|
সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও মসজিদের ইমামকে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সমালোচনার ঝড়
বাকেরগঞ্জে ইমামের মাথায় মল-মূত্র ঢালার মামলা তুলে নিতে হত্যার হুমকি
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদরাসার সুপার ও নেছারবাগ বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম আবু হানিফার (৫৫) মাথায় মল-মূত্র ঢেলে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে আসামির স্বজনরা। সোমবার দুপুরে মামলার বাদী আবু হানিফা ফোনে জানান, মামলার এজহারনামীয় ২ নম্বর আসামি মো. এনামুল হাওলাদারের ভাই হাবিব হাওলাদার মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। আবু হানিফা জানান, তার বড় ছেলে মো. মহিবুল্লাহ’র সঙ্গে দেখা হলে বলেন, মামলা তুলে না নিলে খুব খারাপ অবস্থা হবে। তোর বাপকে (আবু হানিফা) হত্যা করা হবে। এরপর ৫ লাখ টাকা খরচ করে সেই কেস ডিসমিস করা হবে। আবু হানিফা জানান, হুমকির বিষয়টি তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। মামলা দায়েরের পর থেকে ২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটকে পুলিশের ৪টি দল বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। সব আসামি আটক না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বাদীকে হুমকির বিষয়টি তার জানা নেই। তারপরও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে কেউ নিস্তার পাবে না। ইমাম আবু হানিফা ও স্থানীয়রা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হন এইচ এম মজিবর ও জাহাঙ্গীর খন্দকার। এই নির্বাচনে ইমাম আবু হানিফা সভাপতি প্রার্থী এইচ এম মজিবর রহমানের পক্ষ নেন। নির্বাচনে বিজয়ী হন এইচ এম মজিবর রহমান। পাশাপাশি সভাপতি প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার হেরে যায়। এ নিয়ে আবু হানিফার সঙ্গে জাহাঙ্গীর খন্দকারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতে জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন সময় ইমাম আবু হানিফাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল। গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আবু হানিফা মসজিদ থেকে বের হলে তার পথরোধ করে পরাজিত প্রার্থী ও তার লোকজন। এ নিয়ে ইমামের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকারের এক সহযোগী ইমাম আবু হানিফার হাত ধরে ফেলে। এ সময় ইমন নামে তার আরেক সহযোগী হাঁড়িভর্তি মল-মূত্র এনে ইমাম আবু হানিফার মাথায় ঢেলে দেয়। এতে উল্লাসে ফেটে পড়া দৃশ্যটি ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয় তারা। সেই সঙ্গে মল-মূত্র ঢালার ওই দৃশ্যটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয় তারা। সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। এদিকে, সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি ও মসজিদের ইমামকে অপমান-লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। ইমাম আবু হানিফার ছেলে মো. মহিবুল্লাহ জানান, প্রথমে তারা লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার পর তার বাবা বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা করে বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। অভিযুক্তরা হলেন, আবু হানিফার ছোট ভাই জাকির হোসেন জাকারিয়া, মো. মাসুম সরদার, মো. এনামুল হাওলাদার, মো. রেজাউল খান, মো. মিনজু, জাহাঙ্গীর খন্দকার, সোহেল খন্দকারও মিরাজ হোসেন। অভিযুক্ত সকলের বাড়ি কাঁঠালিয়া এলাকায়। এছাড়াও মামলায় আরও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর রোববার রাতেই মো. মিনজু ও বেল্লাল নামে ২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ বিষয়ে রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং দেখেছি। যতই বিরোধিতা থাকুক সমাজের একজন সম্মানিত ইমামকে এভাবে কেউ অপমান করতে পারে ভাবতেও ঘৃণা লাগে। বিষয়টি দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছি। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আলেম সমাজ। তারা এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বুধবার মানবন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হক জানান, এ ঘটনায় ২ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Post Views:
১,৪৪৬
|
|