|
এককভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা, নৌকায় ভোট দিতে চায় তৃণমূল
বরিশাল-৩ আসনে চাঙ্গা হচ্ছে আওয়ামীলীগ
পূর্বের সকল ভেদাভেদ ভুলে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ ও মুলাদী) আসনের তৃণমুল পর্যায়ের আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে চাঙ্গা করা হয়েছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত বরিশাল-৩ আসন থেকে এবার জোটের নয়; সরাসরি নৌকার প্রার্থী চায় আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রত্যাশা পূরণে নৌকার জোয়ার আনতে ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামীলীগের সম্ভ্রাব্য প্রার্থী গণসংযোগ শুরু করার পর বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভ্রাব্য প্রার্থীদের মধ্যে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। সূত্রমতে: সরাসরি নৌকার টিকিট নিয়ে এমপি না হওয়ায় দীর্ঘদিনের দুঃখ বরিশাল-৩ আসনের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। স্থানীয়রা জানান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (ইঞ্জিঃ) এর জন্মভূমি বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে নৌকার বিজয়ের জন্য দীর্ঘদিন থেকে নেতাকর্মীরা একজন ত্যাগী ও তরুণ নেতাকে খুঁজছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের আত্মত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলেও একজনযোগ্য প্রার্থীর অভাবে এখানে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের দল আওয়ামীলীগ মনোনীত কোন প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারেননি। ফলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে এ আসনটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা হিসেব নিকেশ। অতীতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েও চরম ভরাডুবি হওয়া প্রার্থীর পাশাপাশি এবার নতুন করে এ নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দাবির মুখে নৌকার জোয়ার আনতে দীর্ঘদিন থেকে মাঠপর্যায়ে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে কৌশলে ব্যাপক গণসংযোগ করে মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন এক তরুণ নেতা। মুলাদী উপজেলা সদরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইসাহাক হাওলাদারের পুত্র আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান দলের তৃণমুল পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের জোরালো দাবির মুখে আওয়ামীলীগের সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠপর্যায়ে কাজ করে আসছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ তরুণ নেতাকে নৌকার মাঝি করা হলে বরিশাল-৩ আসনটি এবার আওয়ামীলীগের ঘরে উঠবে বলে জানিয়েছেন মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রত্যাশা পূরণে নৌকার জোয়ার আনতে দুই উপজেলাবাসীর দাবির মুখে দীর্ঘদিন থেকে তিনি (মিজানুর রহমান) দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ শুরু করার পর পরই এ আসনে বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সম্ভ্রাব্য প্রার্থীদের মধ্যে গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় একাধিক নেতারা বলেন, তরুন নেতা মিজানুর রহমান নৌকার প্রার্থী হলে স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম এ আসনটি আওয়ামীলীগের ঘরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্রমতে, স্বাধীনতার পর থেকে বিএনপির প্রার্থী মোশাররফ হোসেন মঙ্গু দীর্ঘদিন এ আসনটি দখল করে রাখেন। ওইসময় আওয়ামীলীগের একাধিক নেতাকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হলেও বিএনপির প্রার্থীর কাছে সবাইকে পরাজিত হতে হয়েছে। পরবর্তীতে একবার জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বরিশাল-৩ আসনের আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলেন, ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে প্রার্থী মনোনয়নে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এ আসনে বার বার আওয়ামীলীগকে পরাজিত হতে হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলেছেন তরুন নেতা মিজানুর রহমান। তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মিজানুর রহমানকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী করা হলে এককভাবে এ আসনটি ঘরে তোলা সম্ভব হবে। দীর্ঘদিন থেকে দলকে সু-সংঘঠিত করার মাধ্যমে ব্যাপক গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করে আসা আওয়ামীলীগের সম্ভ্রাব্য প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, বরিশাল-৩ আসনটি আওয়ামীলীগের আসন হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়ে আমি সাধারণ জনগনের সেবক হয়ে থাকতে চাই। আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দরা বলেন, মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসন। এখানে আওয়ামীলীগের বিশাল একটি ভোট ব্যাংক থাকা সত্বেও জোটের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ আসনের ভোটাররা সরাসরি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুলাদী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারাদিয়ে জীবন বাঁজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে এনেছি। সেই বঙ্গবন্ধুর দেশে আমরা সরাসরি নৌকায় ভোট দিতে পারছি না। তাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের ভোটাররা সরাসরি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য দলের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি করেছেন।
কে এই মিজানুর রহমান : ছাত্রজীবন থেকে অদ্যবধি তিনি (মিজানুর রহমান) আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মুলাদী মাহমুদ জান পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালে তিনি ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরবর্তীতে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং মুলাদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে একজন তরুন সমাজ সেবক হিসেবে তিনি মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার মাটি, মানুষের সাথে মিশে আছেন। তিনি আলোকিত মুলাদী নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে এলাকার নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি (মিজানুর রহমান) দীর্ঘদিন থেকে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারনা শুরু করেছেন। “আওয়ামীলীগ সরকারের চলমান উন্নয়নের সাথে থাকুন। উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থা রাখুন। আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আওয়ামীলীগ সরকার দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করে। যতোদিন শেখ হাসিনার হাতে আছে দেশ, ততোদিন পথ হারাবে না বাংলাদেশ”। এভাবেই বিভিন্ন শ্লোগান সংবলিত আওয়ামীলীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে দীর্ঘদিন থেকে মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচারপত্র বিলির মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা শুরু করেছেন মিজানুর রহমান। তার এ ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারনা সর্বত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মিজানুর রহমানের মতে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভীষণকে সফল করার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে পূর্ণরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার কোন বিকল্প নেই। তাই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে এ প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, দলের সভাপতি চাইলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে আমি নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে দলকে এ আসনটি উপহার দিতে চাই।
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক
Post Views:
২৫০
|
|