Current Bangladesh Time
রবিবার সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ১২:২৩ অপরাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশাল প্লাস্টিক-পলিথিন মুক্ত হবে 
Saturday November 17, 2018 , 12:38 pm
Print this E-mail this

বর্জ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে সম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব

বরিশাল প্লাস্টিক-পলিথিন মুক্ত হবে


সাইদ পান্থ : বরিশালের প্লাস্টিক, পলিথিনসহ সব ধরনের র্বজ্য দিয়ে তৈরি হবে জ্বালানী তেল ডিজেল, এলপিজি গ্যাস, জেড ফুয়েল, বাযোগ্যাস ও সার। বরিশালের কৃতি সন্তান আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী আনজুমান আরা ও তার স্বামী বিজ্ঞানী ড. মইনউদ্দিন সরকার বাদল এই উদ্ভাবনী প্রযেক্ট বাস্তবায়ন হতে চলেছে বরিশাল সিটি এলাকায়। এই বিষয়ে নিয়ে বরিশালের নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ’র সাথে স্বাক্ষাত করে এই প্রজেক্টের কর্মপকিল্পনা দেখানো হয়েছে। প্রথম অবস্থায় এই প্রজেক্টটি পাইলট আকারে বরিশালে বাস্তবায়ন হবে। পরে বরিশালে প্লান্ট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটা বাস্তবায়ন হলে বরিশাল তথা বাংলাদেশ হবে র্বজ্য ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। পর্যায়ক্রমে বরিশাল থেকেই ছড়িয়ে পরবে সারা বাংলাদেশে। আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কেও এই প্রজেক্টের আওতায় আনা হবে। বরিশাল সিটি মেয়র তার পরিকল্পনায় এই প্রজেক্টটি নিয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যে স্থান নির্ধারণ করার জন্য বিসিসির প্রকৌশলী বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী আনজুমান আরা বলেছেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রো ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ডিভিডি প্লেয়ার, সিএফএল বাল্ব, পানির বোতল, খেলনা, ব্যাগসহ প্লাস্টিকের বহু পণ্য ব্যবহার হচ্ছে প্রতিদিনকার জীবনে। কয়েক বছর ব্যবহারের পর যখন এসব পণ্যের কর্মক্ষমতা শেষ হয় তখন তাদের ঠিকানা হয় ডাস্টবিনে। বিভিন্ন আবর্জনা ফেলার স্থান হিসেবে আমাদের দেশের নদী-নালা, ডোবা এমনকি উন্মুক্ত স্থানও ব্যবহার করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো কোনো বর্জ্য থেকে লোহা অংশ রেখে বাকিটা ফেলে দেন। বাংলাদেশে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে দেশে প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট ও প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। একইভাবে শুধু মাত্র বরিশাল সিটিতে প্রতি বছর ২৭ মেট্রিকটন বর্জ্য (ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট ও প্লাস্টিক) তৈরি হয়। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে দেশের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তৈরি সম্ভব বলে মনে করেন বিজ্ঞানী ড. মইনউদ্দিন সরকার বাদল ও আনজুমান আরা। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি তেল উৎপাদন করে নজির সৃস্টি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই দুই বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানী আনজুমান আরা বলেন, ‘২০০৫ সালে মার্কিন সরকার আমাদের একনিষ্ঠ গবেষণার জন্য ব্রিজপোর্টে বরাদ্ধ করে ৫৭ হাজার বর্গফুট জায়গা। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা বিনিয়োগ পেয়েছি দেড় কোটি ডলার। এই অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও স্যানিটেশন কোম্পানির কাছ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য কিনে সরাসরি তেল উৎপাদনে নেমে পরি আমরা।’ বিজ্ঞানী ড. মইনউদ্দিন সরকার বাদল জানান, প্লাস্টিক ছাড়া বর্তমান পৃথিবীর কথা ভাবা যায় না। একুশ শতকে পৃথিবীর ব্যাপক পরিবর্তন মানুষকে প্রযুক্তি নির্ভর করে ফেলেছে। তারা নিয়মিতভাবে সহজলভ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছে। আমরা গবেষণায় দেখেছি, বিশ শতকে পৃথিবীতে উৎপাদিত হয়েছে ৬০০ কোটি টন প্লাস্টিক। যে প্লাস্টিক মানুষ ব্যবহার করে তা পরিবেশের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কারণ প্লাস্টিকের ক্ষয় হয়না, নষ্ট হয় না। ড্রেন, নালা, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। প্লাস্টিক বর্জ্যের ঝুঁকি মোকাবিলা ও বিকল্প জ্বালানি তৈরি নিয়ে আমি গবেষণা শুরু করি। আমরা সফল হয়েছি। প্লাস্টিক আসলে এক রকমের অশোধিত তেল। এই তেল ঠান্ডা করে যে কোনো আকৃতি দেওয়া যায় এবং সংরক্ষণ করা যায়। এর একটি অংশ দিয়ে শপিং ব্যাগ, পাত্র, খেলনা ও নানা রকমের শো-পিস তৈরি করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা নানা বাধাঁর সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেসব বাধাঁ অতিক্রম করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য বছরে ২০ থেকে ৩০ কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক উৎপাদনের ১৩ শতাংশ কঠিন বর্জ্যে পরিণত হয়। সেখানকার পরিবেশ রক্ষা সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর তৈরি হয় পাঁচ কোটি টন প্লাস্টিক সামগ্রী। তার তিন কোটি দুই লাখ টন একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। এক শতাংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য, বাকিটা সরাসরি পরিবেশ দূষিত করে। কিছু গিয়ে পড়ে সাগরে। বাংলাদেশের বরিশাল তথা সারা দেশের চিত্র বেশ উদ্বেগজনক। কারণ প্লাস্টিক বর্জ্যরে বিকল্প ব্যবহার নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যা পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। পরিবেশের এই বিপুল ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া এবং প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিছুটা হলেও রোধ করা সম্ভব। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে অপরিশোধিত তেলে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন ৭০৭ থেকে ৭৫২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা। আর এ প্রক্রিয়ায় যে তেল উৎপাদন করা হবে, তা বাজারের অন্য জ্বালানি থেকে আলাদা নয়। বরং আরও উন্নত। এই জ্বালানি দিয়ে গাড়ি, জেনারেটরসহ সব রকমের ইঞ্জিন চালানো সম্ভব। আর প্রতি গ্যালন তেল তৈরিতে ব্যয় হবে মাত্র এক ডলার। আনজুমান আরা ও ড. মইনউদ্দিন সরকার নিউ ইর্য়কের ব্রিজপোর্ট ও নিউজার্সিতে প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। তার কোম্পানির নাম  Waste Technologies LLC (WTL)। শুধু প্লাস্টিক থেকে তেল তৈরির কাজ করছে এই কোম্পানি। এই তেলের নাম ডাব্লিউটিএল ফুয়েল। ড. সরকার এই প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান, উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানীদের প্রধান এবং আনজুমান আরা প্রতিষ্ঠানের কো-ফাউন্ডার ও নির্বাহী পরিচালক। তাদের কোম্পানির পাশাপাশি এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তেল উৎপাদন করছে আরও একটি কোম্পানি। তবে সরকার জানান, ডাব্লিউটিএল ফুয়েলের বিষেশত্ব এটি পরিবেশবান্ধব। এতে কোনো সালফার থাকবে না। অন্য যারা এই জ্বালানি তৈরি করছে তাতে সালফার রয়েছে। সালফার থাকার কারণে এগুলো যখন ব্যবহারিত হচ্ছে তখন বাতাসে সালফার-ডাই-অক্সাইড সরাচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে উৎপন্ন ৯৫ শতাংশ তেল, বাকি ৩ ভাগ হালকা গ্যাস, ১ ভাগ অবশিষ্ট বর্জ্য থেকে যাবে। এই বর্জ্য যেন পরিবেশকে ক্ষতি না করে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দেশে প্রতি বছর ২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন বর্জ্য হয় এই বর্জ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে সম্পদে রূপান্তরিত করা সম্ভব।




Archives
Image
বরিশালে জসিম উদ্দিনের অস্ত্র জমা নিয়ে গনমাধ্যমে তথ্য বিভ্রাট
Image
ইউনূস-মোদি বৈঠক হবে কিনা, যা বলছেন বিশ্লেষকরা
Image
দিল্লি হয়ে শনিবার ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু
Image
ছুটিতে থাকা পুলিশ সদস্যের কাণ্ড : প্রকাশ্যে তরুণকে মারতে মারতে থানায়
Image
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর আরেক ‘কারিগর’ গ্রেপ্তার