|
হাজারো ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ
বরিশালে সর্ববৃহৎ মণ্ডপ জমিদার বাড়িতে
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক : ১৬৭ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে জেলার গৌরনদী পৌর সদরের আশোকাঠী মহল্লার জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়িতে এখনো দাঁড়িয়ে আছে তৎকালীন ভারতীয় উপ-মহাদেশের সর্ববৃহৎ দূর্গা মন্দির।আর মাত্র কয়েকদিন পরেই মহা ধুমধামে হাজারো ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ।ইতোমধ্যে দূর্গা পূজার পুরো আয়োজন সম্পন্ন করেছেন প্রয়াত জমিদার মোহন লাল সাহার উত্তসূরীরা।সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রং তুলির শেষ আচড়ে শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দূর্গার রূপ।একইসাথে মন্দিরের বাহিরে চলছে সাজসজ্জার কাজও।স্থানীয়রা জানান, এতদঞ্চলের মধ্যে এ দূর্গা মন্দিরটি সর্ববৃহৎ হওয়ায় প্রতিবছরই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহাধুমধামের সাথে এখানে দুর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।জমিদার বাড়ির উত্তরসূরীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ১৮৫০ সালে জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহার বাবা খ্যাতিমান জমিদার মোহন লাল সাহার উদ্যোগে মন্দিরটি প্রথম নির্মাণ করা হয়।কারুকার্জ খচিত ঐতিহাসিক এ মন্দিরের ছাদের ওপরের চারপাশের সিংহ মূর্তিগুলো আজো কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে।জমিদার মোহন লাল সাহার পুত্র প্রয়াত মানিক লাল সাহার স্ত্রী ও স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী অরুনা সাহা জানান, তৎকালীন সময়ে ভারতীয় উপ-মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ মন্দির হিসেবে এ মন্দিরটিতে ভক্ত দর্শনার্থীরা পূজা অর্চনা করতে ভীড় করতেন।প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার দূর্গা প্রতিমার এ মন্দিরটিতে এখনো পূর্বের ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়েছে।৩০ গজ দৈর্ঘ্য ও ২০ গজ প্রস্থ মন্দিরটিতে রয়েছে ৪৫টি স্তম্ভ।জমিদার মোহন লাল সাহার নাতি প্রভাষক রাজা রাম সাহা জানান, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার ও তাদের স্থানীয় সহযোগি রাজাকাররা তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছিলো।আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো পাইক পেয়াদাদের ঘরবাড়ি।গুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো দূর্গা মন্দিরের অসংখ্য কারুকার্জ খচিত অলংকরণ।গৌরনদী উপজেলার সদর থেকে প্রায় এক হাজার ফুট দূরত্বে আড়িয়াল খাঁ নদীর প্রশাখা গৌরনদী-মীরেরহাট নদীর তীরে আশোকাঠী মহল্লায় জমিদার মোহন লাল সাহার বাড়ি।বাড়ির সামনেই রয়েছে সান বাঁধানো সু-বিশাল দীঘি।জমিদার থাকতেন প্রসন্ন ভবনে।বাড়ির প্রবেশ দ্বারে প্রাচীনতম সু-বৃহৎ দুর্গা মন্দিরে আজও ভক্তরা পূজা অর্চনা করে আসছেন।এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, একসময় জমিদার বাড়িতে এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের জন্য প্রায় বারো মাসই যাত্রা, জারি,সারি ও পালা গানের আয়োজন করা হতো।ওইসময় হাজার-হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো এ বাড়িটি।জমিদার মোহন লাল সাহার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে অন্যতম স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাড়ির পাশ্ববর্তী পালরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৩৫ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।এ বিদ্যাপিঠের অসংখ্য শিক্ষার্থীরা মেধা তালিকায় তৎকালীন যশোর শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমানে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে।বর্তমান সরকারের সময় স্কুলটি পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় এন্ড কলেজের রূপান্তরিত হয়েছে। গৌরনদীবাসী জমিদার মোহন লাল সাহার প্রতিষ্ঠিত পালরদী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সরকারি করণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Post Views:
১৩৯
|
|