো। বিশেষ করে সংস্কারের অভাবে সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসটি করুণ দশায় পর্যবসিত হয়েছে। সীমিত আসন সত্বেও অন্তত ১ হাজার ছাত্রীর বসবাস রয়েছে ছাত্রীনিবাস দু’টিতে। সরকারি বরিশাল কলেজে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬হাজার। তবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা যাযাবরের মত বাসা ভাড়া নিয়ে, মেস বানিয়ে, কেউ বা আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় থেকে লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছেন। এতে অর্থনৈতিক সমস্যাসহ নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা অনেকেই আছি যারা বরিশাল শহরের বাইরের বাসিন্দা। প্রতিদিন বাড়িতে যাওয়া-আসা করে ক্লাসে অংশগ্রহণ এক কথায় অসম্ভব। তাই বরিশালে থেকেই আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। কিন্তু কলেজে কোন ছাত্রাবাস নেই। তাই বাধ্য হয়ে ৩/৪ জন একত্রিত হয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে মেস বানিয়ে থাকছি। এতে প্রতিমাসে যে বাড়তি খরচ হচ্ছে তা বহন করা আমাদের অনেকের পরিবারের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব। তবে কলেজের নিজস্ব ছাত্রাবাস থাকলে এই ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ মিলত। জানতে চাইলে বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আ: রাজ্জাক বলেন, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ বছর অতিবাহিত হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য এখন পর্যন্ত কোন আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়নি। আবাসন সুবিধার জন্য একাধিকবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। ছাত্রাবাস চেয়ে নতুন করে আবেদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক আ: রাজ্জাক।
সূত্র : বরিশাল ক্রাইম নিউজ
Post Views:
২২৪
|
|