|
করোনা আতঙ্কে রোগীরা সরকারী হাসপাতাল এড়িয়ে চলছেন, সে কারণেই প্রাইভেট চেম্বারে ভীড় করছেন তারা
অধিকাংশ চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ বরিশালে, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা!
মামুন-অর-রশিদ ও খালিদ সাইফুল্লাহ : করোনা ভাইরাস আতংঙ্কে নগরীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখা (ব্যক্তিগত প্রাকটিস) বন্ধ করে দিচ্ছেন। অধিকাংশ প্রাইভেট চেম্বার ইতমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বর-কাশি সহ মেডিসিন, গাইনি, অর্থপেডিক, সার্জারী, চক্ষু সহ প্রায় সব বিভাগের রোগীরাই সুচিকিৎসার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। গত সোমবার নগরীর মেডিনোভা, এ্যাপোলো, ল্যাব-এইড, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাহাত আনোয়ার হাসপাতাল সহ প্রায় সবগুলো প্রাইভেট চিকিৎসালয়ে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। তাছাড়া সরকারী হাসপাতাল সমূহেও যথাসম্ভব রোগীদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কোন কোন রোগীরা করোনা আতঙ্কে সরকারী হাসপাতাল এড়িয়ে চলছেন। সে কারণেই প্রাইভেট চেম্বারে ভীড় করছেন তারা। এমনকি তাদের মুঠোফোনও বন্ধ। ফলে ভোগান্তিকে পড়েছেন বরিশালের রোগী ও তাদের স্বজনরা। এসব চিকিৎসকরা যেসব ডায়গণষ্টিক সেন্টার কিম্বা ক্লিনিকে চেম্বার করেছেন সেখানকার দায়িত্বশীল সুত্রগুলো করোনাভাইরাস আতংকে চিকিৎকদের চেম্বারে না আসার কথা স্বীকার করেছেন। তারা দাবী করেছেন, এ চিকিৎসকদের বেশীরভাগের বয়স ষাটোর্ধ্ব। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই হৃদরোগী। বাইপাস অপারেশনও হয়েছে ২/১ জনের। করেনাভাইরাস নিয়ে জীবনের ঝুকি এড়াতে তারা আপাতত চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারন রোগীরা। নগরীর আলেকান্দা কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, ৬ বছর বয়সী তার এক ভাগ্নে অসুস্থ হলে শনিবার রাতে ডা: হামিদ শেখের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখানো হয়। ডায়গণষ্টিক পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে প্রেসক্রিপশন করার জন্য রোববার সকালে চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে জানতে পারেন তিনি আজ থেকে আর চেম্বারে আসবেন না। আরিফুর রহমান জানান, ডা: হামিদ শেখের চিকিৎসকের ব্যক্তিগত কর্মচারীরা চিকিৎসকের সঠিক অবস্থান জানাতে অস্বীকার করায় তার ভাগ্নে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার থেকে বিভিন্ন নামীদামী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখা বন্ধ করেছেন বিশেষজ্ঞ অধিকাংশ চিকিৎসক। নগরীর ল্যাব এইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, অ্যাপোলো ডায়গণষ্টিক সেন্টার, বেলভিউ ডায়গণষ্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়গণষ্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মাহমুদ সেলিম ও ডা: মজিবুর রহমান, গ্যাষ্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞ ডা: আবুল কালাম আজাদ, গাইনী বিভাগের ডা: তানিয়া আফরোজ ও প্রফেসর শিখা সাহা, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা: রনজিৎ খাঁ, নিউরোলোজী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা: আনোয়ার হোসেন বাবলুু, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্বপন কুমার সরকার, নিউরোলজিষ্ট ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন, ডা: আঃ হামিদ শেখ সহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।এ্যাপোলো ডায়গষ্টিক সেন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন চিকিৎসক মৌখিকভাবে বলে গেছেন তারা কয়েকদিন চেম্বারে আসবেন না। তবে এর সঠিক কোন কারন ওই চিকিৎসকরা জানাননি। একই কথা জানিয়ে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, সেখানকার কয়েকজন চিকিৎসক তাদের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে শনিবার হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। রোববার থেকে কয়েকজন চিকিৎসক চেম্বার না করার কথা জানিয়েছেন। বরিশালের সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘একজন চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা, না দেখা এটা সম্পুর্ন তার নিজের ব্যক্তিগত বিষয়। তাছাড়া চিকিৎসকের নিরাপত্তার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত তেমন পদক্ষেপও নেয়া যায়নি’। জরুরী রোগীদের সরকারি হাসপাতাল এবং প্রয়োজনে হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার পরমর্শ দেন জেলা সিভিল সার্জন। বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ বরিশাল এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, কোন কোন ডাক্তার হয়তো চেম্বার বন্ধ করেছেন, কিন্তু আমি সহ অনেকেই তো চেম্বার খোলা রেখেছি। তবে সরকারী হাসপাতাল কিন্তু সকল প্রয়োজনে খোলা রযেছে। এরপরেও সকল চিকিৎসকদের আমরা বলে দিয়েছি যাতে জরুরী কোন রোগী সাফারার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। প্রয়োজনে প্রাইভেট চেম্বারের সামনে মোবাইল নাম্বার লিখে টানি দেওয়া এবং মোবাইলে জরুরী সেবা গ্রহনে সহায়তা করেবেন চিকিৎসকরা।
সূত্র : বরিশাল বাণী
Post Views:
১৭৬
|
|