প্রচ্ছদ » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে স্কুল ছাত্র সালেহ’র ঘাতকদের গ্রেফতারে ব্যর্থ পুলিশ !
Tuesday January 16, 2018 , 9:18 pm
একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চান স্বজনরা
বরিশালে স্কুল ছাত্র সালেহ’র ঘাতকদের গ্রেফতারে ব্যর্থ পুলিশ !
নিজস্ব প্রতিবেদক : এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে নগরীর রূপাতলী এলাকায় শের-ই-বাংলা সড়কে খুন হওয়া আবুল সালেহ হত্যা মামলার প্রধান ঘাতক সহ দুই আসামী। ঘটনার এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও আত্মগোপনে থাকা আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামীদের গ্রেফতারের দাবী নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নগর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিলেও আশ্বাসের বানী ছাড়া কিছুই পাচ্ছেন নিহতের পরিবার। তাই একমাত্র সন্তানকে হারানোর বিচার চেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার অসহায় মা-বাবা। এদিকে ঘটনার পর থেকেই ঘাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে দাবী করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। এমনকি সংশ্লিষ্ট সংবাদের বিষয়ে দেয়া বক্তব্যেও পূর্বের মত আশার বানী শুনিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর রাতে খুন হয় নগরীর নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী আবু সালেহ। ওইদিন নিজ এলাকায় বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দেয়ার সময়ে সহপাঠি বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের ছাত্র হৃদয় রহমান তাকে শাবল দিয়ে পিটিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। খুন হওয়া ছাত্র আবু সালেহ রূপাতলী শের-ই-বাংলা সড়কের বাসিন্দা দিনমজুর লিটন মৃধার ছেলে। ঘটনার রাতেই কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতক কলেজ ছাত্র হৃদয়ের মামা দেলোয়ার হোসেন মৃধাকে আটক করে। এদিকে এই ঘটনায় পরদিন অর্থাৎ ১১ ডিসেম্বর নিহত আবু সালেহ’র মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে ঘাতক হৃদয় রহমানকে প্রধান এবং সহযোগি হিসেবে তার মামাত ভাই আরমান মৃধা এবং মামা দেলোয়ার হোসেন মৃধাকে নামধারী সহ বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন পিপিএম পদক পাওয়া মডেল থানার এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও ঘটনাস্থল হতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মামলার নামধারী তিন নম্বর আসামী গ্রেফতার হলেও প্রধান ঘাতক সহ বাকি দু’জনকে গ্রেফতারে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তিনি। অপরদিকে হত্যাকান্ডের পর থেকেই এলাকাবাসী এবং নিহতের সহপাঠি-শিক্ষকরা ঘাতকদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবীতে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচিও পালন করে তারা। কিন্তু এসব কিছুর পরে থানা পুলিশের ভুমিকা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঘাতককে গ্রেফতারের জন্য কোন আন্দোলন সংগ্রামই কাজে আসছে না। তাই বিষয়টি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিহতের পরিবার এবং স্বজনরা। নিহতের মা এবং মামলার বাদী রহিমা বেগম বলেন, ছেলে হত্যার বিচার এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী নিয়ে বহুবার পুলিশ প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। পুলিশ শুধু আশ্বাসের বানীই শুনিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, গত ৪ জানুয়ারী ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবী নিয়ে পুলিশ কমিশনার এর কাছে যান। এসময় তিনি আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মুঠোফোনের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। সেই সাথে স্বজনদের ১০/১২ জানুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন কমিশনার। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় গত ১৪ জানুয়ারী পুনরায় পুলিশ কমিশনার এর কাজে যান নিহতের মা এবং অন্যান্য স্বজনরা। তখনও তিনি পরিবারের সদস্যদের আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করার কথা বলে ফিরিয়ে দেন। তাছাড়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেন। সে অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মহিউদ্দিন আহমেদ এর সঙ্গে দেখা করেন নিহতের মা এবং অন্যান্য স্বজনরা। কিন্তু সেখান থেকেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি। বরং তদন্ত কর্মকর্তার আচারন রহস্য জনক মনে হয় তাদের কাছে। এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানা থেকে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে সদ্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল পাওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আবু সালেহ হত্যা মামলা নিয়ে উপরের চাপ রয়েছে। তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এ লক্ষে অনেক দূর এগিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে তার এই কথার সাথে কাজের মিল দেখতে চান নিহতের স্বজনরা। কেননা ইতিপূর্বে একই ধরণের বক্তব্য বহুবার তারা দিয়েছেন। এখন বক্তব্য নয়, একমাত্র সন্তান হত্যার বিচার চান স্বজনরা।