|
ছাত্র তরিকুলকে রামদা, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা
বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রলীগ নেতা সৈকতের বক্তব্যে তোলপাড়!
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : কোটা আন্দোলনে কেউ গণধোলাইয়ে মারা গেলে ছাত্রলীগ তার দায় নেবে না বলে বক্তব্য দিয়েছেন বরিশালের এক ছাত্রলীগ নেতা। কোটা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গণধোলাইতে কেউ নিহত হলে দয়া করে ভুল ভাইবেন না।’ তার এমন বক্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা দাবিদার এ ছাত্রের নাম খায়রুল হাসান সৈকত। তবে ছাত্রলীগে তার কোনো পদ পদবী নেই বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়াও নগরীর সরকারি বিএম কলেজে কোটা আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়ার সময় সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনকে নিয়ে বিরুপ কথা বলে আন্দোলনকারীদের হুমকি দেন সৈকত। যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেদিন রাতেই ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেন তিনি। সৈকতের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত ছাত্রলীগ নেতারা। ফেসবকু টাইমলাইনে খায়রুল হাসান সৈকত লেখেন, ‘অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানানো যাচ্ছে যে, কোটা আন্দোলনের নামে সরকারি বিএম কলেজের শান্ত পরিবেশকে অস্থিতিশীল করা হলে বিএম কলেজ ছাত্রলীগ কঠোর রূপ ধারণ করতে বাধ্য হবে। সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াত শিবির ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতা করবে আর ছাত্রলীগ আঙুল চুষবে সেটা ভাবা বোকামি। আজ জীবনের সর্বোচ্চ ধৈর্য্য ধারণ করেছি, পরবর্তী দেখায় গণধোলাইতে কেউ নিহত হলে দয়া করে ভুল ভাইবেন না।’ আর ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কোটা আন্দোলনে বাধা দিলে আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা আমাদের মত আন্দোলন করছি। এতে আপনারা বাঁধা দিচ্ছেন কেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। এসময় সৈকত আন্দোলনকারী এক ছাত্রীকে হুমকি দেন। বলেন, এটা রাজনৈতিক ইস্যু। এটা নিয়ে বিএম কলেজে কিছু হবে না। সৈকত আন্দোলনকারীদের মধ্যে যে ছাত্রলীগ কর্মী রয়েছে তাদের আন্দোলন থেকে সরে যেতে বলেন। নতুবা কমিটিতে তাদের কোনো পদ পদবী দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন। সৈকত আন্দোলনকারীদের মধ্যে থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের বলেন, সোহাগ-জাকিরের কমিটি বাতিল হওয়ার কারণ হল তারা কোটা আন্দোলন দমাতে পারেনি। তাই তাদের কমিটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা পরিশ্রম করি, তাই বলে তোমাদের আন্দোলন করতে দেব সেটা হবে না। আন্দোলন হবে না বিএম কলেজে। এরপর আন্দোলনরত এক ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীতাহানির অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ নেতা সৈকতের বিরুদ্ধে। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন সিনিয়র নেতারা জানান, আসলে এই কাজটি ঠিক হয়নি। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ছাত্রলীগের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। অবশ্য তার কোনো পদ নেই ছাত্রলীগের কোনো ইউনিটে। তাকে আমরা ছাত্রলীগ নেতাও বলতে পারি না। তবে ছাত্রলীগ নেতা খায়রুল হাসান সৈকত জানিয়েছেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের কথা বলেছে। সেখানে এই আন্দোলন ভিত্তিহীন। এই আন্দোলনের পেছনে আওয়ামী লীগের বিপরীত শক্তির হাত রয়েছে। কলেজের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য এই মিছিল করা হচ্ছে। যেটা প্রতিরোধ করেছি আমরা। গত সোমবার (২ জুলাই) বিকালে কোটা সংস্কার অন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করলে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের মাস্টর্সের ছাত্র তরিকুলকে রামদা, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে তার ডান পায়ের দুটি হাড় হাঁটুর নিচে থেকে ভেঙে যায়। মাথায়ও গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের উপরও চড়াও হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। শহীদ মিনারে মানববন্ধন করতে যাওয়া আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন সবাই। শিক্ষক-অভিভাবকরা প্রতিবাদ জানান। পরে কোটা বাতিল, পর্যালোচনা ও সংস্কার বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সাত সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে সরকার। তাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
Post Views:
১,৬০৮
|
|