|
বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রীনিবাসে হেনার দাপটে ওষ্ঠাগত শিক্ষার্থীরা, অসহায় প্রশাসন
বারবার অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগ নামধারী কথিত নেত্রী হেনা

স্টাফ রিপোর্টার : কারণে অকারণে নানা অপকর্ম করে লাইমলাইটে আসা বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রী হেনা আক্তার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ছাত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড় তবুও ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ কলেজ প্রশাসন। বারবার অপকর্ম করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগ নামধারী কথিত নেত্রী হেনা। কিছুদিন পরপরই আঞ্চলিক পত্রিকা, জাতীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে তার নানা অপকর্মের প্রতিবেদন। তবুও টনক নড়ছে না কলেজ প্রশাসনের। সম্প্রতি বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে সংঘর্ষে আহত বিএম কলেজের গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমীন আক্তার বাদী হয়ে গত ১৭ জুলাই ছাত্রলীগ নেত্রী হেনা আক্তার এবং তার অনুসারী ঝুমুর আক্তার ও ফাতেমা আক্তারকে আসামি করে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। সম্প্রতি পেয়ারা পাড়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রীনিবাসে দুই গ্রুপের মারামারিতে আহত হয় ৯ ছাত্রী। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। বিএম কলেজের বর্তমানে আলোচিত ও সমালোচিত চরিত্র হেনা আক্তার। তিনি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসে নিয়ম অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭ টার পর হল থেকে বের হওয়া বা হলে প্রবেশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু হেনা ও তার সহযোগীরা তাদের যে সময় ইচ্ছা সে সময় হল থেকে বের হয়, আবার যে সময় ইচ্ছা সেই সময় হলে প্রবেশ করে। তাদের কেউ বাঁধা দেয় না এসব বিষয়ে। ছাত্রীদের অভিযোগ, সুপার ও তত্ত্বাবধায়কের চেয়ে হলে হেনার প্রভাব বেশি। নতুন কোন ছাত্রীর হলে সিট নিতে হলে হেনার অনুমতি নিতে হয়। তার অনুমতি ছাড়া কেউ এই হলের সিট পায়না। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর রাতের আধারে ছাত্রী নিবাস থেকে বের হওয়া, শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে হেনাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তখন ছাত্রলীগ নেত্রীকে রাতে বের হতে সাহায্য করায় বরখাস্ত করা হয়েছিল ছাত্রীনিবাসের দারোয়ান আ. মালেক তালুকদারকে। মাদকাসক্ত ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে নজরদারীতে রাখা হয় ছাত্রীনিবাসের আরো পাঁচ নেত্রীকে। কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে হেনার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ঘটনার ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১০ মে ছাত্রীনিবাসে হেনা ও তার সহযোগীরা এক সাধারণ ছাত্রীকে পিটিয়ে আহত করে। খবর পেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ নিয়ে ছাত্রীনিবাসে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তখন ছাত্রীদের অভিযোগে হেনার অন্যতম সহযোগী ঝুমুর আক্তার নামে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে সেই রাতেই ছাত্রীনিবাস থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনার পর কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম বলেছিলেন, পুরো ঘটনা তদন্তের জন্য ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু অতীতের মত আবারো ঘটনা ধামাচাপা পরে যায়। গত ২৫ মার্চ হেনার বিরুদ্ধে অর্থচুরির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তানজিলা আক্তার মিষ্টি ও বাংলা বিভাগের ফাতিমা আক্তার। অধ্যক্ষ স.ম. ইমানুল হাকিম অভিযোগ তদন্তের জন্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হাছিনা বেগমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কার্যদিবসের বদলে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদনের কোন অগ্রগতি হয়নি এবং অভিযোগকারী দুই ছাত্রীর চুরি যাওয়া অর্থের কোন ক্ষতিপূরন দেয়া হয়নি। সম্প্রতি গাছের পেয়ারা পাড়া নিয়ে গত ১৪ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে বনমালী ছাত্রীনিবাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় ৯ ছাত্রী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রী নিবাসের কাকলী-২ ভবনের সামনে একটি শেড নির্মাণের জন্য সেখানে থাকা পেয়ারা গাছটি কেটে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিকাদার মো. জুয়েল। ঠিকাদার জুয়েল ছাত্রীনিবাসের ছাত্রলীগ নেত্রী মুনিরাকে পেয়ারা খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। মুনিরা তার কয়েক সহযোগীদের নিয়ে সেখানে গিয়ে গাছ থেকে পেয়ারা পাড়ে। এ সময় ছাত্রী নিবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ নেত্রী হেনাসহ তারা অনুসারীরা পেয়ারা পাড়তে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে হেনা ও তার অনুসারীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেত্রী মুনিরা আক্তার জানান, পেয়ারা পাড়ায় ছাত্রীনিবাসের অবৈধ বাসিন্দা হেনা ও তার অনুসারী ঝুমুর, ফাতেমা, জান্নাত ও মিষ্টিসহ কয়েকজন লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এতে তিনি (মুনিরা), শারমিন, মারিয়া, কান্তা ও ইসরাতসহ ৯ জন আহত হন।এদের মধ্যে তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে ছাত্রলীগ নেত্রী হেনা আক্তার বলেন, তিনি পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রীনিবাসে গিয়ে দেখেন মুনিরা তার অনুসারীদের নিয়ে ২ নম্বর ভবনের সামনের গাছ থেকে পেয়ারা পাড়ছেন। এ সময় তাদের নিষেধ করা হলে জুনিয়র হয়েও তারা দুর্ব্যবহার করে। এ কারণে ওই ভবনের ছাত্রীরা একজোট হয়ে মুনিরাসহ তার সহযোগীদের লাকড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। কলেজের উপাধ্যক্ষ স্বপন কুমার পাল বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলি অভিযোগ করেছেন আহতরা। এ কারণে গত ১৭ জুলাই সংঘর্ষে আহত বিএম কলেজের গণিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমীন আক্তার বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী হেনা আক্তারসহ তিন জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে তত্ত্বাবধায়ককে তদন্ত সাপেক্ষে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। মামলায় শারমীন আক্তার উল্লেখ করেন, আসামিরা পুরুষ সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এমনকি তারা অনৈতিক কর্মকান্ডেও জড়িত রয়েছে। হোস্টেলের সাধারণ ছাত্রীদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে পেয়ারা পাড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুলাই আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শারমীন ও মারিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় আসামিরা। পরে তাদের ব্যবহৃত লাখ টাকা মূল্যের দুই স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়া হয় বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ স.ম ইমানুল হাকিম বলেন, অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তরা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাই তাদের সমস্যা সমাধানে আপোষ-মীমাংসা করা হয়। এখন যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
Post Views:
০
|
|