Current Bangladesh Time
সোমবার মার্চ ২৪, ২০২৫ ১০:১১ পূর্বাহ্ণ
Latest News
প্রচ্ছদ  » স্লাইডার নিউজ » বরিশালে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পুরাকীতি ‘লাল গীর্জা’ 
Monday October 2, 2017 , 8:36 pm
Print this E-mail this

এমন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের গীর্জা নজর কাড়ার মত

বরিশালে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পুরাকীতি ‘লাল গীর্জা’


মুক্তখবর ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের অন্যতম অভিজাত ও সুন্দর গীর্জা হল এপিফানী গীর্জা বাংলাদেশ চার্চ বা অক্সফোর্ড মিশন বরিশাল।এপিফানী উপাসনালয় এ গীর্জার কেতাবি নাম।১১৪ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী এ গীর্জাটি শুধু সুন্দরই নয়,এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ গীর্জা এবং দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন পুরাকীর্তিগুলোর অন্যতম একটি।এটি ‘লাল গীর্জা’ নামেও পরিচিত।গীর্জাটি একতলা হলেও উচ্চতা পাঁচতলা ভবনের সমান প্রায় ৫০ ফুট।গীর্জার মূল প্রার্থনাকক্ষটির আয়তনও প্রায় ৫০ ফুট।সিস্টার এডিথের স্কেচ ও ডিজাইন অনুসারে ফাদার স্ট্রং এ গীর্জার নকশা চূড়ান্ত ও উন্নত করেন।এ কাঠামোর প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ফ্রেডেরিক ডগলাস (ব্রিটিশ)।মূলত গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ গীর্জার প্রধান আকর্ষণ বিশাল ও নান্দনিক প্রার্থনাকক্ষ।এর ছাদ কাঠের তৈরি, আর ফ্লোরে সুদৃশ্য মার্বেলের টাইলস্।মূল বেদীর ওপর একটি বড় ক্রশ স্থাপিত রয়েছে।এমন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের গীর্জা নজর কাড়ার মত।চল্লিশটি খিলানের ওপরে এ গীর্জাটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।৩৫ একর জমির ওপরে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা।তেরটি ছোট-বড় পুকুর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়,আবাসিক ছাত্র হোস্টেল,ফাদার ও সিস্টারদের আবাসন,পাঠাগার ও হাসপাতাল নিয়ে এ চার্চটি অবস্থিত।দিনে সাতবার এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘন্টা (গীর্জার ঘন্টা) বেঁজে ওঠে এ চার্চে।সুদৃশ্য ঘন্টা বেল টাওয়ারের নিচেই চার্চের ছোট্ট অফিস।১৯০৩ সালে এ চার্চের প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হয় ও একই বছরের ২৬ জানুয়ারি এটি উদ্বোধণ করা হয়েছে।দ্বিতীয় ধাপের কাজ ১৯০৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।লাল ইট দিয়ে নির্মিত শতবর্ষী এ চার্চ চমৎকার রক্ষণাবেক্ষণের সুবাদে আজও ঝকঝকে।তবে জনসাধারণের জন্য এখানে প্রবেশ সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে।গীর্জাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে বড়ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এর স্থাপত্যশৈলী বিনষ্ট হবেনা।১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়েও গীর্জাটি সম্পূর্ণ অক্ষত থেকে যায়।চার্চের কেয়ারটেকার জানান,ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক পরিবেশে নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজস্ব সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যতীত জণসাধারণের জন্য চার্চের সীমানার ভেতর প্রবেশাধিকার নিষেধ।জীবনানন্দ দাশ ও লাল গীর্জা : কথিত মতে, কবি জীবনানন্দ দাশের সাথে তার প্রথম প্রেমিকা মুনিয়ার দেখা হয়েছিলো বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনের গীর্জায়।মুনিয়ার মা ওই গীর্জায় সেবিকার কাজ করতেন।শুধু কি তাই? বরিশালের এই পুরোনো গীর্জাটির সাথে জীবনানন্দের সম্পর্কও ছিল নিবিড়।ছাত্রাবস্থায় অক্সফোর্ড মিশনের ছাত্রাবাসে থাকতেন তিনি।ফলে এখানকার ফাদার ও মাদারদের সাথেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা।জীবনানন্দের বাড়ি থেকে দু-কদম এগুলেই পামগাছ ঘেরা অক্সফোর্ড মিশনের গীর্জাটির সীমানা।গাছের ফাঁক দিয়ে তাকালেই দেখা যায় টেরাকোটা রঙের সু-উচ্চ আর্চওয়ে চার্চ।এশিয়ার ব্যতিক্রমী এ গীর্জার পাশেই রয়েছে একটি বেল টাওয়ার।মূল গীর্জার আদলেই গড়ে তোলা বেল টাওয়ারটিতে প্রার্থনার পাঁচ মিনিট আগে ঘন্টাধ্বনি বাঁজানো হয়।ঘন্টাধ্বনির শব্দ শুনেই ভক্তরা এখানে প্রার্থনার জন্য আসেন।বেল টাওয়ারের বেল স্থাপনের খরচ বহন করেছিলেন ফাদার স্ট্রং।তিনি ছিলেন বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ।বিভিন্ন খেলায় পাওয়া তার সম্মানী পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি ওই বেল স্থাপন করেছিলেন।এ গীর্জার সব নির্মাণসামগ্রীই বাংলাদেশের।শুধু ভেতরের চারটি বেদির মার্বেলপাথর আনা হয়েছিল ভারতের কলকাতা ও বড় ক্রুশটি প্যালেস্টাইনের বেথলেহেম থেকে আনা হয়েছিলো।এটি দেশীয় মাটি দিয়ে তৈরি আস্তনে পোড়া লাল শক্ত ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছিল।এরসাথে রড,বালু,সিমেন্ট,কাঠ এবং নির্মাণশ্রমিক সবই ছিলো বাংলাদেশের।আজও এর আদি ও অকৃত্রিম রূপের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।বরিশালের প্রাণকেন্দ্র জীবনানন্দ দাশ সড়কে অবস্থিত শতবর্ষী এ গীর্জাটির সাথে জীবনানন্দের কতোটা সখ্য ছিল,তার প্রথম প্রেমিকা মুনিয়ার সাথে আদৌ কি এখানে দেখা হয়েছিল?এসব প্রশ্নের সামনে এ উপাসনালয়টি আজও দাঁড়িয়ে আছে ‘লাল গীর্জা’ হিসেবে।
বৃটিশ নাগরিক লুসি হল্ট ও অক্সফোর্ড মিশন : বাংলাদেশের জন্ম ১৬ ডিসেম্বর।আমার জন্মও এই দিনে।কাকতালীয় হলেও বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়।হয়তো এটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা।বাংলাদেশের সাথে আমার জীবনের একটা গভীর যোগসূত্র রয়েছে।কথাগুলো বলছিলেন লুসি হল্ট।পুরো নাম লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট।জন্ম ১৯৩০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের সেন্ট হ্যালেন্সে।৫৭ বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করছেন তিনি।তার কর্মক্ষেত্রের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনে।মহান মুক্তিযুদ্ধের নিভৃতচারী নিরব স্বাক্ষী এ মানুষটি যুদ্ধাহত মানুষের সেবা দিয়েছেন অকাতরে।তাইতো এখানকার মায়ায় বরিশালের মাটিতেই মরতে চান লুসি।বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন হাসপাতালে মাত্র ৩০ বছরে বয়সে সেবায়েত হিসেবে তিনি যোগদান করেন।দুইবছর পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও এখানকার প্রকৃতি,মানুষ ও মাটির ভালোবাসায় তাকে মুগ্ধ করে।৫৭ বছর ধরে চলছে লাল সবুজের দেশের সাথে লুসির মিতালী।গভীর ভালোবাসা থেকে রপ্ত করেছেন পুরোপুরি বাঙালিয়ানা।হৃদয় জুড়ে এখন বাংলাদেশের প্রেম।মনে প্রানে চাচ্ছেন বাংলাদেশ ভালো করুক,উন্নতি লাভ করুক।অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের একটি ছোট কামরায় বাস করেন এই বৃটিশ নাগরিক।বৃটিশ শাসকদের শাসন নিয়েও তার মনে ক্ষোভ রয়েছে।তার মতে বৃটিশরা এখানে (এই উপমহাদেশে) যা করেছেন তা ঠিক করেননি।মিশনের ভিতরে কবরস্থানে লুসি তার নিজের কবরের জায়গা ঠিক করে রেখেছেন।লুসিকে শান্ত,দরদী ও পরোপকারী হিসেবেই মিশনের সবাই জানেন।অক্সফোর্ড মিশনের ব্যবস্থাপক বেনডিক্ট বিমল ব্যাপারি জানান,বৃটিশ নাগরিক হিসেবে মাসে ৭০ পাউন্ড ভাতা পান লুসি।যার প্রায় সবটাই অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেন লুসি।তিনি আরও বলেন, লুসির সঞ্চয় বলতে কেবলই এ দেশের ভালবাসা।তিনি সব ধর্ম শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সম্মান করেন, ভালোবাসেন।মিশনের পরিচর্যাকারী ঊষা দাস লুসির ছাত্রী।ঊষা বলেন, প্রথম শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় প্রথম সিস্টার লুসিকে দেখি।তিনি আমাদের স্কুলে পড়াতেন।তিনি আগের মতোই শান্ত আর পরোপকারী এবং দরদী মানুষ।
সূত্র : বরিশাল ক্রাইম নিউজ

 

 




Archives
Image
বরিশালে প্রতিবন্ধী নবজাতককে গভীর রাতে সড়কে ফেলে গেলেন স্বজনরা
Image
বোনের শ্বশুরই ধর্ষণ করেন মাগুরার সে-ই শিশুটিকে
Image
বরিশালে জাল নোটসহ কারবারিকে ‍পুলিশে দিল জনতা
Image
পিরোজপুরে চাঁদাবাজির মামলায় এনসিপির প্রতিনিধি গ্রেপ্তার
Image
আবারও সুন্দরবনে আগুন, পানি সংকটে নেভানোর কাজ ব্যাহত