|
প্রায় ৭০ হাজার কৃষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই নারী
মাছ চাষে বদলে যাচ্ছে বাবুগঞ্জ
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ‘শস্য ভান্ডার’ খ্যাত বরিশালের বাবুগঞ্জ ক্রমেই পরিণত হচ্ছে মৎস্য ভান্ডারে। গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলে মাছ চাষ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন শস্য চাষের ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে অনেকাংশে। বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষের ব্যাপকতায় বদলে যাচ্ছে বরিশালের বাবুগঞ্জের অর্থনীতির চালচ্চিত্র। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের সরেজমিন ঘুরে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকায় প্রায়সব বাড়িতেই রয়েছে ছোট-বড় পুকুর। এক সময় পরিত্যক্ত এসব পুকুরে অনেকেই নির্ভরশীল ছিলেন মৌসুমি মাছ চাষে। কিন্তু এখন এ চিত্র বদলে গেছে। এসব পুকুরে এখন মাছ চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। ফলে আগের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়ন গজালীয় বাসিন্দা ফাতেমা বেগমের ২০১৪ সালে স্বামী মারা যান। এর আগে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা খরচ হওয়ায় তেমন কোনো টাকা-পয়সাও ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তিন সন্তানকে কীভাবে মানুষ করবেন, সংসার চলবে কীভাবে-বিষয়গুলো নিয়ে সব সময় ভাবতেন তিনি। পরে মৎস্য চাষের প্রশিক্ষন পাওয়ায় নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন ফাতেমা। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বিক্রি করি। সর্বসাকুল্যে মোট খরচ হয় ২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। ২০১৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার পোনা বিক্রি করেছি। পরে এ অর্জন আশপাশের সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। এ পর্যন্ত বাড়ির পুকুরে মাছ চাষ ও পাড়ে সবজি চাষ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ৭০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ফাতেমা একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৬ এ কার্পজাতীয় মাছের সফল নার্সারার হিসেবে পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। উপজেলার রাবেয়া মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্রে (হ্যাচারি) গিয়ে দেখা যায়, সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে হ্যাচারিটি পরিচালিত হচ্ছে। অনেক আগে থেকে হ্যাচারিটি মৎস্য চাষের সঙ্গে জড়িত হলেও ২০১৩ সাল থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে এখানে মাছ চাষ হচ্ছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা সরবরাহে বেশ সুনাম অর্জন করেছে হ্যাচারিটি। এ প্রসঙ্গে হ্যাচারিটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কামরুল আহসান রাসেল বলেন, হ্যাচারি সম্পর্কে আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিছুই জানতাম না মাছ চাষ বা হ্যাচারি সম্পর্কে। শুধু জানতাম মাছকে ইনজেকশন দিলেই ডিম দেয়। তবে ২০১৩ সাল থেকে ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়িত ইউএসএআইডি অ্যাকুয়াকালচার ফর ইনকাম অ্যান্ড নিউট্রিশন (ইউএসএআইডি-এআইএন) প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে মাছ চাষে আগ্রহ হয়। তখন থেকেই হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা, মাছ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করেছি। তিনি জানান, বর্তমানে হ্যাচারিতে ৮টি ব্রুড পুকুর রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ১০ একর। ২৪ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড ট্যাংক ও ৩২টি হ্যাচিং জার নিয়ে কার্পজাতীয় মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এআইএন প্রকল্পে বরিশালের টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট জামাল উদ্দিন বলেন, প্রকল্পের ব্রুডমাছ হতে উৎপাদিত মাছের পোনা এ অঞ্চলের চাষিদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফলে রাবেয়া হ্যাচারি থেকে অন্তত ১৫০ জন নার্সারি ব্যবসায়ী নিয়মিত রেণু ক্রয় করেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এ হ্যাচারির বাজার বিস্তৃতির ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। ওয়ার্ল্ডফিশ বাংলাদেশ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহনের ফলে আগের চেয়ে মাছ উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অঞ্চলের কৃষকদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে মাছ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে কয়েকগুণ। তাদের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার কৃষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশই নারী।
Post Views:
২,৭৮২
|
|