|
সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-১২ গুন ভাড়া আদায় করছে ফেরির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা
বরিশাল নগরীর বেলতলা ফেরিতে যাত্রীদের জিম্মি করে গলাকাটা ভাড়া আদায়
বরিশাল নগরীর বেলতলা ফেরি পারাপারে যাত্রীদের জিম্মি করে গলাকাটা ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়াগেছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০-১২ গুন ভাড়া আদায় করছে ফেরির দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্টটিও তারা লুকিয়ে রেখেছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারনে কোন গাড়ী চালক অথবা মালিককে দেয়া হচ্ছেনা ফেরি ভাড়া আদায়ের রশিদ। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে যাত্রীদের জিম্মি করে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিরব চাঁদাবাজী চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র এমন অভিযোগ যাত্রীদের। গাড়ী পারাপারের সরকার নির্ধরিত ভাড়া সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে বাকি অর্থ ভাগভাটোয়ার করে নিচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন অভিযোগ গাড়ী চালকদের। তবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ ফেরি ঘাটে যাত্রীদের জিম্মি করে চাঁদাবাজী চললেও বিষয়টি জানেন বলে জানান বরিশাল সড়ক ও জনপন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার গোলাম মোস্তফা। ফেরি পারাপারে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে প্রথমেই সাংবাদিকদের উপর রগচটা হয়ে ওঠেন। পরে ফেরি পারাপারে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের তথ্য প্রমান তুলে ধরলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান। সূত্র জানায়, বেলতলা ফেরীতে গাড়ি পাড়াপাড় করতে হলে নিধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে পার হতে হয়। তাদের দাবীকৃত ভাড়া না দিলে তারা ফেরি ছাড়েনা। তখন অনেক ভোগান্তীতে পড়তে হয়। আবার টাকা আদায়ের রশিদ চাইলে হতে হয় নাজেহাল। মশিউর রহমান নামে চরমোনাই এলাকার এক যাত্রী জানান- চরমোনাই ফাল্গুনের বার্ষরিক মাহফিলের আগেই বেলতলা ফেরীঘাটের ইজারা বাতিল করে সড়ক ও জনপন বিভাগ। যার ফলে মাহফিল উপলক্ষে ৬-৭ দিনে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আদায় হলেও সরকারী-কোষাগারে জমা দেয়া হয় মাত্র ৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকা আত্মসাৎ করে ফেরী সংশ্লিষ্টরা। তবে বেলতলা ফেরীঘাটে এমন চাঁদাবাজী হলেও বরিশাল সড়ক ও জনপন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের দাবী উর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজস ছাড়া যাত্রীদের জিম্মি করে গলাকাটা ভাড়া আদায় করতে পারে না যাত্রীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও জনপদ কতৃক নির্ধারিত ভাড়ার একটি চার্ট ফেরির টার্মিনাল থেকে অনেক দূরে টানিয়ে দিলেও তা সরিয়ে রেখেছে ফেরীর দায়িত্বরত কর্মচারীরা। ফেরীতে যাত্রী পারাপার ফ্রি হলেও তাদের কাছ থেকেও জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে ভাড়া নেয়া হচ্ছে বেলতলা ফেরীতে। ফেরী পাড়াপাড়ে গাড়ী প্রতি সর্বোচ্চ ২শত টাকা করে রাখার কথা থাকলেও ফেরী কতৃপক্ষ সেখানে ৮শত থেকে ১৫শত করে টাকা আদায় করছে কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই। কেউ রশিদ চাইলেও দেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করে গাড়ির ড্রাইভাররা। আবার যদি কাউকে রশিদ দেয়াও হয় তাহেল রশিদে কোন টাকার পরিমান দেয়া হয় না বরে অভিযোগ করে তারা। এ বিষয়ে কথা হয় ফেরীর গ্রিজার মোঃ আঃ ছত্তার, খোকন মিয়া, আয়নাল ও বোটম্যান আলতাফের সাথে। বেলতলা ফেরিতে চাকুরী করার শুরু থেকেই কোন প্রকার টাকা আদায়ের রশিদ দিতে দেখেননি বলে দাবী এ কর্মচারীদের। সরকারী ভাবে কোন রশিদ দেয়া হয় কিনা তাও তাদের জানা নেই। তারা আরও জানান টাকা আদায়ের ব্যাপারে সব কিছু সুপারভাইজার হানিফ ভাই ভাল জানেন। তিনি কি করেন না করেন কে জানে! কথা হয় ফেরীর সুপারভাইজার মোঃ হানিফের সাথে। তিনি বলেন, ভাই আপনারাদের ফেরী নিয়ে এত মাতাব্যাথা কেন? আপনারা অন্য কোন নিউজ খুজে পাননা। ফেরীতে গাড়ি পাড়াপাড়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার যদি টাকা পয়সা লাগে বলবেন, দিব। নিউজ করার কি আছে। টাকা আদায়ের রশিদ না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই কেউ রশিদ চায় না আর দেইও না। তাতে সমস্যার কি আছে? টাকা আদায়ের রশিদ দেয়া বাধ্যতামূলক কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, রশিদ দিলে তো আমরা দু-একশত টাকা বেশি আদায় করতে পারবো না, তাই দেই না। কথা হয় বরিশাল দিয়ে হলুদ পিকাপ নিয়ে চরমোনাই যাওয়ার জন্য ফেরীতে ওঠা নজরুল ইসলামের সাথে। তার কাছ থেকে কত টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮শত টাকা ভাড়া দিয়েছেন তিনি। বিনিময়ে রশিদ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলে না কোন রশিদ দেয়নি। আর যদি কখনও রশিদ দিয়েও থাকে তাহলে টাকার অংক লিখে দেয় না। নজরুল ইসলামের গাড়ীটি হাওলাদার পরিবহনের বলেও জানান তিনি।অপর এক গাড়ী চালক শাহীন আলম জানান, তিনি প্রায়ই কোম্পানীর মালামাল নিয়ে এ ফেরি পার হয়ে চরমোনাই যাওয়া আসা করেন। কিন্তু এ ফেরি ভাড়া দুইশত টাকা হলেও তাদেরকে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। এর প্রতিকার চেয়েও কোন লাভ নেই ভাই। ভাড়া না দিলে ফেরি ছাড়ে না। আর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করেই এ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ভাগভাটোয়ারা করে খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন দাবী এ চালকের।
খন্দকার রাকিব
সূত্র : জাগো বরিশাল
Post Views:
১,৯৭১
|
|