|
১৯৯২ সালে বরিশালে তিনি ষ্টেনো হিসাবে বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করেন, সেই থেকে অদ্যাবধি তার কোন বদলি হয়নি
বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসের স্টেনো সেলিমের দুর্নীতির তদন্ত
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : অবশেষে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে বরিশাল সিভিল সার্জন দপ্তরের অফিস সহকারি মোঃ সেলিম হোসেনের। দুর্নিতীবাজ এই কর্মচারির বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নিতী নজরে আসে বর্তমান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের । সেমতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল থেকে গতমাসে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির প্রধান করা হয় বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাসকে, এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছে সহকারি পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রক ডাঃ আব্দুর জব্বার হাওলাদার এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন মৃধা। তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, এ ধরনের অনিয়ম, দুর্নিতী কিছুতেই বরদাস্ত করা হবেনা। উপযুক্ত প্রমান পাওয়া গেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সুত্র মতে, ওই কমিটি বরিশাল সিভিল সার্জন দপ্তরে ষ্টেনো সেলিমের দুর্নিতীর বিষয়ে প্রমানাদি সংগ্রহ ও সাক্ষ্য গ্রহন করবেন। ইতোমধ্যে স্বাক্ষ্য দাতাদের তাদের নিজ নিজ বক্তব্য প্রদানের জন্য সিভিল সার্জন অফিসে আসার জন্য চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। টানা দুই যুগ বছর একই কর্মস্থলে কর্মরত থেকে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেপড়োয়া হয়ে উঠেছিল সিভিল সার্জন দপ্তরের অফিস সহকারি মোঃ সেলিম হোসেন। চিকিৎসকদের পোষ্টিং দেয়া, দাপ্তরিক কাজে ফরোয়ারডিং, অসুস্থতাজনিত কারন দেখিয়ে কর্মচারিরা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবার সময়, ডায়াগনষ্টিকস এবং ক্লিনিকের অনুমোদন ও নবায়ন করাসহ বিভিন্ন কাজে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার এইসব অনিয়মের মুল কারন হিসাবে স্বয়ং বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বির্বত বলে জানা গেছে। একনাগারে এত বছর নিয়ম বর্হিভূতভাবে কিভাবে অবস্থান করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কর্মকর্তাদের কাজের সুবিধার্থে কাউকে নির্ধারিত সময়ের চাইতে বেশিদিন একই কর্মস্থলে রাখতে পারেন। তবে, ষ্টেনো মোঃ সেলিম ধারনার চাইতেও অধিক সময় অবস্থান করার কারনেই এমন বেপড়োয়া হয়ে উঠেছে বলে তিনি (পরিচালক) স্বীকার করেন। জানা গেছে, বরগুনা স্বাস্থ্য দপ্তরে স্বাস্থ্য সহকারি পদ নিয়ে কর্মরত থেকে ১৯৯২ সালে বরিশালে তিনি ষ্টেনো হিসাবে বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি তার কোন বদলি হয়নি। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, পর্যায়ক্রমে বরিশালের বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক, ক্লিনিক এর সত্বাধিকারিদের সাথে তার একটি সখ্যতা গড়ে ওঠে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নবায়ন নতুন রেজিষ্ট্রেশন, সার্ভে সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখভালের দ্বায়ীত্ব পায় ষ্টেনো সেলিম। আর এতেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন তিনি। জেলায় ডায়গনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স নবায়ন করার সরকারি ফি নতুন-১হাজার ১শ টাকা ভ্যাটসহ। সেখানে ষ্টেনো সেলিম নুন্নতম বিশ হাজার টাকা আদায় করে। ক্লিনিকে ভ্যাটসহ নবায়ন ফির সরকারি ধার্য্য ৭ হাজার ৫শ’টাকা। এক্ষেত্রে ষ্টেনো সেলিম কম করে হলেও বিশ হাজার টাকার নির্ধারন করে দেয়। যারা তার কথামত চলে না, তাদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কাগজপত্র আটকে দেয়া হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে গৌরনদী-আগৈলঝড়া উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক থেকে এ ধরনের অর্থ উত্তোলন করেন তিনি। যার মধ্যে মৌরি ক্লিনিক গৌরনদী, আগৈলঝাড়ায় আদর্শ জেনারেল হাসপাতাল, একই এলাকার দুস্থ্য মানবতা হাসপাতাল থেকে নবায়ন বাবদ বিশ হাজার টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে মাসিক মাসোয়ারা আদায় করে বলেও সুত্র নিশ্চিত করেছে। নগরীর এমন ১০/১৫ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে যাদের আদৌ কোন লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই। ওইসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মাসিক মাসোয়ারা আদায় করা হয় বলেও জানা গেছে। এমনকি যে সব চিকিৎসক সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত আছেন তাদের বদলি বা পদায়ন অথবা যেকোন অফিস আদেশ লেখার জন্য তাকে (সেলিম) কে দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ না করলে কাজ সমাপ্ত করতে গড়িমশি করে বলে সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বরিশাল সিভিল সার্জন দপ্তরে সাবেক এক চিকিৎসকের পদোন্নতি হওয়ার ফরোয়াডিং লিখে দেয়ার জন্র জোরপূবর্ক অর্থ আদায় করেছিল যা ওই চিকিৎসক নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি যে সকল কর্মচারিরা সেচ্ছায় অবসরে গিয়েছে তাদের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করেছে। স্টেনো সেলিম তার এই সকল অবৈধ কর্মকান্ডকে বৈধতার ছোঁয়া লাগাতে অগোচরে বুঝিয়ে দেন এই বলে যে, বরিশাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ও অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের এই আদায়কৃত অর্থের ভাগ দিতে হয়। সবচেয়ে বড় দান মারার সুজোগটি হচ্ছে ক্লিনিকের নতুন লাইসেন্স অনুমোদনের ক্ষেত্রে, এই লাইসেন্স দেয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই। আর তাই ষ্টেনো সেলিম ক্লিনিক মালিকদের এই বলে বোঝায়, যেহেতু ঢাকা থেকে অনুমোদন করিয়ে আনতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন তাই কমপক্ষে ৭০/৮০ হাজার টাকা, অনেক ক্ষেত্রে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অথচ নিয়ম মাফিক লাইসেন্স করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। যার বৃহদাংশই জমা হয় সরকারি কোষাগারে। ডায়াগনষ্টিক এ ক্ষেত্রে নতুন লাইসেন্স ফি সরকারিভাবে ধার্য্য ৩০ হাজার টাকা, অথচ সেখানে নেয়া হয় নুন্যতম ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বরিশার জেলার আওতাধীন কোন প্রতিষ্ঠানের মাসে দুই থেকে পাঁচটি নতুণ লাইসেন্স করার কাজ হাতে পেলেই হল। তবে সুত্র মতে প্রতি মাসে ৮/১০ টি প্রািতষ্ঠানের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এই বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডাঃ বাসুদেব বলেন, অতি শীঘ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। বরিশাল স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক পরিচালক ডাঃ মোঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, কর্মচারিদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার বিধান রয়েছে। তবে, তিনি (পরিচালক) অগোচরে স্বীকার করেন স্টেনো সেলিমের এ ধরনের অনিয়মের কথা তার গোচরিভুত হয়েছে। তিনি স্টেনো সেলিমকে এক পর্যায়ে সতর্কও করেছেন। এদিকে খোজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সেলিম কোন রকম পূর্বানুমতি না নিয়ে আইনজীবি হিসাবে প্রাকটিস করছে, যা সরকারি চাকরি বিধির লংঘন, এমনটাই বলেন স্বয়ং বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মনোয়ার হোসেন। তিনিও বিষয়টি অচীরেই ক্ষতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
Post Views:
১,৫১১
|
|