Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার জুলাই ১৫, ২০২৫ ৩:০২ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করতে বড়দের বদলাতে হবে 
Saturday November 25, 2017 , 9:13 pm
Print this E-mail this

পথে যাতে কোনো শিশুকে থাকতে না হয়, কেননা, সে জানে রাস্তার জীবনটা কতটা কষ্টের

শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করতে বড়দের বদলাতে হবে


শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে হলে সবার আগে বড়দের আচরণ ও মনমানসিকতা পাল্টাতে হবে। শিশুরাও রাষ্ট্রের নাগরিক, তাই তাদের উপযোগী অবকাঠামো তৈরিতে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।

আজ (২৫-১১-১৭) শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো আয়োজিত ‘আত্মনির্ভরশীল শিশু বেড়ে উঠুক দৃঢ়তায়’ শীর্ষক বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এ বৈঠক সহায়তা করে ডানো। এতে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

বৈঠকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ মোট তিন শিশু বক্তব্য দেয়। তারা জানায়, নিরাপত্তার অভাব, খেলার মাঠসহ অবকাঠামোগত সমস্যা, স্কুলে শিক্ষকদের কাছ থেকে পাওয়া শাস্তি, পরীক্ষায় এ প্লাস পেতেই হবে—মা–বাবার এ আবদার পূরণ করতে গিয়ে তারা তাদের শৈশব হারিয়ে ফেলছে। তারা বড়দের কাছে আনন্দময় শৈশব ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

বৈঠকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা খুলে বলে জান্নাতুল ফেরদৌস। সে জানায়, তার বাবা ও মা দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। এরপর তার ঠাঁই হয় চাচার বাড়িতে। তবে তাঁরাও তাকে বেশি দিন আশ্রয় দিতে চাননি। তারপর জান্নাতুল পথে নামে। রাজধানীতে তার নাম হয় পথশিশু। রাস্তায় রাত কাটাতে গিয়ে জান্নাতুলকে নানা নিপীড়নের শিকার হতে হয়। তবে চার বছর ধরে জান্নাতুলের নতুন ঠিকানা হয়েছে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট নামের একটি সংগঠনের আশ্রয়কেন্দ্র। এখানে সে পড়াশোনা করছে। কিন্তু সে অতীতকে ভুলতে পারে না। কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে জান্নাতুল। তার চোখের পানি বৈঠকে উপস্থিত অন্যদের মনকেও ভারাক্রান্ত করে তোলে। জান্নাতুলের একটিই আবেদন—পথে যাতে কোনো শিশুকে থাকতে না হয়। কেননা, সে জানে রাস্তার জীবনটা কতটা কষ্টের।

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার শিশু আহ্বায়ক আদিব কিবরিয়া বলে, চারপাশে গাড়ির কালো ধোঁয়া, অপহরণ–আতঙ্ক, স্কুলে বেতের বাড়ি, বাড়িতে জিপিএ–৫ পেতে হবে বলে মা–বাবার চোখ রাঙানি, ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়া, স্কুলে সিমেন্টের মাঠে খেলতে গিয়ে পা ছিলে যাওয়া, স্কুলের পর কোচিংয়ে দৌড়ানো…এভাবেই বড় হতে হচ্ছে শহুরে শিশুদের। শিশুরা চায় ভেজালমুক্ত খাবার, খেলার জন্য ঘাসের মাঠ, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভালো ও সুস্থভাবে বাঁচার পাশাপাশি চায় আনন্দময় শৈশব।

ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্সের চাইল্ড পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার মাহমুদা সিদ্দিকা বলেন, একটি শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই নতুন শ্রেণিতে প্রাইভেট পড়ার জন্য শিক্ষকের কাছে নাম লেখাতে হচ্ছে শিশুদের। তাদের বিনোদনের জন্য কোনো ব্যবস্থা ও সময় দেন না অভিভাবকেরা।

করণীয়

বর্তমানে শিশুরা যে ধরনের পরিবেশে বড় হচ্ছে, তা শিশুদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বলে একমত পোষণ করেন বৈঠকের আলোচকেরা।

কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, শিশুর ব্যক্তিত্ব তৈরি হয় শিক্ষণপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। শিশুর মগজ খালি বা ফাঁকা ক্যাসেটের মতো। চারপাশ থেকে শিশু যা শেখে তা মগজে গেঁথে যায়। শিশুর মধ্যে রাগ, হিংসা বা নেতিবাচক দিক থাকলে তাকে তা বুঝতে দিতে হবে। তারপর শিশুকে সে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করতে হবে। উন্নত দেশে শিশুর পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত এ কাজটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিশুদের চরিত্র গঠন করে দেওয়ার কাজটি করে বলে সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন বেশি থাকে। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বয়সে শিশুদের চরিত্র গঠন নয়, কতগুলো বই পড়ানো হয়।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুদের ব্যক্তিত্ব যদি ইতিবাচকভাবে গড়ে তোলা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের বড় করা কঠিন হয়ে যায়। তাঁর মতে, কোনো মা সন্তানের খারাপ চান না। কিন্তু ওই মা অনেক সময়ই জানেন না সন্তানের জন্য ভালো কোনটা।

জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফের শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মহসীন বলেন, শিশুকে নিজেকে প্রকাশ করা, সিদ্ধান্ত নিতে পারা, পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারার শিক্ষাগুলো প্রথম দেয় পরিবার। শিশুকে প্রশ্ন করার অধিকার দিতে হবে। কিন্তু বড়রা এটা পছন্দ করেন না। শিক্ষার্থী ভুল করলেই বড়রা বলেন, তোমার মাথায় তো গোবর। এতে শিশুটিকে পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বড়দের মনমানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এর পরেই আসে অবকাঠামো ও বাজেট বরাদ্দের কথা। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্যদের একটি অংশ ব্যবসায়ী, যাঁরা শিশুর কথা চিন্তা করবেন না এটাই স্বাভাবিক।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সুলতানা আলগিন বলেন, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে পারিবারিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন মানসিক চাপের কারণে শিশুদের মধ্যে স্কুলভীতি, কথা বলতে না পারা, হাঁটতে না পারাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বড় হলেও বিভিন্ন চাপের মধ্যে পড়লে সমস্যাগুলো আবার দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ প্যারেন্টিংয়ের বিষয়ে জোর দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্যোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের সহযোগী অধ্যাপক শাহানা নাসরীন বলেন, সুস্থ ব্যক্তিত্ব নিয়ে বেড়ে উঠতে পারছে না বলেই শিশু–কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকেরা মনে করেন, শিশুরা খেললে সময় নষ্ট হবে। কিন্তু এই খেলার মধ্য দিয়েও যে শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন হয়, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।

শিশুরা যন্ত্রণাদায়ক শৈশবের মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে উল্লেখ করে সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রকল্প পরিচালক (ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা) মেহেরুন নাহার বলেন, শিশুরা সারাক্ষণ না শুনতে শুনতে বড় হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুলে শিশুর মাতৃভাষা ও পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিশুরা অন্যায় করলে আগে প্রতিবেশীরাই শাসন করতেন, কিন্তু এখন এই প্রতিবেশীদের আর পাওয়া যাচ্ছে না।

সেভ দ্য চিলড্রেনের পরিচালক (চাইল্ড রাইটস, গভর্ন্যান্স ও চাইল্ড প্রোটেকশন) লায়লা খন্দকার বলেন, সবার আগে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর সুরক্ষায় আইন, নীতিমালার অভাব নেই, তবে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেটসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে বড়দের সচেতন হতে হবে, কেননা শিশুরা বড়দের দেখেই শেখে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ থেকে ভারোত্তলনে বেশ কয়েকবার সোনাজয়ী মাবিয়া আক্তার শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার জন্যও সময় দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন। পরীক্ষায় এ প্লাস পেতেই হবে, না পেলে ভবিষ্যতে ওই শিশু কিছু হতে পারবে না, অভিভাবকদের এ ধরনের মনমানসিকতা পাল্টানোর আহ্বান জানান তিনি।

অভিনেত্রী মৌটুসি বিশ্বাস বলেন, আশপাশের পরিচিতজনেরাই শিশুদের নির্যাতন করছে। বর্তমানে নির্যাতনের মাত্রাও বেড়েছে। কিন্তু তাই বলে শিশুকে ঘরে বন্দী করে রাখলে চলবে না। শিশুকে প্রতিবাদ করতে শেখাতে হবে। তাকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে হবে। মৌটুসি আরও বলেন, তিনি তাঁর সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে খেলার ছলেই মার্শাল আর্ট শেখাচ্ছেন।

সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো




Archives
Image
বেনজীরের যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়ার সম্পদ ক্রোক, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Image
আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন-পিরোজপুরে নাহিদ ইসলাম
Image
বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা : একাই দুই আসনে লড়বেন ফয়জুল করীম
Image
বরিশালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
Image
তথ্য ফাঁসের অভিযোগ, বরিশালে ডিবি কনস্টেবল ফারুক ক্লোজড