Current Bangladesh Time
সোমবার জুলাই ১৪, ২০২৫ ৯:০১ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » রাতের আঁধারে বরিশাল কলেজের পুকুর দখল! 
Tuesday August 20, 2019 , 9:17 pm
Print this E-mail this

রাতের আঁধারে বরিশাল কলেজের পুকুর দখল!


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তর বাসভবন সম্মুখে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজ পুকুরটি দখলে দুষণে আজ ডোবায় পরিণত হয়েছে। বরিশাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষদের হাতে পুকুরের বেশিরভাগ ভরাট হয়েছে। বর্তমান অধ্যক্ষ রাতের আঁধারে পুকুরের বাকি অংশ ভরাটের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত সোমবার রাতে সেখানে ইটের সুরকি, খোয়া ফেলে ভরাট চলছে। এর আগে কলেজের সাবেক এক অধ্যক্ষ পুকুরের ভরাট করা অর্ধেকের ওপর টিনের মসজিদ নির্মাণ করেছেন। পরে সেখানে পাকা মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন আরেক অধ্যক্ষ মো: মজিবর রহমান। ওই মসজিদের কাজ সমাপ্ত করেন আরেক অধ্যক্ষ অধ্যক্ষ খন্দকার অলিউল ইসলাম। তিনিই পুকুরের বাকি অংশ ভরাট কাজ শুরু করেন। ভরাটের অংশ হিসেবে তিনি পুকুরের পশ্চিম দিকে সুউচ্চ প্রাচীর তুলে দিয়েছেন। যাতে ভেতরে ভরাট হলেও বাইরে থেকে সেটা দেখা না যায়। এরপর ভেতরে আস্তে আস্তে চলে ভরাটের কাজ। সোমবার রাতে স্থায়ীভাবে বাকি অংশ ভরাট কাজ শুরু করেন বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক। পুকুরটির অর্ধেক ভরাট করে যেমন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, তেমনি বাকী অংশ রাস্তার নামে পাইলিং করে ভরাট করা হয়েছে। এটিকে দেখলে এখন আর বোঝার উপায় নাই এক সময় এই পুকুরটিই এলাকার মানুষের পানীয় জলের অভাব পুরণ করত। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর বাড়ির সম্মুখে নিজের ব্যবহার ও এলাকাবাসীর সুবিধার কথা চিন্তা করে পুকুরটি খনন করেছিলেন। ২০১০ সালে নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনের সামনে থাকা পুকুরটি রক্ষায় উদ্যোগ নেন ততকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। ২০১২ সালে কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: মজিবুর রহমান পুকুরের বাকি অংশ ভরাটের জন্য চেষ্টা চালান। তখন নাগরিকদের বাধার মুখে পড়ে তিনি সেখান থেকে সরে আসেন। পরে অবশ্য ২০১৮ সালে পুকুরটি মৃত্যু ঘটাতে উঠে পড়ে লাগেন তখনকার অধ্যক্ষ খন্দকার অলিউল ইসলাম। তিনি পুকুরের বাকি অংশে রাস্তা নির্মাণ এবং অনেকটা মাটি ও খোয়া দিয়ে ভরাট করেন। আর বর্তমান অধ্যক্ষ সম্পূর্ণভাবে পুকুরটিকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সংবাদকর্মীদের বলেন, কলেজের কিছু রাবিশ (খোয়া) ছিল সেগুলো পুকুরের পাশে রাখা হয়েছে। ওই পুকুর ভরাটের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরিশালের একাধিক প্রবীণ সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিদের দেয়া তথ্যানুযায়ী অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৯২৩ সালে মারা যাবার পর ১৯৫৫ সালে তার একমাত্র ওয়ারিশ ভাতিজা সরল দও দেশ ত্যাগ করলে অশ্বিনী দত্তর বাসভবনটি ১৯৫৭ সালে ব্রজমোহন কলেজের ‘অশ্বিনী কুমার কসমোপলিটন ছাত্রাবাস’ হিসেবে পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময় ১৯৬২ সালে শিক্ষাবিদ জয়ন্ত কুমার দাস, হোসেন আলী ও অন্যান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বদের সহযোগিতায় নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেশ স্বাধীন হবার পর অশ্বিনী কুমারের নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। কিন্তু ওই দাবি উপেক্ষিত হয়ে কলেজটির নামকরণ করা হয় বরিশাল কলেজ নামে। এরপর কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনী দত্তর মুল বাসভবনটি ভেঙে দেয়। এসময়ও বাসভনটি রক্ষার জন্য বরিশালে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ ও আন্দোলন সংগ্রাম করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। এরপর ১৯৮৭ সালে বরিশাল কলেজ সরকারিকরণ করা হলে কর্তৃপক্ষ কলেজ ক্যাম্পাসে থাকা প্রেয়ার রুমটি কলেজের বাইরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তখনই অশ্বিনী দত্তর বাসভবন সম্মুখের ঐতিহাসিক পুকুরটির অর্ধেক ভরাট করে ফেলে। তখনও বরিশালবাসীর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভরাটকৃত অংশে নির্মাণ করে মসজিদ। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, একদিকে সরকারি বরিশাল কলেজের সামনে থাকা বৃহদাকার পুকুরের অর্ধেকে রয়েছে মসজিদ। তার পাশে বড় একটা অংশ রাস্তার নামে ভরাট করা হয়েছে। ওই রাস্তার পরও আরও কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ফুট ভরাট করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে বাকি অংশ ভরাটের জন্য ইটের গুড়া ফেলা শুরু হয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় এই পুকুর পাড়ে এবং অশ্বিনী দত্তের বাসভবন সম্মুখে প্রাদেশিক সম্মেলন অনিুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনে মাওলানা শওকত আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও সুরেন্দ্রা নাথ ব্যানার্জীসহ শত মনিষীর পদভারে ধন্য হয়েছিল এই পুকুর ও ভাসভবন চত্বর। এসব বিশিষ্টজনরা এই পুকুরের পানি ব্যবহার করেছেন। সেদিক থেকে এই পুকরটি ইতিহাসের অনেক কিছুর সাক্ষী। নগরবাসী পুকুরটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য বরিশাল কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশনের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ইতিপূর্বে নগরীর সকল পুকুর খাল সংষ্কর ও সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। নদী-খাল-পুকুর বাঁচাও আন্দোলন কমিটিও এ পুকুরটি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছে। পুকুরটির বাকি অংশ ভরাট বরে ছাত্রাবাস করার উদ্যোগ নিলে তীব্র আন্দোলন করে বারিশালের সাধারণ মানুষ। শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, অশ্বিনী দত্তের বাসভবন গেছে পুকুরটিও যাবার পথে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্র শেখ হাসিনা জলাশয় ভরাট না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও বরিশাল নগরে অনেক পুকুর ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমরা অশ্বিনী কুমার দত্তের ওই পুকুর রক্ষায় নাগরিকদের সঙ্গে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কাছে জোর দাবি জানাই। প্রবীণ সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, এক সময় আমরা উদ্যোগ নিয়ে নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম অশ্বিনী দত্তের বাড়িতে। এখন সে বাড়িটি নেই। সাক্ষী হয়ে বেঁচে আছে পুকুরটির একাংশ। তাও যদি ভরাট করা হয় তাহলে আর থাকল কি? যে কোন মূল্যে এই পুকুরটি রক্ষা করা প্রয়োজন। পুকুরটি ভরাট না করার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান। পশাপাশি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ্’র হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।




Archives
Image
বেনজীরের যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়ার সম্পদ ক্রোক, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Image
আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন-পিরোজপুরে নাহিদ ইসলাম
Image
বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা : একাই দুই আসনে লড়বেন ফয়জুল করীম
Image
বরিশালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
Image
তথ্য ফাঁসের অভিযোগ, বরিশালে ডিবি কনস্টেবল ফারুক ক্লোজড