ভর্তি হওয়া নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা, সামসুলের বাবা পেশায় একজন কৃষক
বরিশাল মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেন সামসুল
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে সামসুল ইসলাম। বরিশাল মেডিকেলে তার মেধাক্রম ১৭৫০। ২৫ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি হতে হবে তাকে। সামসুল এইচএসসি পরীক্ষায় মিরপুর উপজেলার সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। এসএসসিতেও দৌলতপুর উপজেলার চিথলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। পড়ালেখা চলাকালীন অন্যের বাড়িতে প্রাইভেট পড়িয়েছে সে। এইচএসসি পাসের পর শিক্ষকদের সহযোগিতায় কোচিং করে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তিও সুযোগ পেয়েছে সে। কিন্তু ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সামসুলের। সামসুলের বাবা পেশায় একজন কৃষক। নিজের যেটুকু জমি আছে তা চাষ করে সারা বছর কোনোমতে চলে যায় তাদের। তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সামসুল ইসলাম মেঝ। সাগরখালী আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম জানান, সামসুল তার দেখা অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন। যখন সে এই কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য এসেছিল তখন তার কাছে কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। নিজের দারিদ্রতার কথা জানিয়ে বিনা খরচায় ভর্তি নেয়ার অনুরোধ করেছিল। প্রথমে তার কথা আমাদের বিশ্বাস হয়নি। তাই তার কথা সত্য কি-না তা যাচাই করতে আমি নিজেই তাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে তার বাসায় গিয়েছিলাম। চোখে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না এরকম দরিদ্র পরিবারে এত মেধাবী সন্তান জন্ম নিতে পারে। ফিরে এসে বিনা টাকায় সামসুলকে কলেজে ভর্তি করি। সেই সঙ্গে বিনা খরচায় আমরা তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করি। এমনকি পরীক্ষার ফিও আমরা জোগাড় করে দিয়েছি। জানতাম এইচএসসি পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করবে। তার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার পর সে যেন স্বপ্ন পূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যায়। ফলাফল প্রকাশের পর সে কলেজে এসে জানায়, স্যার মেডিকেলে ভর্তির জন্য ঢাকায় গিয়ে কোচিং করা প্রয়োজন। কিন্তু কীভাবে কোচিং-এ ভর্তি হব? কে দেবে কোচিং-এ ভর্তির খরচ? অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, নিজে ব্যক্তিগত ভাবে ৫ হাজার টাকা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে আরও ৫ হাজার টাকা তুলে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সঙ্গে করে কুষ্টিয়ায় নিয়ে এসে টিকিট কেটে ঢাকায় আমার এক ছাত্র যে এই কলেজ থেকে পাস করে বর্তমানে বুয়েটে পড়ছে (পলাশ) তার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে বলে দিয়েছিলাম তুমি ওকে নিজের কাছে রেখে কোচিং করার ব্যবস্থা করে দেবে। এভাবে ঢাকায় সে পলাশের কাছে থেকে মেডিকেল ভর্তির কোচিং করে। তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তার রোল নং ছিল ১৬০১২০ এবং মেধাক্রম ছিল ১৭৫০। সামসুলের মা রকেনা খাতুন জানান, তার তিন ছেলে মেয়েই পড়ালেখায় খুব ভালো। বড় মেয়ে রোকেয়া খাতুনের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে বিথি খাতুন দৌলতপুর উপজেলার লালনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। সামসুলের বাবা আতিয়ার রহমান বলেন, আমার যতটুকু সাধ্য ছিল তার সবটুকুই উজার করে দিয়েছি সামসুলের জন্য। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না? মেডিকেলে ভর্তি এবং পড়াশোনার খরচও অনেক। এত টাকা সে কীভাবে যোগাড় করবে।