|
বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে দ্রুত বার্ন ইউনিট চালুর নির্দেশ
বিরল ও অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ‘হিরো’ – ডা: সামন্ত লাল সেন
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : ডাক্তার সামন্ত লাল সেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক।বিরল ও জটিল সব রোগের ‘সফল’ চিকিৎসক।‘বৃক্ষমানব’ আবুল বাজনদার ও মুক্তামনিদের ‘হিরো’।শুধু এসব বিরল রোগীদের কাছেই নয় দেশ-বিদেশের বাঘাবাঘা চিকিৎসকদের কাছেও তিনি এখন ‘হিরো’!আবুল বাজনদার,মুক্তামনি আর তোফা-তহুরার সফল অস্ত্রোপচারের পর দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের সফলতার কথাও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।শতাধিক বিদেশি চিকিৎসক ও গবেষক এখন বাংলাদেশে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই সফলতার পেছনে মূল মন্ত্র কি তারা জানতে এসেছেন। এখনও অনেকে আসছেন।চিকিৎসার সেই মূলমন্ত্রটিও নিজেই জানিয়েছেন ডা: সামন্ত লাল সেন।তার ভাষ্য,ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় থেকে সকল চিকিৎসকদের আন্তরিকতাই তার সফলতার মূলমন্ত্র।ঢামেক হাসপাতালে তাক লাগানো চিকিৎসার মাইলফলক স্থাপন হয় ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।ওইদিন ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. আবুল কালামের নেতৃত্বে বৃক্ষমানব হিসাবে পরিচিত আবুল বাজনদারের হাতে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়।বাজনদারসহ এ পর্যন্ত বিশ্বে ৭ জন রোগীকে সনাক্ত করা গেছে।এর মধ্যে বাংলাদেশেই চারজন।আর সারা বিশ্বের মধ্যে বাজনদার ছিলেন তৃতীয় বৃক্ষমানব।এর আগে যে দু’জন এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের সফল চিকিৎসা করতে পারেনি উন্নত বিশ্বও।তারা দু’জনই মৃত্যুবরণ করেছেন।কিন্তু বৃক্ষমানব আবুল বাজনদার এখন সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে চিকিৎসা নিয়ে রীতিমতো স্বাভাবিক জীবন শুরু করেছেন।আবুল বাজনদার বলেন,‘সামন্ত স্যারকে আমি ফেরেস্তার সাথে তুলনা করি।তিনি আমার জীবনে ফেরেস্তার মতো এসেছেন।আমি প্রথম যখন আসি তখন থেকে সামন্ত স্যার আর মিঠু ভাই সব করেছেন।কবীর স্যার ছয় লাখ টাকা দিয়েছেন।’তিনি বলেন, ‘সামন্ত লাল স্যার আমাকে একটু পর পর দেখতে আসেন,খোঁজ নেন।আমিও যখনই দরকার তখনই স্যারের রুমে যেতে পারি।স্যার না থাকলে আমার এই চিকিৎসা হতো না।তিনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।তিনি আমার জীবন দাতা।আমার কাছে মহামানব।সবশেষ বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মুক্তামনির চিকিৎসা করতে যখন ব্যর্থ হয় চিকিৎসা শাস্ত্রের অভিজাত দেশ সিঙ্গাপুর,তখন আবারও বিশ্বে চমক দেখিয়ে দিয়েছেন প্রফেসর ডা: আবুল কালাম,সামন্ত লাল সেনসহ দেশের একদল চিকিৎসক।১২ আগস্ট ঢামেক হাসপাতালে মুক্তামনির সফল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।বর্তমানে সে সুস্থ আছে। মুক্তামনির বাবা মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন,‘আমি সামন্ত লাল স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ।স্যার না থাকলে আমার মেয়ে এই চিকিৎসা পেতো না।আমরা যখন কিছুই বুঝি না তখন স্যার সব ব্যবস্থা করলেন।প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো স্যার সব কিছু করে দিয়েছেন।আমি চাই সামন্ত লাল স্যার হাজার বছর বাঁচেন।সামন্ত লাল সেনের ঐকান্তিক ইচ্ছাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন ঢামেক হাসপাতালে।২০১৩/১৪ সালে রাজনৈতিক ডামাডোলে সারা দেশে পেট্রোলবোমায় ঝলসে যাওয়া মানুষ যখন মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তখন শতশত আগুনে পোড়া মানুষকে নতুন জীবন দিয়েছেন এই ডাক্তার ‘সামন্ত লাল সেন’ আর তার বার্ন ইউনিট।সে সময়ও বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকদের প্রশংসা দেশ-বিদেশে ছড়িয়েছিল।একাধিক জোড়াশিশু আলাদা করার কৃতিত্বের সাথেও জড়িয়ে আছে সামন্ত লাল সেনের নাম।এছাড়া সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার কাজতো আছেই।নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি এখন কেবল স্বপ্ন দেখি এভাবে যেন বাকি জীবনটা মানুষের সেবা করে যেতে পারি।তিনি বলেন,এক সময় (১৯৮৬ সালে) প্রথম যখন শুরু করতে গেলাম তখন কতজন যে দূর দূর করেছে।বার্ন ইউনিট খোলার জন্য প্রথম যখন প্রস্তাব দেই তখন তিরস্কারের মুখে পড়েছিলাম।কেউ কেউ বলেছে আমি নাকি পোড়া রোগীদের চিকিৎসার নামে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ইন্ডিয়া চলে যাব।আরো কতো কি?সামন্ত লাল বলেন,ষাটের দশকে যখন চিকিৎসক হব ঠিক করলাম তখন অতটা আবেগ অনুভূতি কাজ করেনি।তখন মনে হতো,চিকিৎসক হব,কাড়িকাড়ি টাকা কামাব।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে ১৯৭৩ সালে এই মোড় ঘুরে যায়।সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তখন।সেই যে পোড়া রোগীদের নিয়ে কাজ শুরু তা আজও চলছে।সম্প্রতি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) বার্ন ইউনিট চালুর নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।শেবাচিম হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে এই ইউনিট স্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়।শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারী ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এসএম নজরুল ইসলাম জানান,অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বার্ন ইউনিট না থাকায় সার্জারী বিভাগ থেকে তাদের চিকিৎসা করা হতো।আর বরিশালে অগ্নিদগ্ধ রোগীরা যাতে করে এর সকল সুবিধা পান সে উদ্দেশ্যেই তিনি আজ (৭-১০-১৭) বরিশাল শেবাচিম-এর অধ্যক্ষ,পরিচালকসহ সকল ডাক্তারদের সাথে এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন।ঢাকা বার্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্প পরিচাল ডা. সামন্ত লাল সেন জানান,এ বছরই ৬টি বিভাগীয় শহরে ২০ থেকে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিট খোলা হবে।ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ইমপ্রুভ হসপিটাল সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট লাইন ডিরেক্টর ডা: মমতাজ উদ্দিন ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক আদেশে শেবাচিম হাসপাতালে সীমিত আকারের হলেও বার্ন ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেয়া হয়।এর প্রেক্ষিতে শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের পাশে নবনির্মিত আইসিইউ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট বার্ন ইউনিট চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়।মহৎ মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে,বিশেষ করে চিকিৎসা সেবায় মহৎ মানুষ খুবই কম।সারা জীবন চিকিৎসা সেবায় ত্যাগ স্বীকার করা,নিজের জীবনের সব ইচ্ছা জলাঞ্জলী দেওয়া,সব মানুষের কাছে ভালো থাকা,সাদা মনের এক মহৎ মানুষের নাম “ডা. সামন্ত লাল সেন”,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সাথে,বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার ইতিহাসে যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।ডা: সামন্ত লাল সেন বলেন,ভোগে সুখ নয়,ত্যাগেই সুখ।একটু ধৈয্য নিয়ে,একটু ভালোবাসা দিয়ে সেবা দিলেই রোগী তথা মানুষের মন পাওয়া যায়।জীবনের জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়াতে পারে।আমরা যেন টাকার পিছনে না ছুটি,মানুষ যেন অগোচরে আমাদেরকে ডাকাত বা কসাই না বলে।ভালো ব্যবহার,ভাল মানের সেবা রোগিদের বিদেশ যাওয়া থামাতে পারে।ডাক্তার হবার আগে আমাদের সৎ,দায়িত্ববান ভালো মানুষ হতে হবে।বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের প্রতি আমি আহ্বান করছি ‘আসুন,আমরা শুরু করি,আমরা জাগলে,সবাই জাগবে,জাগবে বাংলাদেশ।’
Post Views:
২১৫
|
|