Current Bangladesh Time
মঙ্গলবার ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫ ৯:৩৬ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » ভিক্ষা ছাড়লেই লাখপতি ! 
Friday March 30, 2018 , 6:36 pm
Print this E-mail this

অবিশ্বাস্য শোনালেও এই কাজ করে আসছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)

ভিক্ষা ছাড়লেই লাখপতি !


ভিক্ষা ছাড়লেই লাখ টাকার মালিক হওয়া যাবে। একটু অবিশ্বাস্য শোনালেও এই কাজ করে আসছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।

ভিক্ষুককে স্বনির্ভর করতে তাদের এ টাকা দিয়ে গাভী, হাঁস-মুরগি পালন বা পছন্দ অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করছে সংস্থাটি। এসব কাজ করে মাসে পাঁচ হাজারের বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।

আর এই এক লাখ টাকা পাওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে জীবনে আর কখনও ভিক্ষা করা যাবে না।

২০১০ সাল থেকে এখন অবধি ৮৬৭ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে পিকেএসএফ। এদের মধ্যে জীবন পাল্টে ফেলেছেন ৮৪৭ জন। একজন টাকা ফেরত দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছেন। ১৯ জন এখনও আর্থিকভাবে সফল হতে পারেননি। বাকিরা এখন হাত পেতে নয়, কাজ করে জীবন গড়ছেন।

সরকারি হিসেবে দেশে ভিক্ষুকের সংখ্যা ছয় লাখ। পিকেএসএফের এই কর্মসূচি এই সংখ্যা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছে সরকার। এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ঘোষণা এসেছে। আর এই কর্মসূচিও আরও জোরেশোরে চলছে।

পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারসমূহের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সমৃদ্ধি) একটি মানবকেন্দ্রিক কর্মসূচি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা।’

‘যে যেটা করতে চায় তাকে আমরা সেভাবেই সহায়তা দেই। যারা পিছিয়ে আছে তাদের দিকে নজর দেই আমরা।’

“সাড়ে আটশর মতো উদ্যমী সদস্যদের (ভিক্ষুক) পাশে দাঁড়িয়েছি। তার মধ্যে মাত্র একজন টাকা ফেরত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি এটা করতে পারব না, হাত পাতলে এর চেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যায়। এক লাখ টাকাই ফেরত দিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর ১৯ জন যেভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা সেভাবে হতে পারেননি। বাকি সবাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।”

‘কেউ বাড়ি করেছেন, কেউ জমি কিনে বাড়ি বানাচ্ছেন, আবার কেউ ব্যবসায়ী হয়েছেন। এদের আর ভিক্ষুক বলা উচিত নয়, আমরা বলি উদ্যোমী সদস্য।’

পাঁচগাঁওয়ের এক নারীর ‍উদাহরণ দিয়ে খলীকুজ্জমান বলেন, “ওই নারীকে দোকান দিয়েছিলাম। তিনি দোকানের নাম রেখেছেন ‘সমৃদ্ধি ফাস্টফুট’। আমি দেখতে গেলাম তাকে। আমাকে বললেন, ‘স্যার আমার চেয়ারটায় বসেন একটা ছবি তুলি’। বসলাম, একটা ছবি তুললেন। সিংহাসন আকারের চেয়ার। একজন জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি সিংহাসন বানালেন কেন’। তিনি বললেন, ‘সারা জীবনে চেয়ারে বসার শখ ছিল বসতে পারিনি। সুযোগ হয়েছে তাই বানালাম’।”

“এখন ওই নারী বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে ‘চাতাল ব্যবসা’ (ধান ভাঙানোর মিল) করেন। পাঁচ বছর আগে ভিক্ষুক ছিলেন এখন তিনি পাকা বাড়ি বানাচ্ছেন। এমন শত শত উদাহরণ আছে।”

কী সুন্দর গল্প

জয়পুরহাট জেলার নিক্তিপাড়া গ্রামের সুফিয়া বেওয়া। ১৫ বছর ভিক্ষা করেই চলতেন। দরিদ্র দিনমজুর পরিবারে জন্ম। অভাবের সংসারে ঠিক মতো খাবারও জুটত না। একটু বড় হওয়ার পর অন্যের বাড়িতে কাজ করার জন্য তাকে রেখে আসা হয়। এরপর মাত্র ১২ বছর বয়সে পাশের নিত্তিপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন নামে এক ভ্যান চালকের সঙ্গে বিয়ে হয় সুফিয়ার। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামীকে নিয়ে নিত্তিপাড়া গুচ্ছগ্রামে একটি জীর্ন বেড়ার ঘরে আশ্রয় নেন সুফিয়া।

২০০২ সালে মকবুল পঙ্গু হলে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে সুফিয়ার। একপর্যায়ে বেছে নেন ভিক্ষার পথ। সারাদিন ভিক্ষা করে মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে সংসার।

২০০৮ সালে মকবুল মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ে সখিনাকে নিয়ে আরও বিপদে পড়েন। একজন দিনমজুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু এতে সংসারে খরচ যায় আরও বেড়ে। জীবনে যখন কোনো স্বপ্ন নেই, সেই সময় ২০১৫ সালে পিকেএসএফ পাল্টে দেয় তার জীবন।

ধলাহার ইউনিয়নের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয় সুফিয়াকে। দেখতে থাকেন সমৃদ্ধির পথ।

এখন সুফিয়ার বাড়ি সুন্দর, গোছানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রবেশ পথে মত সুন্দর একটি ফটক। মাচার উপরে শাক এর জন্য আরও সুন্দর লাগে। মনে হচ্ছে গ্রামীণ বিয়ে বাড়ির গেট।

একটু আগালেই উঠান। এর পাশে কবুতরের ঘর। অন্য পাশে কেঁচো সার প্রদর্শনী প্লান্ট। বসত ঘরের একটু পাশে গরুর ঘর। বাড়ির চারদিকে বিভিন্ন ফলের গাছ।

উঠানের এক পাশে একটি খুঁটিতে আটকানো ব্যানারে লেখা উদ্যোমী সদস্য পুনর্বাসন কর্মসূচি। উদ্যোমী সদস্যের নাম সুফিয়া বেওয়া।

পুনর্বাসনের সময় ২০১৫ সাল। তার পেছনে খরচের হিসাবটা এমন: অবকাঠামো উন্নয়নে ২৫ হাজার ৯৭৮ টাকা, বাছুরসহ গাভী ৬০ হাজার ৮১০ টাকা, মুরগি ১৫ হাজার টাকার, কবুতর ৫২০ টাকার, ভরণ পোষণ ও নগদ প্রদান ১৬ হাজার ১৯২ টাকা। সব মিলিয়ে একলক্ষ পাঁচ হাজার টাকা।

২০১৭ সালে সুফিয়ার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে বাছুরসহ গাভী ও ছাগল এক লক্ষ ২৭ হাজার টাকা, কবুতর চার হাজার ৭৫০ টাকা, জমি ইজারা ৩০ হাজার টাকা, সঞ্চয় ১৫ হাজার টাকা, অবকাঠামো ২২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে দুই লক্ষ ২৭ হাজার ৫০ টাকা।

সুফিয়া জানান, এখন দুটি গাভী প্রতিদিন পাঁচ কেজি দুধ হয়। ওই দুধ বিক্রি করে মাসে আয় আসে ৫ হাজার ২৫০ টাকা। মুরগি, কবুতর, বিভিন্ন ফল ও সবজি চাষ থেকে আয় হয় তার।

জয়পুরহাটের ধলারহার ইউনিয়নের শেখপাড়ার আবু বক্করও ভিক্ষা করেছেন ২০ বছর। তার জীবন পাল্টানোর গল্পের পরের কাহিনিটা কেমন?

আবু বক্কর বলেন, ‘প্রতিবেশীর কোনো অনুষ্ঠান হলে দাওয়াত দিত না। কিন্তু এখন দেয় সন্মান করে।’

২০১৫ সালে আমাকে প্রজনন সেন্টার দিতে সহায়তা করে পিকেএসএফ। দুইটা ষাঁড় ও একটি পাঠা দিয়ে প্রজনন কাজ করা হয়। ছাগল প্রজনন করতে একশ টাকা ও গরু প্রজনন করতে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা নেয়া হয়। চীনা হাঁস ও রাজহাঁসও পালেন আবু বক্কর।

আবু বক্করের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক পাশে ‘প্রজনন সেন্টার’। আরেক পাশে বাঁশের খাঁচার ভেতরে কয়েকটি রাজহাঁস। মাটির ঘরে একটি ব্যানারে লেখা ২০১৫ সনে পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু হয় তার।

তখন আবু বক্করকে অবকাঠামো উন্নয়নে ২২ হাজার ৫১২ টাকা, ষাঁড় কিনতে ৬৬ হাজার ৫৪০ টাকা, মুরগি কিনতে এক হাজার ৫০০ টাকার, কবুতর কিনতে ৫২০ টাকা, ভরণ পোষণ ও নগদ প্রদান ১৩ হাজার ৯২৮ টাকা মোট এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়।

২০১৭ তে তার ষাঁড়ের দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, এক লাখ ২০ হাজার টাকা, হাঁস-মুরগির দাম পাঁচ গুণ বেড়ে সাত হাজার ৭৫০ টাকা, কবুতরের দাম ১০ গুণ বেড়ে ৫ হাজার ২০০ টাকা, জমিও পুকুর ইজারা নিয়েছেন ৩৫ হাজার টাকা, অবকাঠামো খাতে খরচ করেছেন ২০ হাজার টাকা, সঞ্চয়ও হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট সম্পদ এক লাখ ৯২ হাজার ৯৫০ টাকা।

যেখাবে চলে ভিক্ষুক পুনর্বাসন

সমৃদ্ধি কার্যক্রম আওতায় বর্তমানে ২০০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতাভুক্ত প্রতি ইউনিয়ন থেকে বছরে দুই জন ভিক্ষুকের পুনর্বাসনের লক্ষ রয়েছে বলে জানান পিকেএসএফের ডিএমডি (প্রশাসন)জসীম উদ্দিন।

প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জরিপ করে সকল ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়েছে। পরে সেই তালিকা থেকে বাছাই করে অধিকতর দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারদের অগ্রধিকার দিয়ে সহায়তা দিতে তালিকা করা হয়।

নির্বাচিত ভিক্ষুকদের তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সত্যায়িত করে পিকেএসএফ-এর কাছে পাঠান। পরে পিকেএসএফ এর কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে ভিক্ষুকদের তালিকা চূড়ান্ত করেন।

পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত ভিক্ষুক ও সহযোগী সংস্থার একজন কর্মকর্তার নামে যৌথ ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এরপর এক লক্ষ টাকা দেয়া হয় তাদেরকে।

পরে প্রত্যেক ভিক্ষুক ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম নির্ধারণ করে উপকরণ কেনা হয়। ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত রাখতে প্রাথমিক অবস্থায় কিছু খাদ্যও কিনে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রাথমিক বাড়তি খরচের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ টাকা দেয়া হয়।

ঝুঁকি যেন না থাকে এ জন্য আয়ের একাধিক উৎসে বিনিয়োগ করা হয়। পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত পরিবার যাতে আবার ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে না যায় বা আয় বৃদ্ধিমূলক উপকরণ যেন বেচে দিতে না পারে, সে জন্য গ্রামের একজন ব্যক্তিকে স্থানীয় অভিভাবক নির্বাচন করা হয়।

আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম থেকে নিরবচ্ছিন্ন আয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা নিয়মিত তদারকি করে। এছাড়া পুনর্বাসিত প্রতিটি পরিবারের দৈনিক আয় ও ব্যয় লিখে রাখা হয়। এই হিসাব সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংস্থার শাখা কার্যালয়ে ও পরিবারে সংরক্ষিত থাকে। মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন পিকেএসএফে নিয়মিত পাঠানো হয়।

পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের মধ্যে ২০১৬ সালে ৬০০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে পিকেএসএফ। তারা দেখে প্রত্যেকের গড় আয় মাসে পাঁচ হাজার টাকা এবং উদ্যোমী সদস্য (ভিক্ষুক) প্রতি গড় সম্পত্তির পরিমাণ দেড় লক্ষ টাকা।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকার পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠা করে। আর সমৃদ্ধি কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে দেশের ২০০টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম রয়েছে।

সূত্র : ঢাকা টাইমস




Archives
Image
বরিশাল শেবামেকে কমপ্লিট শাটডাউনের দ্বিতীয় দিনে সুনসান নীরবতা
Image
আ. লীগের নৈরাজ্য-হরতালের প্রতিবাদে বরিশালে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
Image
শিক্ষার্থীদের ৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, প্রো-ভিসিসহ ৩ জনকে দায়ী উপাচার্যের
Image
ডাক্তারদের উপঢৌকন বন্ধ হলে ওষুধের দাম কমবে ৩০%
Image
বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব মাঘী পূর্ণিমা আজ