|
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতি একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়-হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা
বরিশাল মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ভারতের হাইকমিশনার
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : বরিশাল থেকে নৌবিহারে মেহেন্দিগঞ্জে যাওয়ার পথে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। একই সঙ্গে মেঘনায় জেলেদের ইলিশ ধরার কৌশল দেখে হেসে দেন তিনি। রোববার বানারীপাড়ার চাখারে অবস্থিত শেরবাংলা জাদুঘর এবং বিকেলে বরিশালের বিভিন্ন নদীতে নৌবিহারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। দুদিনের বরিশাল সফরের শেষদিন রোববার বিকেলে নৌবিহারে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতি একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়। ভারত সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং নির্বাচনে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না। তবে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোনো সহযোগিতা চাইলে সহায়তা করতে প্রস্তুত ভারত। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারত মিয়ানমারকে বলেছে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাখাইনের বাস্তুহারা লোকদের ঘরবাড়ি নেই। রোহিঙ্গারা ফেরত গিয়ে সেখানে থাকবে কোথায়? ফলে রাখাইনে গৃহনির্মাণ শুরু হয়েছে। গৃহনির্মাণ শেষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে ভারত সরকার মিয়ানমারের ওপর কোন চাপ সৃষ্টি করবে কি-না জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে। দ্রুতসময়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে শুরু করবে বলে আশা রাখি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকারের চলতি মেয়াদেই ভারত সরকারের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র কয়েকদিন। এ বিষয়ে ভারত সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন তার ইনটেনশন আছে। তিস্তা চুক্তি হবে। হবে হবে করে হচ্ছে না। তবে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত সরকারের ইনটেনশন ক্লিয়ার আছে। এছাড়া বরিশালের শতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম, শের-ই-বাংলা জাদুঘর এবং পিরোজপুরের নেছারাবাদে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কলেজ দেখে অভিভূত হন ভারতীয় হাইকমিশনার। বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেবাজ গ্রামে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম পরিদর্শন করেন তিনি। আশ্রমের মূল ভবনে মহাত্মা গান্ধী আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করে পরিদর্শন বইতে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা লিখেছেন ‘মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে এই আশ্রম ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে আমি অভিনন্দন জানাই। পরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অমৃত স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সুধী সমাবেশে শ্রিংলা বলেন, এই আশ্রমে আসতে পেরে আমি গৌরব বোধ করছি। আশ্রমে অনেক জায়গা আছে, অবস্থানও ভালো। অবকাঠমোগত উন্নয়ন এবং জনকল্যাণকর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই আশ্রমকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে। এর আগে মানবেন্দ্র বটব্যল শতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রমের বর্তমান অবস্থা এবং ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরে শ্রিংলার উদ্দেশে বলেন, শতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ অঞ্চলের মানুষ মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের আদর্শকে ধারণ করে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সালেহ মুনতাজির ও কলসকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদতুর রাজ্জাক মনু। উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, সদস্য ডা. রনজিৎ মল্লিক প্রমুখ। এর আগে সকালে হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা যান পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানা গ্রামে। সেখানে কবিগুরুর নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথ কলেজে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। এরপর পার্শ্ববর্তী আদমকাঠি গ্রামে নদীর ওপর ভাসমান বাজার ও পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করেন। রবীন্দ্রনাথ কলেজে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ সালে কুড়িয়ানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুলে ধরলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান সময়কে সোনালি অধ্যায় আখ্যায়িত করে বলেন, এ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। তিনি রবীন্দ্রনাথ কলেজে ভারত সরকারের বৃত্তি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঠাগারের জন্য কিছু বই উপহার দেন। রবীন্দ্রনাথ কলেজে অন্যদের মধ্যে দেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান, শেরেবাংলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফাইয়াজুল হক রাজু, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যক্ষ বিপুল বিহারী হালদার, ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার, উপাধ্যক্ষ সঞ্জিব কুমার হালদার প্রমুখ। ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি রাজেশ উইকে, নবনিতা চক্রবর্তী, মিডিয়া এটাশে রঞ্জন মণ্ডল, স্বরূপকাঠির ইউএনও আবু সাঈদ, ইউপি চেয়ারম্যান আশিষ বড়ালসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. মুনসুর আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু, রহমান বিনতে শফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক, সৈয়দ ওমর ফারুক, বিপুল বিহারী হালদার সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শাহ, সুভাষ সরকার, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন সহ সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ। হাইকমিশনারকে মেহেন্দিগঞ্জ প্রেসক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। মতবিনিময়কালে হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর বহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কের বীজ বপন করা হয়েছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে তা আরও সুদৃর হয়েছে। অনুষ্ঠানে শিশুকিশোররা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন এবং অনুষ্ঠানের শুরুতে ভারত বাংলাদেশের মৈত্রী স্বারক সরুপ উপজেলা চত্তরে একটি গাছের চারা রোপন করেন।
Post Views:
১,৮৩৪
|
|