মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী করতে, মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে। বিট পুলিশিংয়ের মূল ধারণা হচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তারাই সেবা নিয়ে যাবেন মানুষের কাছে। তবে মামলাসহ কিছু আইনগত বিষয়ে থানায় আসতে হবে। বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে চরম বিপদে না পড়লে মানুষ থানামুখী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ অবস্থায় বিট পুলিশিং চালুর সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং শহরের মহল্লাগুলোকে বিটে বিভক্ত করে একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শককে (এসআই) এর দায়িত্ব দেওয়া হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত এ পুলিশ কর্মকর্তারাই এলাকার আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ রাখবেন ও প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেবেন। উন্নত দেশগুলোর আদলে এলাকাভিত্তিক বিট ভাগ করে পুলিশিং কার্যক্রমের বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধানে (পিআরবি) উল্লেখ রয়েছে। ২০১০ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) প্রথমবারের মতো বিট পুলিশিং চালু হয়। এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিটে কার্যক্রম চললেও দেশব্যাপী পরিচালনার নির্দেশনা ছিল না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেনজীর আহমেদ আইজিপি’র দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সারা দেশে বিট পুলিশিং ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গত ১৬ জুন এক ভিডিও বার্তায় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন তিনি, এর মধ্যে বিট পুলিশিং অন্যতম। পরে ২১ জুন রাতে আরেকটি ভিডিও কনফারেন্সে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশনা দেন আইজিপি। ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটে বিট পুলিশিংয়ের সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব এলাকায় বিট পুলিশিং সফল হয়েছে। আমরা সারা দেশে বিট পুলিশিং চালু করতে চাই, মানুষের কাছে যেতে চাই, মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই।’ পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিভেনশন) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘একটি আদর্শ কর্মপরিকল্পনা বা কাঠামো তৈরি হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি হয়ে যাবে। এরপর সারা দেশে সে অনুযায়ী প্রতিটি ইউনিটে, থানায় বিট ভাগ করে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। একজন এসআই মূলত বিটের দায়িত্বে থাকবেন। লোকবল কম থাকলে এএসআইকেও দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘বিট অফিসার তাঁর বিট এলাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য, প্রতিবেশীর তথ্য, অপরাধীদের গতিবিধি, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করাসহ অনেক কাজে ভূমিকা রাখবেন।’ এআইজি সহেলী বলেন, ‘পিআরবিতে থাকা বিট পুলিশিংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সালে ডিএমপিতে এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিট করেছে। এবার কেন্দ্রীয় নির্দেশনার মাধ্যমে সারা দেশে এটি বাস্তবায়িত হবে।’ তবে কমিউনিটি পুলিশের কমিটি বাতিল হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সেটি আলাদাভাবে কাজ করবে। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলেও এ কমিটি নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে। যাদের দুর্নাম রয়েছে এমন লোকও কমিউনিটি পুলিশের নেতা হয়েছেন, নেতা হয়েছেন রাজনৈতিক দলের বিতর্কিত ব্যক্তিরাও। আর কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে জনগণ ও পুলিশের দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের কথা বলা হলেও অনেক সময়ই ঝামেলা এড়াতে লোকজন পুলিশের কাছে যায় না। এসব কারণে আশানুরূপ ফল আনতে পারেনি কমিউনিটি পুলিশিং।’ তিনি বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় বিট পুলিশিং চালুর পর ঢাকায় বেশ সুফল পাওয়া যায়। তাই তিনি আইজিপি’র দায়িত্ব নেওয়ার পর বিট পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন।’ এ কর্মকর্তা মনে করেন, করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ চরম বিপদে না পড়লে থানায় আসবে না। তাই এখন বিট পুলিশিং চালু করা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনি পরিভাষায়, বিট হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা। পুলিশ অধীক্ষেত্রের একটি ছোট অংশকে বলা হচ্ছে বিট। সুতরাং বিট পুলিশিং হলো কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্টসংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করা। এ ধারণাটি এসেছে লন্ডন মহানগর পুলিশের কার্যপদ্ধতি থেকে। জাপানের কোবান পদ্ধতিতেও প্রতিটি কোবান বা পুলিশ বক্সের অধীন একটি নির্দিষ্ট এলাকা রয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে আইজিপি’র নির্দেশে সারাদেশব্যাপী চলছে এই বিট পুলিশিং কার্যক্রম। তারই ধারাবাহিকতায়, আগামীকাল মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল এগারোটায় বন্দর থানাধীন টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (সিংহের কাঠী) বরিশালে বিএমপি কমিশনার’র নেতৃত্বে বিট পুলিশিং কার্যালয় শুভ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএমপি’র পক্ষ থেকে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।