|
যুবরত্ন সাদিক আবদুল্লাহ’র বরিশাল রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থান সত্যিই ঈর্ষণীয় এবং অনুকরণীয়
বয়স এবং রাজনীতিতে কনিষ্ঠ হলেও বরিশালের যুবরত্ন জনপ্রিয়তায় শীর্ষে
বরিশাল রাজনীতিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তির নাম সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। যার জনপ্রিয়তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি কিংবা দিবস উদযাপনে। ওইসব আয়োজনে সাদিকের ডাকে সারা দিয়ে গোটা নগরী পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে দক্ষিণের লাখো মানুষের নয়নের মনি হয়ে ওঠা এই নেতার রাজনৈতিক জীবনের দৈর্ঘ্যতা আরো আশ্চর্যজনক। বরিশাল রাজনীতিতে তার প্রবেশ সবেমাত্র ৬ বছর পার করলেও বুদ্ধিমত্তা, দরদী আচরণ ও কর্মকান্ড এবং রাজনৈতিক দূরদর্শীতা বরিশালবাসীর কাছে সাদিক আবদুল্লাহকে নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার প্রতিযোগী অনেক নেতার চেয়ে রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত বয়সের দিক বিবেচনায় সাদিক আবদুল্লাহ কনিষ্ঠ হয়েও নেতা হিসেবে জনমানুষের হৃদয়ে সবচেয়ে বড় আসনটি তারই দখলে। যদিও নিজ এবং ভিন-দলীয় এক শ্রেণির প্রতিপক্ষ তাকে নিয়ে বিতর্ক করার সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করে না। তার এ স্বল্প দৈর্ঘ্যতার মাঝে ব্যাপক প্রাপ্তিতা প্রসঙ্গে দলীয় এবং নির্দলীয় অনেকের মন্তব্য, সাদিক আবদুল্লাহ রাজনীতির মাঠে যতটা সাবলীলভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন, তা রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কারণেই সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী রাজনীতির বরিশালের আদি প্রভাবশালী পরিবার থেকে আগত হওয়ায় সাদিকের পক্ষে এতটা প্রভাব বিস্তার করা সহজে সম্ভব হয়েছে। আর রাজনীতিতে প্রভাবশালী হওয়ার পাশাপাশি উদ্দেশ্য মূলকভাবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ারটির প্রতি তার অপলক দৃষ্টি থাকা নিয়েও অনেকের রয়েছে বিরূপ ধারণা। ধারণাকারীরা বলতে চায়, ক্ষমতাসীন দলের বরিশাল মহানগর শাখায় অপেক্ষাকৃত পরবর্তী সারির পদে থেকেও সাদিকের পরামর্শ এবং সিদ্ধান্তেই হচ্ছে সবকিছু। আর সঙ্গীয় নেতা-কর্মীদের এ পরিস্থিতিতে নিরব থাকাকে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার প্রতি সমর্থনই মনে করা হয়। তবে এ নিয়েও বিতর্ক ছড়াতে কালক্ষেপণ করে না নিন্দুকেরা। নিন্দুকদের দাবি, দলীয় অভিভাবকের পরিবার থেকে আগন্তুক সাদিকের সিদ্ধান্তে দ্বিমত করলে বেকায়দায় পড়তে পারে তার সঙ্গীয়রা। যে কারণে পছন্দ-অপছন্দ সবই মেনে নেন তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাদিক যে কোন ইস্যুতে সকলের সম্মতি নিয়েই অগ্রসর হয়ে আসছেন। অপরদিকে যেহেতু জনপ্রিয়তায় জোয়ারের অগ্রভাগে তিনি, সেখানে একটি চেয়ারে আসীন হওয়াই যদি হয় লক্ষ্য, সেক্ষেত্রে ওই লক্ষ্যের পেছনে থাকা উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য পূরণ পরবর্তী পরিবেশ ও তার অনুসারীদের আচরণ কতটা মঙ্গলজনক বা সহনশীল হবে তা নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু সাদিককে নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য ও ধারণার সঙ্গে বাস্তবতা শতভাগ সাংঘর্ষিক বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জোর গলায় দাবি করেছে। সূত্রের দাবি, তরুণ এ নেতাকে দলীয় নেতা-কর্মীর বাইরেও বরিশালের লাখো সাধারণ মানুষের আস্থাবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। একসময় যারা তার পিতা দক্ষিণাঞ্চল আওয়ামী রাজনীতির অভিভাবক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্’র সঙ্গে রাজনীতির পথ চলেছেন। তারা বয়সে তরুণ সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গেও পথ চলছেন বিনা দ্বিধায়। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতেও দেখা যায় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সাদিক আবদুল্লাহকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রবীন-তরুণের এ পথচলায় কোন অসঙ্গতি কিংবা অসংলগ্নতা থেকে ভিন্ন মতামত সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে সাদিক আবদুল্লাহর ধৈর্য এবং সহনশীল মনোভাবই প্রধান উপকরণ হিসেবে কাজ করেছে। আ’লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, সাদিক আবদুল্লাহকে সামনের সারিতে রাখাটা সাদিকের চাহিদা নয়। তার যোগ্যতাই তাকে সামনের সারিতে নিয়ে গেছে। ব্যক্তিগত কম বয়সে অনেককে ভালো অবস্থানে দেখা গেলেও এমন অল্প পরিসরের রাজনৈতিক জীবনে এত মানুষের ভালোবাসা অর্জন সত্যিই বিরল বলে মনে করেন তারা। যে কারণে বরিশালবাসী ইতিমধ্যেই সাদিক আবদুল্লাহকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ারে দেখতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। সূত্র বলছে, ৬ বছর আগে বরিশালের রাজনীতিতে সাদিকের প্রবেশকে তার পরিবার খুব একটা সমর্থন করেনি। কেননা তৎসময় ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মরহুম শওকত হোসেন হিরনের প্রভাবের কাছে সাদিক ছিলেন ‘নাবালক শিশু’ সমতুল্য। গোটা বরিশাল যখন হিরণের নগর উন্নয়নের জোয়ারের স্রোতে দিশেহারা সেই মুহূর্তে রাজনীতিতে প্রবেশ করে ছোট কোন অবস্থান সৃষ্টি করাও ছিল কল্পনার ন্যায়। এছাড়া অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রাজনীতিতে অবস্থান গড়ার চেষ্টায় থাকা সাদিক ছিলেন হিরনের চোখে স্বগোত্রীয় প্রতিপক্ষ। তেমন প্রতিকূল পরিবেশে দাঁড়িয়ে রাজনীতির মাঠ গোছানো ছিল অনেকটা অন্ধকারে মাঝ সমুদ্র থেকে তীরে ভেড়ার মত। কিন্তু বরিশালবাসীকে শোকের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েও সাদিক আবদুল্লাহর ভাগ্য প্রসন্ন করে দিয়ে গেছেন মরহুম শওকত হোসেন হিরন। তার মৃত্যুর পর সাদিকের ‘রাজনীতির ঘোরা’ লাগামহীন ছুটে চলে উন্নতির চূড়ামুখী হয়ে। তবে হিরন না থাকলেও তার অনুসারীরা সাদিকের গলায় কাটা বাঁধানোর কম চেষ্টা করেনি। বাস্তবতা মানতে নারাজ ওইসব নেতাদের বেফাঁস কথা-বার্তায় অনেক সময় ইঙ্গিত দেয় সাদিককে দমানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে। তবে সবাইকে নিয়েই রাজনীতির পথ চলতে চান সাদিক, এমনটাই জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা।
সর্বোপরি বয়স এবং রাজনীতির স্বল্প দৈর্ঘ্যতায় যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র বরিশাল রাজনীতিতে বর্তমান অবস্থান সত্যিই ঈর্ষণীয় এবং অনুকরণীয় বলে মন্তব্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের। তারা বলছেন, সাদিক আবদুল্লাহ’র এ প্রাপ্তি শুধু ‘ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া’র মত অর্জন নয়। সৎ এবং দৃঢ় প্রচেষ্টা, পরিশ্রম এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়েই অর্জন করা সম্ভব।
সূত্র : যুগ যুগান্তর
Post Views:
৯৭২
|
|