|
বিগত কয়েক বছরে মাল্টার বিপ্লব ঘটায় চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করছেন
মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী পিরোজপুরের বেকার যুবকরা
পিরোজপুর জেলায় বিগত কয়েক বছরে ঘটেছে মাল্টার বিপ্লব। এ বিপ্লবকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা। তারা অাত্মনির্ভরশীল হতে ফল চাষে এগিয়ে আসায় এখানে গড়ে উঠেছে মাল্টা বাগানসহ অসংখ্য ফলের বাগান। ফলে ঘুচতে শুরু করেছে বেকারত্ব, যুবকরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী। এ জেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করলে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া যাবে বলে মনে করে কৃষি বিভাগ। পিরোজপুর সদর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের শিক্ষক অমলেশ, কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া হুমায়ুন কবির এবং বরিশাল বেতারে কণ্ঠশিল্পী গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাববাড়ির অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি জানান, জেলার নাজিরপুর ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলী জমিতে এখন ফলদ বৃক্ষের পাশাপাশি সবজি ও মাছ চাষ হচ্ছে। তারা একই জমিতে বাণিজ্যিকীকরণের কথাও ভেবে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছেন। দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফল রয়েছে এ বাগানগুলোতে। বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে সুস্বাদু মাল্টা ফল। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছে মাল্টা বাগান দেখতে। বাগান সম্পর্কে অমলেশ রায় জানান, জমিতে ধান উৎপাদন আশানুরূপ না হওয়ায় ফল চাষ করেন। ২০০৮ সালে বাগানের কাজ শুরু করেন। প্রায় ১৩ বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৫শ’ মাল্টা চারার পাশাপাশি লিচু, আম, আঙুর এবং বাতামিসহ বিভিন্ন ফলের চারা রয়েছে। গতবছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে মাল্টার ফলন ভালো হয়েছে। বাড়ি থেকে বা পাইকারি প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হয় ছোট ১২০ টাকা ও বড়টি ১৫০ টাকা দরে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা ১৪০-১৭০ টাকা। তিনি জানান, মাল্টাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান তৈরি করতে মোট খরচ হয়েছিল প্রায় ৭ লাখ টাকা। প্রতিবছর বাগান পরিচর্যা, শ্রমিক ও অন্যান্য কাজে ব্যয় হয় প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। আর একমৌসুমে মাল্টা বিক্রি করে আয় হয় সোয়া লাখ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ আসে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। শেখ হুমায়ুন কবির (৪৬) জানান, বিদেশি মাল্টার তুলনায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় স্থানীয় বাজারে মাল্টার চাহিদাও অনেক। মাল্টা গাছ থেকে গ্যাফতিয়ের মাধ্যমে এক থেকে দেড় লাখ চারা সংরক্ষণ করে বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য ফসল সর্বোচ্চ ডিএস ৪ মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। কিন্তু মাল্টা গাছ সর্বোচ্চ ১২ ডিএস মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। যে কারণে মাল্টা চাষ করা সম্ভব। মাল্টার কলম করা হয় বাতাবি লেবু গাছের সাথে। আর বাতাবি লেবু দেশের সর্বত্র হওয়ায় সারা দেশে মাল্টা গাছ খুব সহজেই জন্মানো সম্ভব। সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান জানান, গাববাড়ির অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি শুরুতে ২২৫টি মাল্টা চারা রোপণ করেন। এবছর ৩৬৫টি গাছের বাগানে ৮৫-৯০ মণের মতো মাল্টার ফলনে তিনি এখন এ উপজেলার রোল মডেল। এছাড়াও তার বাগানে রয়েছে চাইনিজ কমলা, বাতাবি ও অন্য জাতের মাল্টা চারা ও ফল গাছ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এমডি আবুল হোসেন তালুকদার জানান, এ অঞ্চলের মাটি মাল্টা চাষে খুবই উপযোগী। বিগত কয়েক বছরে মাল্টার বিপ্লব ঘটায় চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করছেন। জেলায় বর্তমানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৩১৯টি বাগান রয়েছে।
সূত্র : জাগো নিউজ ২৪.কম
Post Views:
৩৮৮
|
|