|
চেষ্টা করছি মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার ও অবৈধ যানবাহনকে বিদায় করে দিতে-ডিআইজি শফিকুল ইসলাম
বরিশাল বিভাগীয় মহাসড়ক ৩৪০০০ থ্রি-হুইলারের দখলে
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : অবৈধ থ্রি-হুইলার ও ত্রুটিপূর্ণ নসিমন-করিমনের জন্য বরিশাল বিভাগের মহাসড়কগুলো অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার এসব তিন চাকার যানের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সরকারের সিদ্ধান্ত আর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেই অবাধে চলছে এসব যানবাহন। তবে পুলিশ প্রশাসন বলছে, চলতি বছরের মধ্যে বিভাগের সব মহাসড়কে থেকে থ্রি-হুইলার তুলে দেওয়া হবে। পরিসংখ্যান বলছে, বিভাগের এক হাজার ৬৫০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক দখলে রেখেছে অন্তত ৩৪ হাজার থ্রি-হুইলার। এরমধ্যে দুই তৃতীয়াংশ যানবাহনেরই কোন ফিটনেস নেই। এসব যানবাহনের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত করা। বিধায় গতি ও চলাচলের উপযুক্ত নয়। সে কারণে নিয়মিতই ঘটছে দুর্ঘটনা। মূলত: বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ডিজেলে চালিত এসব ক্ষুদ্র যানবাহনের অধিকাংশই লাইসেন্সবিহীন, অবৈধ। জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল, খুলনা-বরিশাল, বরিশাল কুয়াকাটা, বরিশাল-পিরোজুপর এবং বরিশাল-পাথরঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনগুলো ভয়াবহভাবে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে। এসব ক্ষুদ্র যানবাহনগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, সিএনজি-অটোরিকশা, ডিজেল চালিত মাহিন্দ্রা এবং মফস্বলে কারিগর দিয়ে তৈরি নসিমন ও টেম্পু। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দেওয়া তথ্য মতে, ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার ইজিবাইক, ছয় হাজার নসিমন, তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ মাহিন্দ্রা, দুই হাজার ৫০০ সিএনজি-অটোরিকশা, এক হাজার করে লেগুনা ও টেম্পু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মহাসড়কগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বরিশাল বাসÑশ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও বাস মালিক আল-আমিন বলেন, ‘থ্রি-হুইলারের কারণে বাস সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। তিন চাকার এসব গাড়ি যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ও মালামাল তুলা হয়। তখন বাস চলাচলে বিঘœ ঘটে। এমনিতেই বরিশাল অঞ্চলের সড়কগুলো অনেক সরু। ফলে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারে না। বরিশাল অঞ্চলে ঘটা অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অবৈধ থ্রি-হুইলারের কারণে।’ বাস চালক বাহাদুর বলেন, ‘আমরা সঠিক গতি নিয়ে মহানসড়কে গাড়ি চালাতে পারছি না। মহাসড়কের নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালাতে গেলেই সামনে পড়ে শম্বুক গতিতে চলা থ্রি-হুইলারগুলো। ফলে ব্রেক কষেই গাড়ি চালাতে হয়।’ বাহাদুর অভিযোগ করেন, ‘থ্রি-হুইলার যারা চালায় তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ এবং নূন্যতম অভিজ্ঞতা। ফলে ওইসব গাড়ির কারণে বাস-ট্রাককেও দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়।’ মাত্র কয়েকদিন আগে শেষ হওয়া ঈদের দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে থ্রি-হুইলারের সাথে। এর কারণ স্বরুপ জানা গেছে, বাস-ট্রাকের দ্রুত গতি। অথচ একই সড়কে শ্লথ গতিতে চলে থ্রি-হুইলারগুলো। বুয়েটের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ১৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে ধীর গতিতে চলা যানবাহনের কারণে। যারমধ্যে রয়েছে দেশের মোট সড়কের তিন হাজার ৭৯০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক। বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, বরিশালের মধ্যে ৭০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ও এক হাজার ৫৮০ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কে ধীর গতির যানবাহনের দরুণ দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। এই একই কারণে পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। ঢাকা-বরিশাল রুটের বাস চালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘থ্রি-হুইলারের কারণে বাস মালিক ও চালক এবং যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকে।’ বরিশালের বাসিন্দা, মাহিন্দ্রা মালিক মইন শিকদার বলেন, ‘প্রত্যেক সপ্তাহে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে তার চোখের সামনেই তিন থেকে সাতটি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখছেন।’ বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি বরিশালের মহাসড়কে যেন অবৈধ যানবাহনগুলো চলাচল করতে দেওয়া না হয়। কিন্তু সে দাবির বাস্তবায়ন হয় না।’ তিনি মনে করেন, সরকার যদি নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে চায় তাহলে অবশ্যই লাইসেন্সবিহীন যানবাহনগুলোকে মহাসড়কে উঠতে দেওয়া যাবে না। যদিও প্রশাসন ঈদে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি এ বছরের মধ্যে মহাসড়ক থেকে থ্রি-হুইলার ও অবৈধ যানবাহনকে বিদায় করে দিতে। আশাকরি আমরা অল্প দিনের মধ্যে এতে সফল হতে পারব’।
Post Views:
১,২২০
|
|