|
মহান আল্লাহ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিক – মোঃ সুরুজ্জামান
স্মৃতিচারণ-৪ : একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক মো: আসরাফ আলী বাবলু
স্মৃতিচারণ – ৪ : ১৯৮০ সালের কোন এক ঘটনা। বরিশাল জিলার জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন জনাব মো: খোরশেদ আলী। তাঁর ছেলে আসরাফ আলী বাবলুর স্কুলের Test পরীক্ষা ( SSC ‘র বাছাই পরীক্ষা/৮০) সমাপ্তির পর পরই জজ সাহেবের সরকারীভাবে বদলীর আদেশ হলো হাইকোর্টে সহকারী রেজিস্টার হিসেবে। যেহেতু পদোন্নতি তাই যেতেই হবে। তো, আমার মনে হলো যে, ছেলেটির এই ক্রান্তিলগ্নে বাবার অন্যত্র বদলী হওয়াতে তার পড়াশুনার কিছুটা সমস্যা হতে পারে ভেবে আমি স্বেচ্ছায় নিজের বিবেকের তাড়নায় আত্মসম্মান ত্যাগ করে একজন মেধাবী ছাত্রের জন্য কিছুটা সহায়ক ভূমিকা রাখা মনে করে মাননীয় জজ সাহেবের সরকারী বাসভবনে গমণ করি। বাসায় ঢুকেই সালাম বিনিময় পর্ব শেষে মাননীয় জজ সাহেবকে আমার আগমণের অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করি এই বলে যে, “স্যার, বাবলু আপনার ছেলে আর আমার একজন রত্নছাত্র। আসন্ন SSC পরীক্ষাতে যশোর শিক্ষা বোর্ডে মেধা তালিকায় থাকার সমূহ সম্ভাবনা। এমনই এক সময়ে আপনার অন্যত্র বদলী। সবই পরিবর্তন। যেহেতু আপনার বদলী সেহেতু ছেলেও আপনার সাথেই যেতে হবে। এতে ছেলেটির পড়াশুনার কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা, আমি মনে করি। তাই আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবিনয়ে বলতে চাইছি যে, আপনি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বদলী হয়েছেন, যেতেই হবে। ওকে আমার তত্বাবধানে আমারই বাসাতে SSC পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেখে যাবেন। ওর সব ব্যবস্থাই আমি করবো নিজ দায়িত্বে। খাওয়া -দাওয়া ও থাকার সুব্যবস্থা (অবশ্য আমার সাধ্যমত)। পরীক্ষা শেষে ও আপনার কাছে চলে যাবে। এই ব্যাপারে আমার কোন ব্যক্তি স্বার্থ নেই। ছেলেটির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মনে রেখেই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। আশা করি আপনি এবং আপনার পরিবার এতে সন্মতি জ্ঞাপনে বাঁধা থাকবনা। মানে আপনারা রাজী আছেন। এই কথা বলার সাথে সাথে মাননীয় জজ সাহেব বসা থেকে উঠেই আমাকে জড়িয়ে ধরে, কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন (এখানে কিছু অব্যক্ত কথা অব্যক্তই থাকলো)। তারপর উনি উনার সিটে বসে আমাকে বললেন যে, এদেশে এমন শিক্ষকও আছেন যিনি কিনা, নিজের আত্মসম্মানের কথা না ভেবে সে তার এক ছাত্রের ভালোর জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারে ? আপনি সত্যিই একজন ………………………….
…(কথাগুলো বলা গেলো না বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত)। আমি শুধু বললাম না স্যার, আমি শুধু একজন শিক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলাম মাত্র। তারপর স্যার তার ছেলের যাবতীয় সব সুযোগ আগে বাগেই সমাধান করে রেখেছেন। আমার এধরণের আচরণে উনি খুবই সন্তুষ্ট হলেন এবং আমার শোধালেন, ভবিষ্যতে যদি কখনও প্রয়োজন পড়ে তখন যেন উনার স্মরণাপন্ন হই। আমি বললাম, ঠিক আছে। এখন স্যার আসি, আমার জন্য দোয়া করবেন বলে এবং সালাম পর্ব শেষে বিদায় নিয়ে নিজ বাসায় চলে আসি। এতোক্ষণ যে ছেলেটির বিষয়ে আলোকপাত করলাম তার বর্তমান অবস্থান হলো :– Civil Engineering পাশ করে বর্তমানে BUET-এর একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক মো: আসরাফ আলী বাবলু। সে ১৯৮০ সালে SSC পরীক্ষাতে যশোর বোর্ডে যৌথ মেধা তালিকায় ১৪ তম স্থান পেয়েছিল। বাবলু, তুমি যেখানে যে অবস্থাই থাকো না কেন ভালো থেকো প্রাণভরে দোয়া করি। মহান আল্লাহ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিক। আমীন !!
শুভেচ্ছান্তে,
মোঃ সুরুজ্জামান, সাবেক শিল্পকলা শিক্ষক, বরিশাল জিলা স্কুল ও অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক, I.E.T.
সরকার উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ।
তারিখ :– ৫ অক্টোবর’১৮ ইং,
নারায়ণগঞ্জ থেকে।
Post Views:
১,৮৭৪
|
|