Current Bangladesh Time
রবিবার সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ১:৫৩ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » স্মৃতিধন্য পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ।। সরকারী করণের দাবি সর্বত্র 
Saturday September 23, 2017 , 10:19 pm
Print this E-mail this

মহারাজ মন্ডল – যিনি নিজেকে নিবেদিত করেছেন মানুষের মাঝের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করার কাজে

স্মৃতিধন্য পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ।। সরকারী করণের দাবি সর্বত্র


শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক : জীবন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে শেষ বিকেলে সবাইকে ভাবতে হয় তার অতীত জীবনের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে।কেন সে এসেছেন এ পৃথিবীতে।আর কতোটাই বা সফল হয়েছে তার এই আগমনের উদ্দেশ্য?যুগে যুগে অনেক মনিষীরা এসেছেন আলোকিত করতে এ ধারিত্রিকে।তেমনি এক জাগ্রত বিবেকের মানুষ মহারাজ মন্ডল।মহারাজ নামটির মধ্যেই নিহিত তার জীবনের মহত্ব এবং কর্মময় জীবনের ব্যাপ্তি।তিনি নিজেকে নিবেদিত করেছেন মানুষের মাঝের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করার কাজে।যারা তার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছেন তারাই কেবল অনুধাবন করতে পেরেছেন মহারাজ স্যার কতোটা উচুঁমানের শিক্ষক ছিলেন।তার আদর্শে তারই পদস্পর্শে জেগে উঠেছে বরিশালের গৌরনদীর মাটি।শিক্ষার আলোয় বিকশিত হয়েছে গৌরনদীর প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রাম।এ অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আজো রয়েছে মহারাজ মন্ডলের স্থান।মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার এক শান্ত-নিভৃত গ্রাম ঘুঙ্গিয়াকুল।চারদিকে তথাকথিত আধুনিকতার ছিটে-ফোঁটা ছাঁপ থাকলেও তার জৌলুস কিংবা আভিজাত্য স্পর্শ করেনি ওই গ্রামকে।সন্ধ্যা হতেই চারদিকে সুনসান নীরবতা।এ গ্রামে রাত নামে নৈঃশব্দের নান্দনিকতায়।গ্রামের খেটে খাওয়া অধিকাংশ লোক রাতের প্রথম প্রহরেই বিছানায় এলিয়ে দেয় ক্লান্ত শরীর।মহারাজ মন্ডলে পিতা বিপিন বিহারী মন্ডল ঘুঙ্গিয়াকুল গ্রামের এক সাধারণ কৃষক।বসতভিটে ছাড়া আবাদি জমি সামান্যতম তার।আর্থিক টানপোড়ন ছিল নিত্যদিনের সাথী।বিপিন বিহারী মন্ডলের সংসারের ঘানি টানতে হয়েছে হাটে চাল বেচা কেনা করে।বিংশ শতাব্দীর বাঙালিরা শিক্ষা-দীক্ষায় ছিলেন অনেক পিছনে।বিপিন মন্ডলও ছেলেকে লেখাপড়া শেখাতে আগ্রহী ছিলেন না।নিজের প্রচন্ড আগ্রহ, একাগ্রতা এবং পিতামহীর একান্ত ইচ্ছায় মহারাজ মন্ডল লেখাপড়া চালিয়ে যান।প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হন বীরমোহন উচ্চ বিদ্যালয়ে।একদিকে সংসারের লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আর্থিক দৈন্যতাও বাড়তে থাকে লাগামহীনভাবে।রুদ্ধ হয়ে যেতে থাকে মহারাজ মন্ডলের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সাধ।যুবক মহারাজ বাবাকে চালের ব্যবসায় সহযোগীতা করেন।পড়ার খরচ জোগানের জন্য সামান্য বেতনে প্রাইভেট পাড়োনো শুরু করেন।ক্লাসেও উপস্থিত হন রীতিমত।৪৭-এর দেশ বিভাগ অনেকের মতো মন্ডল পরিবারেরও ভাগ্য ফেরায়নি।দারিদ্রতার কষাঘাত প্রত্যয়দীপ্ত মহারাজকে করেছে ক্লান্ত, করেছে বিচলিত কিন্তু বিচ্যুত করতে পারেনি তার লক্ষ্য থেকে।১৯৫০ সালে মহারাজ মন্ডলের জীবনের এক স্মরণীয় বছর।ওইবছর তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেন।অধিক আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে মহারাজ মন্ডল মাদারীপুর নাজিমউদ্দিন কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন।তৎকালীন সময় ঘুঙ্গিয়াকুলের সাথে মাদারীপুরের যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিলো নৌকা।প্রতিদিন সাত মাইল নৌকা চালিয়ে কলেজে আসতে হতো মহারাজ মন্ডলকে।প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে রওয়ানা করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা, আবার কখনো রাত।প্রত্যাহিক এ কঠোর প্ররিশ্রম দমাতে পারেনি মহারাজ মন্ডলকে।বরং তাকে করেছে আরও উৎসাহী ও মনোযোগী।ফলস্বরূপ ১৯৫২ সালে তিনি আইকম প্রথম বিভাগে পাশ করেন।একদিকে সংসারের চরম আর্থিক অনটন, অন্যদিকে নিজের আয়ে পড়ালেখা চালানো।মাঝে মাঝেই দোটানায় পড়তে হতো তাকে।এছাড়া সংসারের বড় ছেলে হিসেবে গুরুদায়িত্ব তার ওপর।অগত্যা টেকেরহাটের একটি বিদ্যালয়ে মাসিক ৭৫ টাকা বেতনে চাকুরি নেন।এই মহান শিক্ষকের শিক্ষকতা জীবন এখান থেকেই শুরু।এখানে শিক্ষকতার পরে তিনি চলে আসেন বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার কার্ফা উচ্চ বিদ্যালয়ে।একদিকে অভিভাবকত্বের গুরুদায়িত্ব, অন্যদিকে নিজের উচ্চশিক্ষা গ্রহনের তীব্র আকাঙ্খা।জ্ঞানপিপাসু মহারাজ মন্ডল সবদিক সামলান সুদক্ষ কারিগর রূপে।কার্ফা স্কুলের শিক্ষক থাকাকালীন তিনি ১৯৫৬ সালে চাখার কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাশ করেন।১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সালে মহারাজ মন্ডল আসেন নতুন কর্মস্থলে।বর্তমান ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী নামকস্থানে জমিদার মোহন লাল সাহার প্রতিষ্ঠিত গোলপাতার দোচালা লম্বা ঘর পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।সামনে বিস্মৃত মাঠের কোল ঘেঁষে প্রবাহিত বড় খরস্রোত খাল।এ মনোরম পরিবেশ মহারাজ মন্ডলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক অমূল্য রতন ভৌমিকের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন মহারাজ মন্ডল।ধন্য হন এই জ্ঞানতাপসের স্পর্শে।শুরু হয় তার দীর্ঘ পথচলা।১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল।গোলপাতার ঘর থেকে সুরম্য অট্টালিকা।ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা দুই শতাধিক থেকে ২০০০-এর কাছাকাছি।এসবই হয়েছে অনেক কঠোর পরিশ্রম, সদিচ্ছা ও আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে।আর পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ উত্তরণের অগ্রনায়ক ছিলেন মহারাজ মন্ডল।জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন তিনি।শিক্ষার উৎকর্ষ সাধন ও প্রসারে তিনি এক নিবেদিত প্রাণ।কিছু দিতে হলে নিজেকেও হতে হয় উপযুক্ত।১৯৬৫ সালে ঢাকা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে মহারাজ মন্ডল বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন।এখানেও তিনি মেধারদ্যুতি ছড়িয়েছেন।লাভ করেছেন প্রথম শ্রেণীতে যষ্ঠ স্থান।আধুনিক শিক্ষার প্রতি অনুরাগী মহারাজ মন্ডল বৃটিশ কাউন্সিল থেকে ইংরেজীতেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীকে দেখেই তার সুপ্ত প্রতিভা আঁচ করতে পারতেন তিনি।তৎকালীন যশোর বোর্ডের মধ্যে একমাত্র বেসিক ইংরেজী গ্রামার বইয়ের লেখক ছিলেন মহারাজ মন্ডল।শিক্ষাকতার ৪০ বছরে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি করেছেন পিতৃ স্নেহে লালন-পালন।প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকহীন অনেক ছাত্র-ছাত্রীর তিনি হয়েছেন অভিভাবক।হতাশার অন্ধকারে তিনি সর্বদা তাদের যুগিয়েছেন আশার আলো।নিজের কামনা-বাসনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবন জ্ঞান সাধনায় ব্যাপৃত এই মহান পুরুষ জীবন সায়াহ্নে এসে পাননি কিছুই।তিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে।এই আলোকিত মানুষটির মহাপ্রস্থানঘটে ২০০৫ সালের ৯ জুলাই।দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ঢাকায় লালবাগের ভাড়াটিয়া বাড়িতে তিনি পরলোকগমন করেন।ছাত্র-ছাত্রীদের অনুরোধে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার সমাধির পাশে স্কুল প্রাঙ্গণেই সমাধিস্থ করা হয় মহারাজ মন্ডলকে।এই মহান শিক্ষাগুরুর কর্মের নিষ্ঠা ও আদর্শকে জাগ্রত রেখে আজও এগিয়ে যাচ্ছে প্রয়াত মহারাজ মন্ডলের সেই স্মৃতিধন্য পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।১৯৮৮ সালে তৎকালীণ খুলনা বিভাগের (বর্তমান খুলনা ও বরিশাল বিভাগ মিলে) শ্রেষ্ঠ বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বিদ্যালয়টি নির্বাচিত হয়।বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন মহারাজ মন্ডলের ছাত্র-ছাত্রীরা।শুরু থেকেই পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর কৃতিত্ব অর্জন করে আসছে।এসএসসি ও জেএসসির ফলাফল বিবেচনায় জেলার মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি বরাবরেই সুনাম অর্জন করে আসছে।অতীতে যশোর বোর্ডের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাধিকবার প্রথমস্থান অধিকার করেছে।তারই ধারাবাহিকতায় এখনও মাধ্যমিক পরীক্ষায় গৌরনদীসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুলোর মধ্যে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ এবং পাশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে।শুধু শিক্ষা নয়, সাহিত্য-সাংস্কৃতিসহ সবক্ষেত্রেই পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুনাম গোটা দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে।বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘোষণা করার পর শিক্ষা-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে একনামে মডেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।২০১২ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্’র একান্ত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টিকে পালরদী মডেল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়েছে।এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে মাধ্যমিকে ১৭ শ’ ছাত্র-ছাত্রী এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।সারাদেশের মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারী ঘোষণা করা হলেও আজও প্রাচীণতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারী ঘোষণা করা হয়নি।ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠকে জরুরী ভিত্তিতে সরকারীকরণের জন্য গৌরনদীবাসী প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 




Archives
Image
বাংলাদেশকে ২০২ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র
Image
ত্রাণের টাকা কোথায়, জানালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
Image
বরিশালে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল শুরু
Image
হোটেলে ঝুলছিল তরুণীর মরদেহ, পালানোর সময় স্বামীসহ আটক ২
Image
বৈরী আবহাওয়ায় বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ