|
ক্রেতাদের ভীড়ে তিল ঠাঁই নেই নগরীর চকবাজার, কাটপট্টি, গীর্জা মহল্লাসহ বিভিন্নস্থানগুলোতে
বরিশালে ‘মূল্যহ্রাস’ প্রতারণার ব্যাবসা জমজমাট !
বরিশাল নগরীসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পোষাক, থানকাপড়, জুতাসহ নানান পণ্যের বাৎসরিক “মূল্যহ্রাস” প্রতারণার ব্যাবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বকেয়া পরিশোধ করে বাংলা বছরের শুরুর হালখাতা করার নামে গত কয়েক বছর থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি সময় থেকে কম দামে বিক্রয়ের নামের “মূল্যহ্রাস” এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের চলে কোটি টাকা বাণিজ্যের মিশন। সূত্রমতে, ব্যবসায়ীদের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে নিম্ন ও মধ্যআয়ের বাসিন্দারা ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের পণ্য কিনে হচ্ছেন প্রতারিত। সবকিছু জেনেও ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে মুল্যহ্রাসের পণ্য ক্রয়ে ভীড় করছেন। দাম বেশিতে সাধ্যের বাইরের মানসম্মত পণ্য ক্রয়ে ব্যর্থ হলেও অল্পদামে নিম্নমানের পণ্য ক্রয়ে বেজায় খুুশি ক্রেতারা। ফলে দল বেঁধে প্রতারিত হতে আসা ক্রেতাদের ভীড়ে তিল ঠাঁই নেই নগরীর চকবাজার, কাটপট্টি, গীর্জা মহল্লাসহ বিভিন্নস্থানগুলোতে। ক্রেতাদের ভীড় এবং রাস্তা ও ফুটপাত আটকে রেখে বিক্রেতাদের পণ্য বিক্রয়ে চরম বিশৃংখলার সৃষ্টি হচ্ছে ওইসব স্থানগুলোতে। আর তাদের তৈরি করা বিশৃঙ্খলার প্রভাবে ওইসব এলাকায় হচ্ছে অসহনীয় যানজট। জেলার প্রায় প্রতিটি বন্দর এবং মার্কেটেও চলছে ক্রেতাদের প্রতারিত করার মূল্যহ্রাস বাণিজ্য। নগরীর চকবাজারসহ মূল্যহ্রাসের জমজমাট আসর জমানো স্থানগুলো ঘুরে ও বিভিন্ন বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলা নতুন বছরকে সামনে রেখে পোষাক পরিচ্ছদ বিক্রয় করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর হালখাতা খোলার পূর্বে অভিনব পন্থায় তাদের পুরাতন, অকেজো, মার্কেট বহির্ভূত ডিজাইন, ত্রুটিপূর্ণ এবং স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে আনা নিম্নমানের পণ্যগুলো একটি বিশেষ মূল্য ছাড়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে বিক্রি করে থাকে। দীর্ঘদিনের চলে আসা এই ঠকবাজীর নাম দেয়া হয়েছে মূল্যহ্রাস। পহেলা চৈত্র থেকে তৈরী ও থান কাপড় বিক্রেতা, শাড়ি-জুতা সহ পরিচ্ছদের নানা পণ্য মূল্যহ্রাসের নামে বিক্রি শুরু হয় যা চলে পহেলা বৈশাখের আগেরদিন পর্যন্ত। বাহারী সাইনবোর্ড, অভাবনীয় ছাড়ের আশ্বাস ইত্যাদিকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রেতা আকৃষ্ট করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বাজারে চলমান পণ্য ভবিষ্যতে বিক্রয়ের জন্য রেখে পুরাতন ও নিম্নমানের পণ্যগুলো ক্রেতাদের জন্য প্রদর্শন করা হয়। মূল্যহ্রাসের সময় বাজারে নিম্ন ও মধ্যআয়ের ক্রেতাদের ভীড় থাকে। এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নারীরা এগিয়ে। শুধু নামী-বেনামী তৈরি পোষাক ও থান কাপড় বিক্রেতারাই নয়, ঠকবাজী করছে নামী জুতার ব্র্যান্ড যেমন বাটা, এ্যাপেক্স এর জুতা বিক্রেতারাও। নতুন পণ্যের জন্য স্থান তৈরি, ৩/৪ বছর আগের পণ্য বিক্রি, ত্রুটিপূর্ণ মাল খালাস করাই মূল্যহ্রাসের প্রকৃত উদ্দেশ্য। এছাড়া সুযোগ নিয়ে নিম্নমানের পণ্য কম মূল্যে বিক্রয়ও চলছে ধুমসে। প্রতিদিনই মূল্যহ্রাস নিয়ে প্রায় প্রতিটি পোষাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে টুকটাক ঝামেলা হলেও বোকা ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছেই। মঙ্গলবার সকালে নগরীর কাটপট্টি রোডে বসে মোসলেম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা জানান, তিনদিন আগে স্বল্পমূল্যে তার স্ত্রী মূল্যহ্রাসের থান কাপড় ক্রয় করেছেন। যা প্রথমবার ধোয়ার পরেই রং উঠে যায়। ফলপট্টি এলাকার জগন্নাথ ক্লোথ স্টোর্সের রিপন দেবনাথ জানান, পোষাক পরিচ্ছদের সবপণ্যেই তারা মূল্যছাড় দিচ্ছেন। নতুন বছরের হিসেব শুরু ও পুরাতন মালামাল বিক্রয়ের পরম্পরাকে মূল্যহ্রাস আখ্যাদিয়ে তিনি বলেন, ক্রেতারা দেখে শুনেই কমদামে তাদের পছন্দসই মালামাল ক্রয় করছেন।
শামীম আহমেদ, অতিথি প্রতিবেদক
Post Views:
১২৬
|
|