Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার জুলাই ১৫, ২০২৫ ৩:২১ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » ভিডিও কলে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রীর কাছে যৌন আবেদন বরিশাল ববি’র রেজিস্ট্রারের 
Saturday September 8, 2018 , 7:04 pm
Print this E-mail this

রেকর্ড করা ফোনালাপ বিশ্লেষণ দেখা দেখা গেছে ওই ঘটনায় দুইজনেরই দোষ ছিলো, শাস্তি দিলে দুইজনকেই দিতে হতো

ভিডিও কলে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রীর কাছে যৌন আবেদন বরিশাল ববি’র রেজিস্ট্রারের


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের একটি সরকারি কলেজের স্নাতক পড়ুয়া চাকরি প্রত্যাশী এক ছাত্রীকে চাকরি পাইয়ে দিতে সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়ে ওই ছাত্রীকে গভীর রাতে নির্জন বাসায় ডাকার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, গভীর রাতে ওই ছাত্রীর মুঠোফোনে ভিডিও কল দিয়ে যৌন আবেদনময়ী অশালীন অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগ উঠেছে রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে। এ ধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ হাতে এসেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন যৌন হয়রানির অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরিশালের সুশীল সমাজ। এদিকে একের পর এক নৈতিক স্খলনের ঘটনায় অভিযুক্ত রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তখন উপাচার্য তাদের লিখিত অভিযোগ করতে বলেন। অন্যদিকে শুধু এই ছাত্রীকেই নয়, এর আগে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে যৌন হয়রানিসহ তাকে তার সাথে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ আছে রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ওই নারী শারীরিক শিক্ষা কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তখন তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তা উপাচার্যের বিরুদ্ধে। একজন নারী কর্মকর্তাকে যৌন হয়রানির ঘটনা চেপে যাওয়ায় উপাচার্যের প্রশ্রয়ে দিন দিন রেজিস্ট্রার মনিরুল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ অনেকের। এছাড়াও রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে এলাকাপ্রীতিসহ লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এক বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। মা অনেক কষ্ট করে তাকে গ্রামের স্কুল-কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করিয়ে বরিশাল নগরীর একটি সরকারি কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। মাকে একটু স্বস্তি দিতে স্নাতক অধ্যায়নের পাশাপাশি তিনি একটি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানীর বিভিন্ন প্যাকেজ প্রকল্পে পার্টটাইম চাকরি করতেন। একই সাথে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরির আবেদন করতে থাকেন তিনি। ইতিপূর্বে ২ বার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির আবেদন করেন এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু তার চাকরি হয়নি। এরপর তৃতীয় দফায় গত মে মাসে আবারও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির আবেদন করেন তিনি। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার হলে এন্ড্রয়েড মুঠোফোন ব্যবহারসহ নানা সুবিধার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ মাস্টাররোল কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে চাকরি স্থায়ী করায় তার চাকরি হয়নি বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর। এই সময়ে ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের সাথে পরিচয় হয় তার। প্রথম দিকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে সালাম ও কুশল বিনিময় হতো মাত্র। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নম্বর চেয়ে নিয়ে ওই ছাত্রীর মুঠোফোনে কল দিতে থাকেন মনিরুল। জানতে চান ছাত্রীর বিস্তারিত পরিচয়। ওই ছাত্রীও বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার নিয়মকানুন জানতে চান। ওই ছাত্রীর দুর্বলতার সুযোগে রেজিস্ট্রার মনিরুল গত রমজানের শুরুর দিকে এক পর্যায়ে তাকে রাতে ভিডিও কল দিতে শুরু করেন। তিনি রূপাতলী হাউজিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা বাসায় একা থাকেন এবং সরকারি কলেজে চাকুরে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঢাকায় থাকেন বলে জানিয়ে নিজের একাকিত্ব প্রকাশ করেন। নিজের একাকিত্বের কথা বলে ওই ছাত্রীর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা করেন এবং তাকে রূপাতলী হাউজিংয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আমন্ত্রণ জানান। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে এবং ভিডিও কলে ওই ছাত্রী ভয়ে তার বাসায় যেতে চায় না বলে তার ভয় ভাঙানোর চেষ্টা করেন। শুধু রাতে ভিডিও কল দিয়েই নয়, রমজান মাসের শেষের দিকে দিনেও বিভিন্ন স্থানে দেখা করার জন্য ডাকতেন ওই ছাত্রীকে। কিন্তু ওই ছাত্রী নানা কারণ-অজুহাতে এড়িয়ে চলতেন। এতে বিমুখ হয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুল ওই ছাত্রীকে মুঠোফোনে ভিডিও কলে বলেন,‘তুমি আমার জন্য কিছুই করোনি, একা থাকি জেনে তুমি এড়িয়ে চলো’। এসব কথা বলতে বলতে রেজিস্ট্রার মনিরুল নিজের আবেগ সংবরন করতে না পেরে নিজেই নিজের গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করেন বলে জানান ওই ছাত্রী। ভিডিওটি কোন ধরনের কাট এবং পুশবিহীন ৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিও কলের সময় রেজিস্ট্রার মনিরুলের পড়নে নীল-সাদা রঙের গেঞ্জি এবং চোখে পাওয়ারী চশমা পরিহিত অবস্থায় তাকে আবেগময় অবস্থায় দেখা গেছে। ওই ছাত্রী বলেন, রেজিস্ট্রার মনিরুল গোপনাঙ্গ দেখিয়ে সুযোগ পেলেই তাকে মাস্টার রোলে চাকরি দেওয়ার কথা বলেন। কোন ধরনের উস্কানীমূলক কথাবার্তা ছাড়া ভিডিও কলে গোপনাঙ্গ দেখানোয় ওই ছাত্রী বিস্মিত এবং হতবাক হন। গোপনাঙ্গ দেখিয়ে বাসায় ডাকায় সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে রেজিস্ট্রার মনিরুলের বাসায় যাননি ওই ছাত্রী। তবে মনিরুল তার ক্ষতি না করার জন্য অনুরোধ করেন ওই ছাত্রীকে। এর আগে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টরকে বিভিন্ন সময় যৌন সঙ্গমের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে। ওই সময় সেলিনা বেগম এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় তখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি অভিযুক্ত মনিরুলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল মহানগর কমিটির সভাপতি নারী নেত্রী অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, চাকরি প্রত্যাশী এক ছাত্রীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে মনিরুল ইসলামের অনৈতিক আচরণ দুঃখজনক। তিনি বলেন, গত বছর রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে এক নারী কর্মকর্তার দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্য কঠোর ব্যবস্থা নিলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। এই ধরনের ঘটনার প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ হওয়া উচিত। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী নৈতিক স্খলনের দায়ে রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা। টিআইবি’র আদলে গঠিত বরিশাল জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন নারীর সাথে অশোভন বা অশ্লীল আচরণ করলে প্রথমেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে যৌন প্রস্তাব কিংবা গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করে রেজিস্ট্রার মনিরুল আইসিটি এ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তিনি ফেসবুকে একজন নারীর সাথে যে আচরণ করেছে তা কোন শিক্ষিত ও ভদ্র মানুষ করতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে ওই ছাত্রী কিংবা তার পরিবারের মনিরুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী কর্মকর্তাকে যৌন প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী মানবেন্দ্র বটব্যাল। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। একজন কর্মকর্তার অনৈতিকতার জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা রেজিস্ট্রারের এমন অনৈতিক কর্মকান্ড মেনে নেওয়া যায় না। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে আগামীকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার পর প্রমাণসহ উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জানান আবু জাফর মিয়া। এদিকে রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত নৈতিক স্খলনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, একটি কুচক্রি মহল সব সময় তার পেছনে লেগে আছে। তারা বিভিন্নভাবে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। একটি মহল তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে একটা এডিট করা ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম। ঢাকায় অবস্থানরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক গতকাল শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে জানান, রেজিস্ট্রার সম্পর্কিত একটা আনসাইনড অভিযোগ এবং একটা সিডি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু তার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। শিক্ষক সমিতির নেতারা এ বিষয়ে তার কাছে বিচার চাইতে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। গত বছর নারী কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রারের যৌন সঙ্গম প্রস্তাবের বিচার না হওয়া প্রসংগে উপাচার্য বলেন, তাদের (নারী কর্মকর্তা ও রেজিস্ট্রার) রেকর্ড করা ফোনালাপ বিশ্লেষণ দেখা দেখা গেছে ওই ঘটনায় দুইজনেরই দোষ ছিলো। শাস্তি দিলে দুইজনকেই দিতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির ব্যাপার। তাই দুইজনকেই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। পদাধিকার বলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য সদ্য যোগদানকারী বিভাগীয় কমিশনার রাম কৃষ্ণ দাস বলেন, তিনি এমন অভিযোগ আগে শোনেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নৈতিক অবক্ষয় গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কমিটির আগামী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার।




Archives
Image
বেনজীরের যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়ার সম্পদ ক্রোক, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Image
আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন-পিরোজপুরে নাহিদ ইসলাম
Image
বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা : একাই দুই আসনে লড়বেন ফয়জুল করীম
Image
বরিশালে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
Image
তথ্য ফাঁসের অভিযোগ, বরিশালে ডিবি কনস্টেবল ফারুক ক্লোজড