এই পুলিশ কর্মকর্তা বিকাশের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন
বরিশাল পুলিশের ঘুষ লেনদেন ফাঁস !
মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : এমনিতেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকরা রাজপথে নেমে আসায় পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সেই প্রশ্নবানে জর্জরিত বরিশাল পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এবার উজিরপুর পুলিশের একটি ঘুষ লেনদেনের কাহিনী ফাঁস হওয়ায় দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল ইসলাম এক মাদক বিক্রেতাকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। কিন্তু সেই মাদক বিক্রেতার পরিবারের সাথে রফাদফায় পড়ে মাত্র ১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করেছেন। এমনকি সেই রফাদফা শেষে কিভাবে ঘুষ লেনদেন করেছেন তা ফাঁস হয়ে গেছে। মাদক বিক্রেতার মা রেবা বেগম কিভাবে ঘুষের টাকা মিটিয়েছেন সেই বিষয়ের একটি ভিডিওচিত্র এখন সকলের মুঠোফোনে। যেই বিষয়টি নিয়ে খোদ থানা পুলিশও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার শিকারপুর এলাকা থেকে মোশারেফ খানের ছেলে শামিম খানকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন এএসআই আমিনুল ইসলাম। রাতভর থানা হেফাজতে রেখে আসামীর পরিবারের সাথে মুঠোফোনে রফাদফা চলে তার। সকাল বেলা ওই মাদক বিক্রেতার মা রেবা বেগম থানায় আসলে তার ছেলেকে রিমান্ডে নেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। যদিও এক্ষেত্রে কম পরিমান ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এএসআই। কিন্তু পুরো ৫০ হাজার টাকা দেওয়া অসম্ভব বিষয়টি অবহিত করলে ওই এএসআই একপর্যায়ে ৩০ হাজার ও সর্বশেষ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতেও শামিম খানের মা অপারগতা প্রকাশ করলেও সবশেষে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তবে ৫ হাজার টাকা নিলেও ইয়াবা দেখিয়েই চালান করার দাবি রাখেন এএসআই অমিনুল ইসলাম। কিন্তু প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন পরিমানে কম দেখাবেন। অবশ্য তিনি করেছেনও তাই। লেনদেনের পরে চালান করলেন মাত্র ১০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে। মাদক বিক্রেতার মায়ের অভিব্যক্তি হচ্ছে, পুলিশ যে পরিমান টাকা দাবি করেছিল সেটা দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে সবশেষে হাতের বালা মাত্র ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে সেই টাকায় ঘুষ মিটিয়েছেন। স্থানীয় রুবেল খান নামে এক ব্যবসায়ির বিকাশের (০১৯৭৮-১৮৪১৪৮) দোকান থেকে ওই টাকা এএসআই আমিনুল ইসলামের ০১৭১০-৭৮৮৯৭৫ নম্বরের মোবাইলে তিনি পাঠিয়েছেন বলে জানান। এমনকি টাকা পাওয়ার বিষয়টি তার স্বজন জলিল খান ফোন দিয়ে ওই এএসআইর কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েছেন। মূলত: এই পুরো ঘুষ লেনদেনের ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে তথ্য সংগ্রহে দৌড়ঝাপ শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করেন সাংবাদিকরা। একপর্যায়ে বেরিয়ে আসে আসল ঘটনাটি। যদিও এই অভিযোগ সমূলে অস্বীকার করেছেন এএসআই আমিনুল ইসলাম। তবে তার দাবি হচ্ছে, বিশেষ কোন মহল এই বিষয়টি নিয়ে কলকাঠি নাড়ছে। একই সাথে এই পুলিশ কর্মকর্তা বিকাশের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের নানামুখী প্রশ্নে তালগোল পাকিয়ে একপর্যায়ে স্বীকার করলেন মোবাইলে ৫ হাজার টাকা আসার বিষয়টি। তবে সেই টাকা কে পাঠিয়েছেন তা তিনি নিজেও জানেন না বলে দাবি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তাছাড়া এই বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই।