নিহত শান্তিরক্ষী কালামের লাশ পিরোজপুরে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন
মালিতে নিহত কালামের বাড়ি পিরোজপুর জুড়ে চলছে শোকের মাতন
আফ্রিকার মালিতে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্রোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম আজাদের লাশ পিরোজপুরের নাজিরপুরের কলারদোয়ানিয়ায় নিজ বাড়িতে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম নিহত কালামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসে প্রথম জানাযা শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর আওলাদ হোসেন এবং মালিতে কর্মরত শান্তিরক্ষী মেজর শাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা থেকে তার লাশ নাজিরপুর স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তারা নিহত কালামের লাশ তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেন। এরপর সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে করে কালামের লাশ তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় জানাযা শেষে বেলা ২টায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় কালামের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার আফ্রিকার মালিতে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্রোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে সেনাবাহিনীর ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম আজাদসহ ৪ শান্তিরক্ষী নিহত হন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের মৃত. মকবুল হোসেনের ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র সন্তান আবুল কালাম আজাদ। আজাদের বড় তিন বোনের মধ্যে বড় বোন সুফিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। সংসারের অভাব-অনটনকে মুক্তি দিতে কলারদোয়ানিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করে ১৯৯২ সালের ২২ আগষ্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিলেন কালাম। ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর কালামের মা মৃত্যুবরণ করেন। এই শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ৩১ দিন পর চিরদিনের জন্য বাবাকেও হারান। ১৯৯৮ সালের ২৭ জুলাই একই উপজেলার লেবুজিলবুনিয়া গ্রামের শাহজাহানের কন্যা খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন কালাম। দাম্পত্য জীবনে তাদের আশনিকা আজাদ ইমা (১৪) ও ফারদিন আহম্মেদ (৯) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। ইমা স্থানীয় মুগারঝোর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ও ফারদিন বৈঠাকাটা মাতৃছায়া কিন্ডার গার্টেনের ৪র্থ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছে। গত বছরের ২০ মে এক বছরের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যায় কালাম। নিহত আবুল কালাম আজাদের স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শান্তিরক্ষী মিশনে গিয়ে ভালই কাটছিল তার। প্রায় সময় প্রতিবন্ধী বড় বোনসহ স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ফোনে কথা হতো কালামের। শান্তিরক্ষী মিশনে আফ্রিকার মালি যাওয়ার ব্যাপারে কালামের স্বপ্ন ছিল সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে।