|
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার নামে দুর্নাম ছড়াচ্ছেন – মনিরা
বরিশাল বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে নেত্রী মনিরার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
বরিশাল সরকারী ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে পটুয়াখালীর মেয়ে বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টোর্সের ছাত্রী ছাত্রলীগ নেত্রী মনিরার কারনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে হলের আবাসিক সাধারন ছাত্রীরা। বিতর্কিত এ নেত্রীর বিরুদ্ধে গুরত্বর অভিযোগ উঠেছে সে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা সেবন ও হোস্টেলের ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে দেহ ব্যবসায় নামাচ্ছেন। সাথে সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন সিট বাণিজ্য ও ডায়েনিং দখল করে লুটপাট। যদিও মনিরার দাবী সে কোন অন্যায় কাজ করে না। হয়তো তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গ্র“প তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে প্রায় ১ ডজন নেত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে সম্পর্কটা এখন দা-কুমড়োর মতো! পূর্বে বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী হেনা আক্তার রাম রাজত্ব কায়েম করলেও বেশ কিছুদিন আগে মহানগর ছাত্রলীগের কথিত নেতা পার্সপোট সোহাগের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে গত ৩০ অক্টোবর হোস্টেল ছাড়তে বাধ্য হয় হেনা। বিতর্কিত এক হেনা চলে যাওয়ার পর আরেক নেত্রী মনিরা হোস্টেলে একক আধিপত্য বিস্তার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সাথে সাথে সে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা বাণিজ্য, দেহ ব্যবসা, সিট বাণিজ্য, ডাইনিং দখলসহ অসংখ্য অনৈতিক কর্মকান্ড। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রীদের মারধরের মত অভিযোগ রয়েছে সুন্দরী এ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। তার অনৈতিক কর্মকান্ডে হোষ্টেলের সাধারন ছাত্রীরা অতিষ্ঠ ও চরম ক্ষুব্ধ। যা নিয়ে তাদের মাঝে যেকোন সময় রক্তপাতের আশংকা রয়েছে। মনিরার অবৈধ প্রভাবে অতিষ্ট ছাত্রী নিবাসের একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মনিরা নিজেকে কলেজ হোস্টেলের নেত্রী ও কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিএম কলেজে পড়তে আসা ছাত্রীরা বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে উঠতে হলে মনিরার হাত ধরেই উঠতে হয় বলে অঘোষিত নিয়মে পরিনত হয়েছে। মনিরা তার সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন হোস্টেলের গেটে অবস্থান করে। কোন ছাত্রী হোস্টেলে সিট পাওয়ার জন্য আসলে গেটে অবস্থান করা মনিরা তাদের ধরে সিটের ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলে সরকারী নির্ধারিত সিট ভাড়ার চেয়ে ৩ থেকে ৫ গুন বেশি টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সে। অনেক সময় টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর হোস্টেলে সিটের ব্যবস্থা করে না দিয়ে হাতিয়ে নেয়া টাকা মেরে দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে এ নেত্রী মনিরার বিরুদ্ধে। অন্যদিকে হোস্টেলের ডায়েনিং নিয়েও মনিরার বিরুদ্ধে রয়েছে মহা কেলেঙ্কারী। জানা গেছে, গত ৩ মাস ধরে ডায়েনিং পরিচালনা করে আসছে নেত্রী মনিরা। সে ডায়েনিং পরিচালনা শুরু থেকেই হোস্টেলের ছাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী জানায়, প্রতিমাসের শেষে হোস্টেলে একদিন ভাল খাবারের আয়োজন করার কথা থাকলেও গত ৩মাস অবধি মনিরা ডায়েনিং পরিচালনা করায় তাদের কপালে একবেলাও ভাল-মন্দ খাবার জুটেনি। বরং সম্প্রতি এক ছাত্রী মনিরার কাছে আবদার করে বলেছিল আপু মাস শেষে একদিন ভাল খাবারের কথা থাকলেও আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর তা খাওয়ানো হচ্ছে না। এসময় নেত্রী মনিরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে উক্ত ছাত্রীর উপর চড়াউ হয় হলে জানাগেছে। মনিরা ডায়েনিং পরিচালনার পর থেকেই খাবারের মান এতই খারাপ খাওয়াচ্ছে যে, খোদ হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এস.এম নাসির উদ্দিনের কাছে নালিশ করতে বাধ্য হয়েছে হোস্টেলের বাসিন্দারা। তবুও ভূক্তভোগী ছাত্রীদের খাবারের মান এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উন্নতি হয়নি। মাস শেষে ডায়েনিং এর খাবারের টাকা ২জন ম্যানেজারের মাধ্যমে উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও নেত্রী মনিরা নিজেই সাধারন ছাত্রীদের রুমে রুমে গিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা তুলছেন। এদিকে নেত্রী মনিরার বিশ্বস্ত সহযোগী ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্রী জান্নাত, সারমিন আক্তার, ইতি আক্তার, ফাতেম আক্তার কনা, মারিয়া হোসেন ডায়েনিং এর খাবার ফ্রি খাচ্ছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি আমাদের বরিশালকে আরও নিশ্চিত করেছে, ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টোর্সের ছাত্রী নেত্রী মনিরা ও ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতের সাথে এক শিক্ষকের নিষিদ্ধ সম্পর্ক রয়েছে। গত ঈদের সময় গোটা হোস্টেল কর্তৃপক্ষ নোটিশের মাধ্যমে বন্ধ ঘোষনা করলেও জান্নাত হোস্টেল না ছেড়ে তার রুমেই অবস্থান করে। সেসময় ফাকা হোস্টেলে জান্নাত সেই শিক্ষকের সাথে নিষিদ্ধ গোপন অভিসারে মিলিত হয় বলে গাঙ্গুলীর বাসিন্দাদের মাঝে কানাঘুষা চলছে। অসমর্থিত একটি সূত্র নেত্রী মনিরার চারিত্রিক বিষয় নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন তুলেছে। যদিও নেত্রী মনিরার চরিত্রের নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ড বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ার কল্যানে ইতিমধ্যে সাধারন মানুষ জানতে পেরেছে। সূত্র জানায়, হোষ্টেলের নিতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর স্বপন কুমার পাল তার নিজ কার্যালয়ে গত ২২ অক্টোবর বিএম কলেজের সকল হোস্টেল সুপার, সহকারী সুপারদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসে ছিলেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এ.এস.কাইয়ুম উদ্দিনসহ অনেকে। সেদিনের সভায় সবার সর্বসম্মতিক্রমে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যার মধ্যে প্রধান হল সন্ধ্যার পর হোস্টেল থেকে কোন ছাত্রী বাহিরে বের হতে পারবে না ও ঢুকতেও পারবে না এবং বিবাহিত কোন ছাত্রী হোষ্টেলে থাকতে পারবে না। এ সিদ্ধান্তসমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়ে কলেজ ও হোষ্টেলের নোটিশ বোর্ডেও টানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু হোস্টেল কর্তৃপক্ষের সেই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে মনিরা জোরপূর্বক রাত বিরাতে হোস্টেল থেকে বাহিরে বের হয়ে যাচ্ছে। নেত্রী মনিরাকে সন্ধ্যার পর হোস্টেল থেকে বের না হতে কর্তৃপক্ষ বার বার বারন করার পরও সে তাদের কথায় কর্নপাত করছে না। গত সোমবার নেত্রী মনিরা ও তার সহযোগী ফাতেমা আক্তার কনা গভীর রাত করে বাহির থেকে হোস্টেলের মধ্যে ঢুকে। সোমবারের রাতে হোস্টেলে দেরি করে ঢোকার কারন এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে মনিরা বলেন, জরুরী কাজে সেদিন বাহিরে গিয়ে ছিলাম। বিষয়টি সম্পর্কে হোস্টেল সুপার এস.এম নাসির উদ্দিন স্যারকে অবহিত করেছিলেন। জানা গেছে, মাঝে মাঝে মনিরা রাতে হোস্টেল থেকে বের হয়ে নিষিদ্ধ কোন অভিসারে মিলিত হয়। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র আমাদের বরিশালকে নিশ্চিত করেছে, রাতে হোস্টেলের গেট খুলে সেখানে অপেক্ষমান প্রাইভেটকার ও মটরসাইকেলের পিছনে চেপে প্রায়ই বাহিরে যায় নেত্রী মনিরা। মাঝে মাঝে রিক্সায় চেপেও যেতে দেখা গেছে তাকে। অনেক সময় গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তা প্রহরী শিপ্রা দেবনাথকে বখশিস দিয়ে আবার অনেক সময় আত্মীয় স্বজনদের অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে বা জরুরী প্রয়োজনে নেতা ডেকেছে বলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বেড়িয়ে যায় সে। এ নেত্রীর অনৈতিক কর্মকান্ড হলের দায়িত্বশীল শিক্ষকরা সবকিছু জানলেও ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্রলীগ নেত্রী হওয়ায় তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সাহস পায় না কেউ। একটি অসমর্থিত সূত্র নিশ্চিত করেছে, মনিরা বিভিন্ন সময় ঢাকা, কক্সবাজার, কুয়াকাটা, নগরীর আবাসিক হোটেল ছাড়াও ছেলে বন্ধুদের সাথে নিষিদ্ধ অভিসারে মিলিত হয়েছে। মাঝে মাঝে তার অনুসারী একাধিক ছাত্রীকে নিয়েও গোপন অভিসারে পাড়ি জমায় সে। মনিরা বলে বেড়াচ্ছে ইতিপূর্বে সে ভিপি মঈন তুষার, জি.এস নাহিদের দল করেছে, বর্তমানে সে বরিশাল বিএম কলেজে বাকসু নেতা ফয়সাল আহমেদ মুন্নার লোক। হোষ্টেল কর্তৃপক্ষ ও কলেজ অধ্যক্ষ তার কিছুই করতে পারবে না বলেও হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে যৌবনে ভরপুর বিতর্কিত এ সুন্দরী নেত্রী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোদ বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসে ইয়াবা আসক্তি একাধিক ছাত্রী রয়েছে। তাদেরকে প্রতিনিয়ত মনিরা ইয়াবা সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে। অনেক ইয়াবা আসক্তি ছাত্রীকে মাদকের টাকা জোগার করতে তাদেরকে দেহ বাণিজ্যেও নামিয়েছে সে। প্রসঙ্গত, কথিত এই নেত্রী গত ১১ নভেম্বর ছাত্রলীগের একটি দলীয় কর্মসূচীতে কিছু ছাত্রীকে ভয় ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক নেয়ার চেষ্টা করে। সেসময় অনেক ছাত্রী তার কথামত কর্মসূচীতে না যাওয়ায় তাদের রুমের বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে রাখে নেত্রী মনিরা। যদিও বিষয়টি হল সুপার এস.এম নাসির উদ্দিন কানে পৌছলে সে তালা ভেঙে ছাত্রীদের দরজা খুলে দেয়। সেদিন অনেক ছাত্রী মনিরার কথায় কর্ণপাত না করায় এখন সেই ছাত্রীরা মনিরার চাপের মুখে রয়েছে বলে জানাগেছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছরের ১৯ জুলাই হোস্টেলের গাছের পেয়ারা খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ নেত্রী মনিরা। সে সময় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের করা হয়। এছাড়াও গত বছরের ৯ মে সিনিয়র জুনিয়রকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়ায় ছাত্রলীগ নেত্রী মনিরা। সে সময় দুই দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, কক্ষ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। বরিশাল বিএম কলেজে বাকসু নেতা ফয়সাল আহমেদ মুন্নার অনুসারী বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টোর্সের ছাত্রী বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের আবাসিক ছাত্রী মনিরা ছাত্রীনিবাসের ক্যান্টিনে আরেক বিতর্কিত নেত্রী ঝুমুর ও জান্নাতের সাথেও সংঘর্ষে জড়ায়। শুধু এটাই নয় ২০১৪ সালে কন্ট্রাক্ট জাল ভোট দেয়ার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়েছিল মনিরা। সে সময় মনিরাসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রী আহত হয়ে হাসপাতালের ভর্তি হয়েছিল। এবিষয়ে মনিরার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সে জানান, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তার নামে দুর্নাম ছড়াচ্ছেন। হোস্টেলের বাসিন্দাদের কাছে তার জনপ্রিয়তা বেশি বলে দাবী তার। প্রিয় পাঠক, বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রীনিবাসের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত আরও একাধিক কথিত নেত্রীর অনৈতিক কর্মকান্ডের স্ববিস্তর তথ্য দৈনিক আমাদের বরিশাল পত্রিকার বার্তা বিভাগের হাতে। চলছে অনুসন্ধান।
সূত্র : দৈনিক আমাদের বরিশাল
Post Views:
৪,১৩৩
|
|