|
দেবী দূর্গা এবার মর্ত্যলোকে আসবেন ঘটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, বিদায় নিবেন দোলায় চড়ে (পালকি)
হিন্দুদের দূর্গাপূজা ও দূর্গা পূজার ইতিহাস
সুব্রত বিশ্বাস : আধ্যাত্মিক সত্য ও আর্দশের কথা বুকে ধারণ করে কাব্য ও মহাকাব্য রূপ ‘পুরাণ’ ইতিহাসের চেয়েও সত্য-জন্মে চিরকাল হিন্দু ধর্মীয়দের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে ‘দূর্গাপূজা’।সাধকের অন্তরের সংগ্রাম ও বিজয়ের একটি স্থল-রূপ হল ‘দূর্গাপূজা’।কবি কালিদাসের ‘কুমার সম্ভাব’ কাব্যে ব্রহ্মময়ী দেবীর জন্ম বর্ণনায় জানা যায়, দক্ষ রাজকণ্যা সতী যজ্ঞস্থলে দেহ ত্যাগ করার পর হিমালয় রাজ ও তার স্ত্রী মেনকার কণ্যা হয়ে জন্ম নেয়।কৈলাশ পর্বতে জন্ম নেয়া দক্ষ তনয়ার কালের আবর্তে আসুর নিধনের নিমিত্যে রূপান্তর ঘটে দেবী দূর্গায়।অপশক্তির অসুর দমনে দেবী দূর্গা সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে অসুর নামক অপশক্তিকে পরাজিত করে দেবকুল তথা বিপদাকুল সমাজকে চির বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিলেন।
মহালয়া : ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মীয় মতে মহালয়ার দিনে দেশের সকল পূজা মন্ডপে দূর্গা পুজার প্রারম্ভিক পর্বে দেবীদূর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রন জানিয়ে দেবীর আরাধনার সুচণা করা হয়েছে।মহালয়ায় মুলত দেব-দেবীরা দূর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন।
মহাষষ্ঠী : ১৯ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দেবী দূর্গার বোধন,আমন্ত্রন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা।পুঞ্জিকা মতে,দেবী দূর্গা এবার মর্ত্যলোকে আসবেন ঘটকে (ঘোড়ায়) চড়ে,ফলে শস্য ও জল বৃদ্ধি হবে।বিদায় নিবেন দোলায় চড়ে (পালকি) যার ফল হবে মোড়ক।
সপ্তমী : ২০ শে অক্টোবর মঙ্গলবার মাহাসপ্তমীতে সকল পূজা মন্ডপ ও মন্দিরে সব বয়সী নারী-পুরুষ নতুন পোষাক পরে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠবেন।পূজা শুরু সকাল ৮ টায়।এদিন ত্রিনয়না দেবী-দূর্গার চক্ষুদান,নবপত্রিকা প্রবেশ,কল্পনারম্ভ ও বিহিত পূজা শেষে দুস্থঃদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
মহা অষ্টমী : ২১শে অক্টোবর বুধবার ১৬টি উপকরণে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।সকালে ভক্তরা দেবীকে আসন,বস্ত্র,নৈবদ্য,স্নানীয়,পূষ্পমাল্য,চন্দন,ধুপ ও দ্বীপ দিয়ে পূজা করবেন।সন্ধায় পূজামন্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান,রামায়ণপালা ও আরতিসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিজয় দশমি : ২২ শে অক্টোবার বৃহস্পতিবার মাহানবমী ও বিজয় দশমি শোভাযাত্রাসহ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে।
দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা।বিভিন্ন পুরান শাস্ত্রে দুর্গা দেবী আদ্যাশক্তি।মহামায়া,চণ্ডী,উমা,ভগবতী,পার্বতী প্রভৃতি নামে পূজিতা।ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, কালিকা পুরাণ,দেবী পুরাণ,দেবী ভাগবত প্রভৃতি গ্রন্থে দেবী দুর্গার কাহিনী,কাঠামো ও লীলার বর্ণনা পাওয়া এবং সেখানে কিছু কিছু পার্থক্য ও দেখা যায়।শরতের দুর্গাপূজা অর্থাৎ শারদীয় দুর্গোৎসব মূলত মার্কয়ে পুরাণের অন্তর্গত শ্রীশ্রী চণ্ডীগ্রন্থ অনুসারে হয়ে থাকে।চণ্ডীগ্রন্থ খ্রি. তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত এবং ভাগবত পুরাণের আগে রচিত হয়।মার্কয়ে পুরাণের মূল অংশ চণ্ডী।কেউ কেউ মনে করেন,ভারতের নর্মদা অঞ্চল অথবা উজ্জয়িনীতে চণ্ডীর উৎপত্তি।কিন্তু অধিকাংশ গবেষক মনে করেন,চট্টগ্রামের করালডাঙ্গা পাহাড় শ্রীশ্রী চণ্ডীর আবির্ভাব স্থল।‘দূর্গাপূজা’ বৈদিক যুগ থেকেই দুর্গা নাম প্রচলিত।ঋগ্বেদে বিশ্বদুর্গা,সিন্ধু দুর্গা,অগ্নিদুর্গা-এ তিনটি নাম পাওয়া যায়।দুর্গাপূজা কেবল শাক্ত সমাজেই নয়,প্রাচীন বৈষ্ণব সমাজেও অনুষ্ঠিত হয়েছে।মহাপ্রভু চৈতন্যদেব চণ্ডীম-পেই চতুষ্পঠী চালু করেন।বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস, বৈষ্ণবাচার্য্য নিত্যান্দজীও দুর্গা দেবীর ভক্ত ছিলেন।মার্কয়ে পুরাণ মতে,সত্যযুগে রাজা সুরথ,সমাধি বৈশ্য দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে পূজা আরম্ভ করেছিলেন।কৃত্তিবাস রামায়ণ থেকে জানা যায়,ত্রেতা যুগে লঙ্কার রাজা রাবণ দেবী পূজার আয়োজন করে দেবীর আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলেন।অন্যদিকে রাবণ-বধ এবং জানকীকে উদ্ধার করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র বসন্তকালের আগে শরৎকালে দেবী পূজা করেছিলেন।উল্লেখ্য,শ্রী রামচন্দ্র দেবী ভগবতীকে অকালে বোধন করেছিলেন।মূলত: দেবী পূজা বসন্তকালে হয়ে থাকে।সে-ই থেকে শরতে দেবী পূজা অকাল বোধন নামে পরিচিত।শরতের এই পূজাই আমাদের দুর্গোৎসব।শরতের সঙ্গে সঙ্গে হেমন্তে কাত্যায়নী দুর্গা,বসন্তে বাসন্তী পূজারও প্রচলন আছে।বাল্মীকি রামায়ণে দেখা যায়,রামের জয়লাভের জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা দুর্গার স্তব করেছিলেন।মহাভারতে পাওয়া যায়,
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের আগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদেশে অর্জুন দুর্গার স্তব করেছিলেন।দেবী দুর্গা দেবতাদের ঐক্য ও সংহতির প্রতীক।সবচেয়ে প্রাচীন মহিষমর্দিনীর মূর্তিটি পাওয়া যায় পঞ্চম শতাব্দীতে।জানা যায়, প্রথম শতকে কুষান যুগে,পঞ্চম শতকে গুপ্ত যুগে,সপ্তম শতকে পল্লব যুগে এবং ১১-১২ শতকে সেন বংশের আমলে দেবী মহিষমর্দিনী রূপে পূজিত হয়েছেন।কুষান যুগে দুর্গা ছিলেন লাল পাথরের তৈরি।পাল যুগে অর্থাৎ ১২৮৯ সালে দেবী ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্ট।দশভুজা দুর্গার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮ শতকে।বাংলাদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন হয় মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ষোড়শ শতাব্দীতে।মোগল সম্রাটের বিদূষক কুল্লুক ভট্টের পিতা উদয় নারায়ণের পৌত্র অর্থাৎ কুল্লুক ভট্টের পুত্র তাহিরপুরের রাজা (বর্তমান রাজশাহী) কংশ নারায়ণ রায় প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন।পরে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাদুড়িয়ার (রাজশাহী) রাজা জগৎ নারায়ণ প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় করে বাসন্তী দুর্গোৎসব করেন। তারপর থেকে রাজা ভূঁইয়ারা নিয়মিতভাবে দুর্গাপূজা আরম্ভ করেন।১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লবের সময় বিক্রমপুর পরগনার ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ির রাজা ব্রাদার্স এস্টেটের এবং সাটুরিয়া থানার বালিহাটির জমিদার বাড়ির দুর্গাপূজা আয়োজনের ব্যাপকতা আজও কিংবদন্তি হয়ে আছে।ঢাকা শহওে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন ঘটে নবাব সলিমুল্লাহর আমলে।সে সময় সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি ও বিক্রমপুর হাউসে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হতো।১৯২২-২৩ সালে আরমানিটোলার জমিদার ছিলেন বিক্রমপুরের রাজা ব্রাদার্সের বাবা শ্রীনাথ রায়।তার বাড়ির পূজাও সে সময়ে বিখ্যাত ছিল।লালবাগ থানার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পূজা অনেক পুরনো।প্রায় ৮০ বছর ধরে এখানে নিয়মিত পূজা হয়ে আসছে।কিংবদন্তি আছে,ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজিতা দুর্গারই আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নামেই ঢাকার নামকরণ।দুর্গাপূজার কথা বলতে গেলে শাঁখারিবাজার,তাঁতিবাজারের নাম চলে আসে।শাঁখারিবাজারে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু হয় ইংরেজ আমলের একেবারে শেষের দিকে।এককভাবে পূজাটি করেন ব্যবসায়ী সুরেশ্বর ধর।১৯৫৫ সালে বারোয়ারি পূজা হয় বলরাম ধরের বাড়িতে।তাঁতিবাজারের মোক্তার ফণীভূষণ ধর নিজ বাড়িতে এককভাবে পূজা করেন ২৫-২৬ বছর একটানা।১৯৭১-এর পর শৃঙ্খলমুক্ত স্বাধীন মাতৃভূমিতে সর্বপ্রথম মাতৃবন্দনার আয়োজন করে শাঁখারিবাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী নাট্যগোষ্ঠী।মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি গঠিত হয় ১৯৭৭ সালে।দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান ব্যাপক।দুর্গাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত নানা আচার-উপাচার ও ভক্তিশ্রদ্ধায় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অবদান এ পূজাকে সার্বজনীন করে তুলেছে।দুর্গা পূজাতেই আমরা ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে এক হয়ে যাই সবাই।সবার প্রাণের উৎসবে পরিণত হয় দুর্গাপূজা পুরাকালে দেবতারা মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।ব্রহ্মা,বিষ্ণু ও মহেশ্বর’র শরীর থেকে আগুনের মত তেজরশ্মি একত্রিত হয়ে বিশাল এক আলোক পুঞ্জে পরিণত হয়।ঐ আলোক পুঞ্জ থেকে আর্বিভূত এক দেবী মূর্তি।এই দেবীই হলেন দুর্গা।দেবী দুর্গা ত্রি-নয়না বলে তাঁকে ‘ত্রৈম্বক্যে’ বলা হয়।তাঁর বাম চোখ হলো বাসনা (চন্দ্র),ডান চোখ কর্ম (সূর্য) ও কেন্দ্রীয় চোখ হলো জ্ঞান (অগ্নি)।দুর্গার দশ বাহুতে যে দশটি অস্ত্র রয়েছে,সেই অস্ত্রসমূহও বিভিন্ন প্রতীকের ইঙ্গিতবাহী।শঙ্খ ‘প্রণব’ বা ওঙ্কার ধ্বনির অর্থবহতা নির্দেশ করে।তীর ধনুক দেবীর শক্তিমত্তার প্রতীক।মায়ের হস্তে ধৃত বজ্রাগ্নি হলো ভক্তের সঙ্কল্পের দৃঢ়তা।দুর্গা’র হাতের পদ্ম বা ‘পঙ্কজ’ অর্থ হলো পদ্ম যেমন কাদামাটির ভেতর হতে অনাবিল হয়ে ফোটে,তেমনি দেবীর উপাসকরাও যেন লোভ-লালসার জাগতিক কাদার ভেতর হতে আত্মার বিকাশ ঘটাতে পারে।দেবীর তর্জনীতে ধরা সুদর্শন চক্র তাঁর শুভতার লালন ও অশুভের বিনাশের ইচ্ছার প্রকাশ।দুর্গার হাতে ধরা তলোয়ার জ্ঞানের ইঙ্গিত ও ত্রিশুল হলো সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণের প্রকাশ।হিন্দু শাস্ত্র মতে,দৈত্য,বিঘ্ন,রোগ,পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন,তিনিই দুর্গা।দুর্গাপূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল তা জানা যায় না।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন ছিল।সিন্ধু সভ্যতায় (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা) দেবীমাতা,ত্রিমস্তক দেবতা,পশুপতি শিবের পূজার প্রচলন ছিল।দুর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে।তবে কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে,শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গোৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়োজন করেছিলেন।মারকেন্দীয়া পুরান মতে, চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা খ্রীষ্ট্রের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উরিষ্যা) নামে দুর্গাপূজা প্রচলন করেছিল।যদিও প্রাচীন উরিষ্যার সঙ্গে নেপালের পূজার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা জানা নাই।ইতিহাস থেকে যতটুক জানা যায় মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।১১শ শতকে অভিনির্ণয়-এ, মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনীতে দুর্গা বন্দনা পাওয়া যায়।বঙ্গে ১৪শ শতকে দুর্গাপূজার প্রচলন ছিল কিনা ভালভাবে জানা যায় না।১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন।১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল বলে ধারণা করা হয়।১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তি পাড়ায় ১২ বন্ধু মিলে টাকা পয়সা (চাঁদা) তুলে প্রথম সার্বজনীনভাবে আয়োজন করে বড় আকারে দুর্গা উৎসব।যা বারোইয়ার বা বারবন্ধুর পূজা নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়।আধুনিক দুর্গাপূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ম শতকে নানা বাদ্য যন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত,বিশেষ করে জমিদার,বড় ব্যবসাযী,রাজদরবারের রাজ কর্মচারী পর্যায়ে প্রচলন ছিল।পাটনাতে ১৮০৯ সালের দুর্গাপূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে।উরিষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে। ১৯১০ সালে সনাতন ধর্ম উৎসাহিনী সভা ভবানীপুরে বলরাম বসু ঘাট লেনে এবং একই জেলায় অন্যান্যরা রামধন মিত্র লেন,সিকদার বাগানে একই বছরে ঘটা করে প্রথম বারোয়ারী পূজার আয়োজন করে।ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দূর্গা স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে জাগ্রত হয়।বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারী বা কমিউনিটি পূজা হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।আর স্বাধীনতার পর এই পূজা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান উৎসবের মর্যাদা পায়।সরকারি বা জাতীয়ভাবে এই উৎসবকে দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হিসাবে অভিহিত করা হয়।দক্ষিণ এশিয়ায় এটাকে শরৎ কালের বার্ষিক মহা-উৎসব হিসাবে ধরা হয় বলে একে শারদীয় উৎসবও বলা হয়।বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে (১৭৬৭) দুর্গাপূজা হতো বলে লোকমুখে শোনা যায়।ধারণা করা হয়,দশম শতকে এখানে বৌদ্ধ মন্দির ছিল যা পরে সেন আমলে হিন্দু মন্দির হয়েছিল এবং ১১শ বা ১২শ শতক থেকে এখানে কালী পূজার সাথে দুর্গাপূজাও হতো।ইতিহাসবিদ দানীর মতে,প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে রমনায় কালী মন্দির নির্মিত হয়েছিল এবং এখানেও কালী পূজার সাথে দুর্গাপূজাও হতো।
হিন্দ্র সম্প্রদায়ের বারো মাসে ১৩ পর্বণ কথাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য প্রচলিত থাকলেও শারদীয়া বা দূর্গা পূজাই বেশি আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়।
দূর্গার দশ বাহুতে যে দশটি অস্ত্র রয়েছে, সেই অস্ত্রসমূহও বিভিন্ন প্রতীকের ইঙ্গিতবাহী।বিনাকা পানিকি শঙ্কর দিলেন-ত্রি শুল,বিষ্ণু দিলেন-সুদর্শন চক্র,ব্রক্ষ্ম দিলেন কমান্ডুলু অক্ষ মালা,পবন দিলেন-ধনু,বরুন দিলেন-পাশ,ইন্দ্র দিলেন-বজ্র,জম দিলেন-দন্ড,কাল দিলেন-সুদিকন তরোবারী,কুবের তাহাকে-রত্ন অলঙ্কারে সাজিয়ে দিলে,বিশ্বকর্মা দিলেন-অভেদ বর্ম,ধনুর্বান দিলে-সূর্য ও হিমালয় দিলেন-সিংহ,হিন্দু শাস্ত্র মতে, দৈত্য,বিঘ্ন,রোগ,পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন,তিনিই হলেন দেবী দুর্গা।কখন, কোথায় দূর্গা পূজা শুরু হয়েছিল তা জানা যায়নি।ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতা জাতির মধ্যে মাতৃ দেবীর পূজার প্রচলন ছিল।সিন্ধু সভ্যতায় দেবীমাতা, ত্রিমস্তক দেবতা শিবের পূজার প্রচলন ছিল।দূর্গা শিবের অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে অথবা দেবী মাতা হিসাবে পূজা হতে পারে।তবে রামায়নে আছে,শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ সাগর (বগুড়ার) থেকে ১০১ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে সাগর কূলে বসে বসন্তকালে সীতা উদ্ধারের জন্য সর্বপ্রথম শক্তি তথা দুর্গা উৎসবের (বাসন্তি পূজা বা অকাল বোধন) আয়জোন করেছিলেন।মারকেন্দীয়া পুরান মতে,চেদী রাজবংশের রাজা সুরাথা খ্রীষ্ট্রের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে উরিষ্যা) নামে দূর্গা পুজা প্রচলন করেছিল।ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় মধ্য যুগে বাংলা সাহিত্যে দূর্গা পূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।১১’শ শতকে অভিনির্ণয়-দূর্গা ভক্তিতরঙ্গিনীতে দূর্গা বন্দনা পাওয়া যায়।বঙ্গে ১৪শ শতকে দুর্গা পূজার প্রচলন ছিল কিনা ভালভাবে জানা যায় না।১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ কুচবিহারে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন।১৬১০ সালে কলকাতার বারিশার রায় চৌধুরী পরিবার প্রথম দূর্গা পূজার আয়োজন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।১৭৯০ সালের দিকে এই পূজার আমেজে আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিম বঙ্গের হুগলি জেলার গুপ্তি পাড়াতে ১২ জন বন্ধু মিলে টাকা (চাঁদা) তুলে প্রথম সার্বজনীন ভাবে আয়োজন করে বড় আকারে দূর্গা উৎসব পালন করেন।যা বারোইয়ার বা বারবন্ধুর পূজা নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়।দূর্গা পূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ম শতকে নানা বাদ্য যন্ত্র প্রয়োগে ব্যক্তিগত,বিশেষ করে জমিদার,বড় ব্যবসাযী, রাজ কর্মচারিদের মধ্যে প্রচলন ছিল।পাটনাতে ১৮০৯ সালের দূর্গা পূজার ওয়াটার কালার ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে।উরিষ্যার রামেশ্বরপুরে একই স্থানে ৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট আকবরের আমল থেকে দূর্গা পূজা হয়ে আসছে।১৯১০ সালে ভবানীপুরের একই জেলায় প্রথম বারোয়ারী পুজার আয়োজন করে।২০ শতাব্দির প্রথমার্ধে এই পূজা ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারী বা কমিউনিটি পূজা হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।আর স্বাধীনতার পর এই পূজা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান উৎসবের মর্যাদা পায়।সরকারি বা জাতীয়ভাবে এই উৎসবকে দূর্গা পূজা বা দূর্গা উৎসব হিসাবে অভিহিত করা হয়।দক্ষিণ এশিয়ায় এটাকে শরৎ কালের বার্ষিক মহা উৎসব হিসাবে ধরা হয় বলে একে শারদীয় উৎসবও বলা হয়।দূর্গা পূজার ৭ দিন আগেই মহালয়ার মধ্যমে দেবী দূর্গার আগমন জানীয়ে দেয়া হয়,এই উৎসব ৬ দিন স্থায়ীত্ব হয়ে থাকে যেমন: পঞ্চমী,ষষ্ঠি,মহাসপ্তমী,মহাঅষ্টমী,মহানবমী ও বিজয় দশমী।
Post Views:
৩,২৪১
|
|